খরচ কমাতে নেদারল্যান্ডসের ধূমপায়ীরা তামাক কিনতে পাড়ি দিচ্ছেন অন্য দেশে

নেদারল্যান্ডসে ধূমপায়ীর সংখ্যা কমাতে সরকার একের পর এক আবগারি শুল্ক বা ট্যাক্স বাড়িয়ে চলেছে। কিন্তু তাতেও খুব একটা লাভ হচ্ছে না। বরং ধূমপায়ীরা সস্তায় তামাক কেনার জন্য প্রতিবেশী দেশ বেলজিয়াম, জার্মানি বা লুক্সেমবার্গে পাড়ি দিচ্ছেন।
ডাচ পরিসংখ্যান অফিসের অনুমান অনুযায়ী, ২০২৪ সালে নেদারল্যান্ডসে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে ১৮ শতাংশ ধূমপান করবেন। সরকার ভেবেছিল, ট্যাক্স বাড়ালে ধূমপানের পরিমাণ কমবে। কিন্তু বাস্তবে তেমনটা হয়নি। বরং ধূমপায়ীরা সস্তায় জিনিসপত্র কিনতে অন্য দেশে যেতেও রাজি।
ডাচ স্বাস্থ্য ও পরিবেশ ইনস্টিটিউটের একটি সমীক্ষা বলছে, গত বছর নেদারল্যান্ডসে ব্যবহৃত সিগারেটের প্রায় ৬০% বিদেশ থেকে আনা হয়েছিল। সিগারেট ও তামাক প্রস্তুতকারকদের সংগঠন ভিএসকে জানিয়েছে, ধূমপায়ীদের এই অন্য দেশে পাড়ি দেওয়া এবং অবৈধ ব্যবসার কারণে সরকারের বছরে প্রায় ২.৬ বিলিয়ন ইউরো (৩.০৫ বিলিয়ন ডলার) ক্ষতি হচ্ছে।
বিশাল অঙ্কের ক্ষতি
বাজার গবেষণা সংস্থা ডব্লিউএসপিএম এবং কান্তার-এর বিশ্লেষণ অনুযায়ী, নেদারল্যান্ডসে বিক্রি হওয়া সিগারেটের ৪০% এবং রোলিং টোব্যাকোর (খালি কাগজে ভরে সিগারেট বানানোর তামাক) প্রায় ৫০% বিদেশ থেকে বা চোরাই পথে আসে। ভিএসকে -এর ডিরেক্টর জ্যান হেইন স্ট্র্যাটার ডাচ সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, 'মানুষ নির্দিষ্ট দামে অভ্যস্ত ছিল, কিন্তু এখন তারা সস্তা জিনিসের দিকে ঝুঁকছে, তা সে বিদেশি হোক বা কালোবাজারের।' তিনি মনে করেন, ট্যাক্স বাড়িয়ে ধূমপায়ীর সংখ্যা কমানো যায়নি (২০২০ সালে ২০% থেকে কমে ২০২৪ সালে ১৮% হয়েছে)। তাই তার প্রস্তাব, প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে করের হার সমান করা হোক এবং অবৈধ বাজার ও ডিজিটাল বিক্রি নিয়ন্ত্রণ করা হোক।
দামের এত তফাৎ?
২০২৪ সালে ট্যাক্স বাড়ানোর ফলে নেদারল্যান্ডসে সিগারেটের দাম ২৪% এবং রোলিং টোব্যাকোর দাম ৪৫% বেড়েছে।এখন এক প্যাকেট সিগারেটের দাম ১১ ইউরোর (১২.৯০ ডলার) বেশি এবং এক কার্টন (১০ প্যাকেট) সিগারেটের দাম ১৩০ ইউরো (১৫২ ডলার)। অথচ লুক্সেমবার্গে এক প্যাকেটের দাম ৬ ইউরো (৭ ডলার) এবং এক কার্টনের দাম ৭০ ইউরো (৮২ ডলার)। অন্যদিকে, ৫০ গ্রাম রোলিং টোব্যাকোর দাম নেদারল্যান্ডসে প্রায় ২৫ ইউরো (২৯.৩০ ডলার), যা জার্মানির থেকে দুই বা তিনগুণ বেশি।
এই বিশাল দামের পার্থক্যের সুযোগ নিচ্ছে অপরাধী চক্র। গত বছর রটারডাম বন্দরে ১৫ মিলিয়ন সিগারেট বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল। এ বছরের এপ্রিলে লিমবার্গে আরও ২.৬ মিলিয়ন এবং মে মাসে ব্রাবান্টে ২০ মিলিয়নেরও বেশি সিগারেট এবং প্রায় ৩,৭০০ কেজি রোলিং টোব্যাকো পাওয়া গেছে।
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ
আরআইভিএম মনে করছে, যতক্ষণ পর্যন্ত প্রতিবেশী দেশগুলোতে দাম কম থাকবে, ততক্ষণ মানুষ ধূমপান ছাড়ার চেষ্টা কম করবে। তাই তারা সরকারকে দুটি পরামর্শ দিয়েছে। প্রথমত, অন্য দেশ থেকে তামাক কেনার ওপর আরও কড়াকড়ি আরোপ করা হোক। কারণ বর্তমানে একজন ব্যক্তি চারটি কার্টন সিগারেট, এক কেজি রোলিং টোব্যাকো, ২০০টি সিগার এবং ৪০০টি ছোট সিগার আনতে পারেন। দ্বিতীয়ত, ই-সিগারেটের ওপর বিশেষ কর বসানো হোক, কারণ অনেক তরুণ এর মাধ্যমে ধূমপান শুরু করে এবং পরে সাধারণ সিগারেটের দিকে ঝোঁকে।
ডাচ সরকারের তামাক নীতি মূলত দুটি বিষয়ের ওপর নির্ভরশীল – বেশি দাম এবং কম বিক্রয় কেন্দ্র। যদিও ধূমপায়ীর সংখ্যা কিছুটা কমেছে, কিন্তু 'তাবাকনি' নামের একটি অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা ওয়েবসাইটের মতে,ভিএসকে তাদের বিশ্লেষণে একটি বিষয় এড়িয়ে যাচ্ছে। আর তা হলো, এই ট্যাক্স বাড়ানোর প্রধান উদ্দেশ্য তরুণদের ধূমপান থেকে দূরে রাখা। তাদের মতে, আসল ক্ষতিটা হচ্ছে অবৈধ ব্যবসার কারণে, অন্য দেশ থেকে কেনাকাটার কারণে নয়।