পর্যটকদের 'উপদ্রবে অতিষ্ঠ' নেদারল্যান্ডসের বিখ্যাত উইন্ডমিল গ্রাম; ঢল সামলাতে বসাচ্ছে প্রবেশ ফি
ঐতিহাসিক উইন্ডমিল বা বায়ুকলের জন্য বিখ্যাত নেদারল্যান্ডসের গ্রাম জাঁসে শানস। কিন্তু পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড়ই এখন গ্রামটির বাসিন্দাদের জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে।
পর্যটকদের উপদ্রবে অতিষ্ঠ হয়ে কর্তৃপক্ষ এবার কড়া পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে। আগামী বসন্ত থেকে গ্রামটিতে প্রবেশের জন্য দর্শনার্থীদের ১৭.৫০ ইউরো (প্রায় ২,৪০০ টাকা) ফি দিতে হবে।
আমস্টারডাম থেকে কাছে হওয়ায় নয়নাভিরাম এই গ্রামটি পর্যটকদের কাছে বেশ জনপ্রিয়। মাত্র ১০০ জন বাসিন্দার এই গ্রামে গত বছর পর্যটক এসেছিলেন ২৬ লাখ। এই বিপুল সংখ্যক পর্যটকের চাপ সামলানো অসম্ভব হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় কাউন্সিল।
গ্রামের জাদুঘরের পরিচালক মারিকে ভেরওয়েইজ বলেন, '২০১৭ সালে আমাদের এখানে ১৭ লাখ পর্যটক এসেছিলেন, এ বছর সংখ্যাটা ২৮ লাখে পৌঁছানোর পথে। কিন্তু এটি একটি ছোট জায়গা! এত মানুষের জন্য আমাদের এখানে জায়গা নেই!'
তিনি আরও বলেন, দর্শনার্থীরা প্রায়শই জানেন না যে এখানে মানুষ বসবাস করে। ফলে তারা বাসিন্দাদের বাগানে ও বাড়িতে ঢুকে পড়েন, বাগানে প্রস্রাব করেন, দরজায় কড়া নাড়েন এবং সেলফি স্টিক ব্যবহার করে ঘরের ভেতরে উঁকি মারেন। বাসিন্দাদের কোনো গোপনীয়তাই থাকছে না।
এই পরিস্থিতি সামাল দিতেই অনলাইনে বুকিং এবং ফি পরিশোধের পরিকল্পনা করা হয়েছে। অবশ্য পর্যটকদের জন্য একটি সুবিধাও থাকছে। এই প্রবেশ ফির মধ্যেই গ্রামের জাদুঘর এবং উইন্ডমিলের ভেতরে প্রবেশের সুযোগ পাওয়া যাবে, যেগুলোর জন্য বর্তমানে আলাদা অর্থ দিতে হয়।
তবে কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্তে মোটেও খুশি নন স্থানীয় দোকান ও রেস্তোরাঁর মালিকেরা। 'ট্র্যাশ অ্যান্ড ট্রেজার্স' নামের একটি উপহারের দোকানের সহ-মালিক স্টেরে শাপ বলেন, 'এটা ভয়াবহ। এর অর্থ হলো, যাদের বাজেট কম, তারা এখানে আসতে পারবেন না। আমরা অনেক ক্রেতা হারাব।'
তিনি আরও বলেন, 'চারজনের একটি পরিবারের জন্য পার্কিংসহ মোট খরচ পড়বে প্রায় ১০০ ইউরো। ফলে অন্য জিনিসপত্র কেনার জন্য তাদের হাতে আর বেশি টাকা থাকবে না।'
পর্যটকদের মধ্যেও এ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কানাডা থেকে আসা ইশান বলেন, 'শুধু কয়েকটি উইন্ডমিল দেখার জন্য ১৭.৫০ ইউরো খরচ করব কি না, আমি নিশ্চিত নই। দামটা একটু বেশিই মনে হচ্ছে।'
তবে নেদারল্যান্ডসে বসবাসকারী এলিসিয়া বলেন, তিনি অবশ্যই এই অর্থ দেবেন। তার মতে, এই গ্রামগুলো খুব বড় নয়, অতিরিক্ত পর্যটকের কারণে এদের সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যায়।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা স্টিভ অবশ্য বিষয়টিকে ইতিবাচকভাবেই দেখছেন। তিনি বলেন, 'আমার মতো হিসাবি লোকেরা হয়তো উইন্ডমিলের দিকে তাকিয়ে ভাববে, ভেতরে যাওয়ার জন্য বাড়তি টাকা দেব না। কিন্তু যদি প্রবেশ ফির মধ্যেই সবকিছু অন্তর্ভুক্ত থাকে, তাহলে আমি দ্বিধা করব না।'
বিশ্বের বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্রেই এমন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। কানাডার টরন্টো মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির পর্যটন বিষয়ের অধ্যাপক র্যাচেল ডডস বলেন, 'ভুটান দেশটিতে প্রবেশের জন্য প্রতিদিনের হিসাবে ফি নেয়। ভেনিস সম্ভবত সবচেয়ে বিখ্যাত উদাহরণ, যেখানে দিনের বেলার পর্যটকদের জন্য ৫ ইউরো ফি নির্ধারণ করা হয়েছে।' তবে গ্রামের ক্ষেত্রে প্রবেশ ফি আরোপের ঘটনা এখনো বেশ বিরল।
