২০২৫ সালের রসায়নে নোবেল জয়ী হতে পারেন যিনি: বিশেষজ্ঞদের পূর্বাভাস

২০২৫ সালের রসায়নে নোবেল পুরস্কার কারা পাচ্ছেন—এ নিয়ে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা। বুধবার (১ অক্টোবর) 'সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং নিউজ' (সিঅ্যান্ডইএন)-এর নির্বাহী সম্পাদক লরা হাউসের সঞ্চালনায় আয়োজিত এক ওয়েবিনারে এই আলোচনায় অংশ নেন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের ৩০০-রও বেশি অংশগ্রহণকারী।
লরা হাউসের সঙ্গে ছিলেন হাইনরিশ হাইনে ইউনিভার্সিটি ডুসেলডর্ফের নিলস হ্যানসন, টেক্সাস এ অ্যান্ড এম ইউনিভার্সিটির জোডি লুটকেনহাউস, ইউনিভার্সিটি অব কলোরাডো বোল্ডারের অঙ্কুর গুপ্ত এবং আমেরিকান কেমিক্যাল সোসাইটির বোর্ড সদস্য ক্যাথরিন লি।
হ্যানসন সম্প্রতি 'নোবেল জিনিয়াস: প্রাইজেস, প্রেস্টিজ অ্যান্ড সায়েন্টিফিক প্র্যাকটিস' গ্রন্থের সহসম্পাদক হিসেবে কাজ করেছেন। তার বক্তব্যের শিরোনাম ছিল: 'হাউ নট টু উইন আ নোবেল প্রাইজ'। আলোচনায় তিনি তুলে ধরেন, কেন কিছু গবেষণা নোবেল কমিটির কাছে পুরস্কার পাওয়ার যোগ্য বলে বিবেচিত হয় না। বক্তব্যের শেষে তিনি প্রশ্ন তোলেন, নোবেল পুরস্কার কি সত্যিই বিজ্ঞানের অগ্রগতিতে সহায়ক? দর্শকদের ভোটের মাধ্যমে এ প্রশ্নের উত্তর জানতে আহ্বান জানানো হয়।
হ্যানসনের বক্তব্যের পর প্যানেলিস্টরা ২০২৫ সালের সম্ভাব্য নোবেলজয়ীদের নাম নিয়ে আলোচনা করেন। সেখানে প্রায়ই একই নামগুলোই সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকায় উঠে আসে।
তবে এবার তালিকায় উঠে এসেছে এমন বিজ্ঞানীদের নাম, যাদের আবিষ্কার মানবস্বাস্থ্যে বিশাল অবদান রেখেছে। ক্যাথরিন লির পছন্দের তালিকায় ছিলেন জোয়েল হ্যাবেনার, সভেতলানা মোইসোভ ও জেন্স হোলস্ট। গ্লুকাগন-লাইক পেপটাইড-১ [জিএলপি-১] হরমোন অনুকরণে তৈরি ওজন কমানো ও ডায়াবেটিসের ওষুধ উদ্ভাবন করেছেন তারা। ২৮ শতাংশ ভোট পেয়ে দর্শক জরিপেও তাদের নাম শীর্ষে ছিল। উল্লেখযোগ্যভাবে, হ্যাবেনার ও মোইসোভ গত বছর লাস্কার পুরস্কার জিতেছিলেন। এই পুরস্কারপ্রাপ্তিকে প্রায়ই নোবেলজয়ের পূর্বাভাস হিসেবে ধরা হয়।
সিঅ্যান্ডইএন ছাড়াও অন্যান্য জার্নালগুলোও পূর্বাভাস দিয়েছে। কেমিস্ট্রিভিউজ ম্যাগাজিনের পাঠক জরিপে এবারও টানা তৃতীয় বছরের মতো শীর্ষে রয়েছেন বায়োকেমিস্ট চি-হুই ওয়াং। দ্য সায়েন্টিস্ট পত্রিকার জরিপেও বায়োকেমিস্ট্রির দিকেই ঝুঁকেছে ভবিষ্যদ্বাণী। তাদের তালিকায় মোইসোভের পাশাপাশি রয়েছেন হ্যানসনের আরেক পছন্দের প্রার্থী অপটোজেনেটিক্স উদ্ভাবক কার্ল ডেইসেরথ।
গত বছর সিঅ্যান্ডইএন সঠিকভাবে অনুমান করেছিলেন যে, প্রোটিন ডিজাইন ও স্ট্রাকচার বিষয়ে অবদানের জন্য ডেভিড বেকার, ডেমিস হাসাবিস ও জন এম. জাম্পার রসায়নে নোবেল জিতবেন। তবে এবারের আলোচনায় তিনি উল্লেখ করেন, সম্ভবত এ বছর জীবরসায়ন (বায়োলজিক্যাল কেমিস্ট্রি) বিষয়টি পুরস্কারের বাইরে থাকবে।
নোবেল সম্ভাবনার আলোচনায় উপাদান (মেটেরিয়াল) ও গণনামূলক (কম্পিউটেশনাল) রসায়নবিদরাও রয়েছেন। কেমিস্ট্রিভিউজ পাঠকদের পছন্দের তালিকায় ধাতু-জৈব কাঠামো (মেটাল-অর্গানিক ফ্রেমওয়ার্ক) গবেষণার জন্য ওমর কে. ফারহা ও ওমর এম. ইয়াঘির নাম আছে। লুটকেনহাউসের পছন্দ ফ্রি-র্যাডিক্যাল পলিমারাইজেশন প্রক্রিয়ার আবিষ্কারক ক্রিজতোফ মাতিয়াজেভস্কি। অন্যদিকে গুপ্তর পছন্দ রবার্তো কার ও মিশেল পারিনেলো। আণবিক গতিবিদ্যা (মলিকুলার ডাইনামিক্স) কৌশল বিজ্ঞানে ব্যাপক অবদান আছে তাদের।
এদিকে, ২৫ সেপ্টেম্বর ওয়েব অফ সায়েন্স প্ল্যাটফর্ম পরিচালনাকারী ক্লারিভেট, তাদের সম্ভাব্য নোবেলজয়ীদের তালিকা প্রকাশ করেছে। গবেষণার উদ্ধৃতি [সাইটেশন] দুই হাজার বারের বেশি হয়েছে এমন বিজ্ঞানীদের ভিত্তিতে তালিকা তৈরি করেছে তারা। তাদের ভবিষ্যদ্বাণীতে রয়েছেন ক্লিফোর্ড পি. ব্র্যাংউইন, অ্যান্থনি এ. হাইম্যান ও মাইকেল কে. রোজেন; যারা কোষের জৈব রাসায়নিক সংগঠনে ফেজ-সেপারেটেড বায়োমলিকুলার কনডেনসেটের ভূমিকা আবিষ্কার করেছেন। এছাড়া শক্তি সঞ্চয় ও রূপান্তর বিশেষজ্ঞ জ্যাঁ-মারি তারাসকন এবং সিঙ্গল-অ্যাটম ক্যাটালাইসিস উদ্ভাবক তাও ঝ্যাংও রয়েছেন তালিকায়।
আগামী বুধবার (৮ অক্টোবর) ঘোষণা করা হবে রসায়নে নোবেল পুরস্কার। এর আগে ৬ অক্টোবর ঘোষণা করা হবে চিকিৎসাবিজ্ঞানে (ফিজিওলজি বা মেডিসিন) নোবেল, এরপর ৭ অক্টোবর পদার্থবিজ্ঞানে।