ক্যারিবীয় অঞ্চলে বিশ্বের বৃহত্তম যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন: যুক্তরাষ্ট্র 'যুদ্ধ বাধাচ্ছে', অভিযোগ মাদুরোর
ক্যারিবীয় অঞ্চলে বিশ্বের সবচেয়ে বড় যুদ্ধজাহাজ পাঠানোর ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্র 'যুদ্ধ বাধাচ্ছে' বলে অভিযোগ করেছেন ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো। খবর বিবিসি'র।
মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ শুক্রবার ভূমধ্যসাগর থেকে বিমানবাহী যুদ্ধজাহাজ ইউএসএস জেরাল্ড আর ফোর্ড ক্যারিবীয় অঞ্চলে পাঠানোর নির্দেশ দেন। জাহাজটি একসঙ্গে ৯০টি বিমান বহন করতে সক্ষম।
রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে মাদুরো বলেন, 'তারা এক নতুন অনন্ত যুদ্ধ বাধাচ্ছে। তারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল আর কখনও কোনো যুদ্ধে জড়াবে না— অথচ এখন তারাই যুদ্ধ বাধাচ্ছে।'
যুক্তরাষ্ট্র সাম্প্রতিক সময়ে ক্যারিবীয় অঞ্চলে সামরিক উপস্থিতি বাড়াচ্ছে। মাদক পাচারকারীদের লক্ষ্য করে দেশটি সেখানে যুদ্ধজাহাজ, একটি পারমাণবিক সাবমেরিন ও এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান পাঠিয়েছে। এছাড়া অন্তত ১০টি নৌকায় বিমান হামলা চালানো হয়েছে। শুক্রবারের এক হামলায় ছয়জন 'নারকো-সন্ত্রাসী' নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন হেগসেথ।
তিনি জানিয়েছেন, হামলাটি 'ত্রেন দে আরাগুয়া' নামের একটি অপরাধী সংগঠনের মালিকানাধীন জাহাজের বিরুদ্ধে চালানো হয়েছে।
বিবিসিকে চ্যাথাম হাউস থিংক ট্যাংকের ল্যাটিন আমেরিকা বিষয়ক সিনিয়র ফেলো ড. ক্রিস্টোফার সাবাতিনি বলেছেন, 'এটি সরকার পরিবর্তনের বিষয়। তারা হয়তো আক্রমণ করবে না, মূল লক্ষ্য সম্ভবত সংকেত প্রেরণ করা।' তিনি যুক্তি দিয়েছেন, ভেনেজুয়েলার সেনাবাহিনী ও মাদুরোর ঘনিষ্ঠদের মধ্যে 'ভয় সৃষ্টি' করার উদ্দেশ্যে সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করা হচ্ছে, যাতে তারা মাদুরোর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে উদ্বুদ্ধ হয়।
পেন্টাগনের ঘোষণা অনুযায়ী, ইউএসএস জেরাল্ড আর ফোর্ড ক্যারিবীয় অঞ্চলসহ মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকার অন্তর্ভুক্ত সাউদার্ন কমান্ড অঞ্চলে মোতায়েন হবে। পেন্টাগনের মুখপাত্র শন পার্নেল জানিয়েছেন, অতিরিক্ত সামরিক শক্তি 'বিদ্যমান সক্ষমতাকে বৃদ্ধি ও সম্প্রসারণ করবে, মাদক পাচার ব্যাহত করা যাবে এবং ট্রান্সন্যাশনাল ক্রিমিনাল অর্গানাইজেশন (টিসিওজ) ধ্বংস ও দুর্বল করা সম্ভব হবে।'
অঞ্চলটিতে মার্কিন যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন হলে স্থলভিত্তিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলার সুযোগ তৈরি হবে। ট্রাম্প বারবার ভেনেজুয়েলায় 'স্থল অভিযান' চালানোর সম্ভাবনার কথা বলেছেন। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানিয়েছে, ট্রাম্প কোকেন উৎপাদন কেন্দ্র ও মাদকপাচারের রুটগুলোকে লক্ষ্যবস্তু বানাতে পারেন, তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি। জাহাজটির সর্বশেষ অবস্থান তিনদিন আগে ক্রোয়েশিয়ার উপকূলে ছিল।
শুক্রবারের হামলা ট্রাম্প প্রশাসনের এই অঞ্চলে দশম সামরিক অভিযান। সেপ্টেম্বরের পর থেকে অধিকাংশ অভিযান ক্যারিবীয় অঞ্চলে হলেও, ২১ ও ২২ অক্টোবর প্রশান্ত মহাসাগরে হামলা চালানো হয়েছে।
কংগ্রেসের কয়েকজন ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান সিনেটর হামলার বৈধতা এবং প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। ১০ সেপ্টেম্বর ২৫ জন ডেমোক্র্যাট সিনেটর হোয়াইট হাউসকে চিঠি লিখে অভিযোগ করেছিলেন, 'জাহাজে থাকা ব্যক্তিরা এবং জাহাজের পণ্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য হুমকিস্বরূপ' এমন প্রমাণ ছাড়াই হামলা চালানো হয়েছে।
কেন্টাকি থেকে রিপাবলিকান সিনেটর র্যান্ড পল বলেছেন, এমন হামলার জন্য কংগ্রেসের অনুমতি দরকার। তবে ট্রাম্প দাবি করেছেন, তার এ ধরনের হামলার আইনি ক্ষমতা রয়েছে এবং 'ত্রেন দে আরাগুয়া'-কে তিনি সন্ত্রাসী সংগঠন বলে ঘোষণা করেছেন।
সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় ট্রাম্প বলেছেন, 'আমরা এটি করতে পারি, প্রয়োজনে কংগ্রেসের কাছে যাব।'
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেছেন, 'যদি কেউ না চায় যে মাদকবাহী নৌকা ধ্বংস হোক, তবে আমেরিকায় মাদক পাঠানো বন্ধ কর।'
