প্রাপ্তবয়স্কদের চ্যাটজিপিটি দিয়ে 'ইরোটিক' কনটেন্ট তৈরি করার অনুমতি দেবে ওপেনএআই

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ভিত্তিক জনপ্রিয় চ্যাটবট চ্যাটজিপিটিতে প্রাপ্তবয়স্ক ব্যবহারকারীদের জন্য ইরোটিক বা যৌন উদ্দীপনামূলক কনটেন্ট ব্যবহারের অনুমতি দিতে যাচ্ছে ওপেনএআই।
সংস্থাটি জানিয়েছে, এটি তাদের 'প্রাপ্তবয়স্ক ব্যবহারকারীদের প্রাপ্তবয়স্কের মতোই বিবেচনা' করার নীতির অংশ। এই নতুন সংস্করণে ব্যবহারকারীরা এআই চ্যাটবটের ব্যক্তিত্ব নিজেদের পছন্দমতো কাস্টোমাইজ করারও সুযোগ পাবেন।
তবে এই সিদ্ধান্তে যেমন অনেকে স্বাগত জানাচ্ছেন, তেমনি শিশু সুরক্ষা এবং এআই ব্যবহারের নৈতিকতা নিয়ে উঠছে গুরুতর প্রশ্ন।
ওপেনএআই জানিয়েছে, চ্যাটজিপিটির নতুন সংস্করণে ব্যবহারকারীরা তাদের এআই সহকারীকে নিজেদের পছন্দমতো সাজাতে পারবেন। অর্থাৎ, এই চ্যাটবট মানুষের মতো প্রতিক্রিয়া দেবে, প্রয়োজনে প্রচুর ইমোজি ব্যবহার করবে, এমনকি বন্ধুর মতো আচরণও করতে পারবে।
তবে সবচেয়ে বড় পরিবর্তন আসবে ডিসেম্বরে, যখন ওপেনএআই একটি আরও বিস্তৃত বয়স যাচাই ব্যবস্থা চালু করবে, যা যাচাইকৃত প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য যৌন উত্তেজক কনটেন্ট ব্যবহারের অনুমতি দেবে। তবে ঠিক কীভাবে এই বয়স যাচাই করা হবে বা এই প্রাপ্তবয়স্ক কনটেন্টের জন্য আর কী কী সুরক্ষা ব্যবস্থা থাকবে, সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানায়নি ওপেনএআই।
সম্প্রতি ইলন মাস্কের গ্রোক চ্যাটবটে দুটি যৌন উত্তেজক চ্যাটবট যুক্ত করার ঘোষণার পরেই ওপেনএআই এই পথে হাঁটল। ধারণা করা হচ্ছে, এর ফলে তাদের সাবস্ক্রাইবারের সংখ্যা বাড়বে।
চ্যাটজিপিটিতে বিধিনিষেধ শিথিল করার এই সিদ্ধান্তের পেছনে একটি গুরুতর প্রেক্ষাপটও রয়েছে। চলতি বছরের শুরুতে ক্যালিফোর্নিয়ার ১৬ বছর বয়সী অ্যাডাম রেইনের আত্মহত্যার ঘটনা ওপেনএআইকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছিল। অ্যাডামের বাবা-মা ওপেনএআই-এর বিরুদ্ধে মামলা করে অভিযোগ করেন, চ্যাটজিপিটি তাদের ছেলেকে আত্মহত্যা করার সুনির্দিষ্ট পরামর্শ দিয়েছিল।
এ ঘটনার পর ওপেনএআই-এর প্রধান স্যাম অল্টম্যান স্বীকার করেন, মানসিক স্বাস্থ্য উদ্বেগ মোকাবিলায় চ্যাটবটের ওপর রাখা কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা অনেক ব্যবহারকারীর জন্য কম উপকারী বা আনন্দদায়ক হয়ে উঠছিল, যাদের মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা ছিল না।
অল্টম্যানের দাবি, এখন তারা গুরুতর মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যাগুলো প্রশমিত করতে সক্ষম হয়েছেন এবং নতুন সরঞ্জাম তৈরি করেছেন, যা বিধিনিষেধ নিরাপদে শিথিল করতে সাহায্য করবে।
উল্লেখ্য, ১৮ বছরের কম বয়সীদের জন্য ওপেনএআই গত সেপ্টেম্বরেই একটি বিশেষ চ্যাটজিপিটি সংস্করণ চালু করেছে। এই সংস্করণে গ্রাফিক ও যৌনতা বিষয়ক তথ্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে ব্লক করা হয় এবং বয়স-উপযোগী বিষয়বস্তুর দিকে ব্যবহারকারীদের চালিত করা হয়। এমনকি, ব্যবহারকারীর আচরণ দেখে বয়স অনুমান করার প্রযুক্তিও তৈরি করছে ওপেনএআই।
তবে ওপেনএআই-এর এই সিদ্ধান্ত শিশুদের সুরক্ষা নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি করেছে। সমালোচকরা মনে করছেন, এতে ফেডারেল ও রাজ্য পর্যায়ে আরও কঠোর নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজন।
আইন সংস্থা বোয়েস শিলার ফ্লেক্সনারের অংশীদার জেনি কিম প্রশ্ন তুলেছেন, 'তারা কীভাবে নিশ্চিত করবে যে শিশুরা চ্যাটজিপিটির প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য নির্ধারিত অংশ এবং যৌন উত্তেজক কনটেন্ট অ্যাক্সেস করতে পারবে না?' তিনি ওপেনএআই-এর সমালোচনা করে বলেন, 'অন্যান্য বড় প্রযুক্তি সংস্থাগুলোর মতোই ওপেনএআই মানুষকে গিনিপিগের মতো ব্যবহার করছে।'
কিম মেটার বিরুদ্ধে একটি মামলার সঙ্গে জড়িত, যেখানে অভিযোগ করা হয়েছে যে ইনস্টাগ্রামের অ্যালগরিদম কিশোর ব্যবহারকারীদের মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে।
অলাভজনক সংস্থা সেন্টার ফর ডেমোক্রেসি অ্যান্ড টেকনোলজি (সিডিটি)-এর এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, প্রতি পাঁচজন শিক্ষার্থীর মধ্যে একজন জানিয়েছে যে তারা অথবা তাদের পরিচিত কেউ এআই-এর সঙ্গে রোমান্টিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছে।
এমনিতেই বেশ কিছু সময় ধরে এআই প্রযুক্তি সংস্থাগুলোর মূল্যের দ্রুত বৃদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। ওপেনএআই-এর রাজস্ব বাড়লেও, এটি কখনো লাভজনক হয়নি।
টুলেইন ইউনিভার্সিটির ব্যবসায়িক অধ্যাপক রব লালকা বলেন, প্রধান এআই সংস্থাগুলো বাজার দখলের তীব্র প্রতিযোগিতায় আছে। লালকা মনে করেন, 'কোনো কোম্পানিরই চ্যাটজিপিটির মতো এমন দ্রুত গ্রহণ দেখা যায়নি। তাদের সেই অভূতপূর্ব প্রবৃদ্ধির ধারা ধরে রাখতে হবে, যতদূর সম্ভব বাজার আধিপত্য অর্জন করতে হবে।'