‘এক ইঞ্চি মাটি নিয়েও চুক্তি সম্ভব নয়’: ট্রাম্পের বাগরাম বিমানঘাঁটি ফেরতের দাবি প্রত্যাখ্যান তালেবানের
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আফগানিস্তানের বাগরাম বিমানঘাঁটি ফেরত দেওয়ার দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে তালেবান। তারা স্পষ্ট জানিয়েছে, এ বিষয়ে কোনো ধরনের চুক্তি করা 'সম্ভব নয়'।
তালেবান আরও সতর্ক করেছে যে, কোনো ধরনের বৈরিতার জবাবে তারা 'সবচেয়ে কঠোর' প্রতিক্রিয়া জানাবে।
দেশটির সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান ফাসিহউদ্দিন ফিতরাত রবিবার (২১ সেপ্টেম্বর) কাবুলে এক অনুষ্ঠানে বলেন, 'আফগানিস্তান সম্পূর্ণ স্বাধীন, এটি নিজ দেশের মানুষের দ্বারা পরিচালিত এবং কোনো বিদেশি শক্তির ওপর নির্ভরশীল নয়। আমরা কোনো দাঙ্গাবাজ বা আগ্রাসীকে ভয় করি না।'
তিনি আরও বলেন, 'সম্প্রতি কিছু লোক দাবি করেছে যে তারা বাগরাম বিমানঘাঁটি ফেরত পাওয়ার জন্য আফগানিস্তানের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে।'
ফাসিহউদ্দিন ফিতরাত বলেন, 'আফগানিস্তানের এক ইঞ্চি মাটিও নিয়ে কোনো চুক্তি সম্ভব নয়। আমাদের এর প্রয়োজন নেই।'
এর আগে ট্রাম্প আফগানিস্তানকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, তারা যদি বাগরাম বিমানঘাঁটির নিয়ন্ত্রণ যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে না দেয়, তবে 'খারাপ কিছু' ঘটবে।
তালেবান বাগরাম বিমানঘাঁটির নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার আগে এটি আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় সামরিক ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহৃত হতো।
ট্রাম্প ট্রুথ সোশ্যাল-এ এক পোস্টে লেখেন, 'যদি আফগানিস্তান যুক্তরাষ্ট্রের নির্মিত বাগরাম বিমানঘাঁটি ফিরিয়ে না দেয়, তবে খুব খারাপ কিছু ঘটবে।'
বাইডেন প্রশাসনের সমালোচনা করে ট্রাম্প বলেন, এই পদক্ষেপের ফলে আমেরিকান অস্ত্র ও অন্যান্য সামরিক সম্পদ তালেবানের হাতে পড়েছে।
বিমানঘাঁটি আফগান রাজধানী কাবুল থেকে প্রায় ৬৪ কিলোমিটার (৪০ মাইল) দূরে অবস্থিত।
বাগরাম বিমানঘাঁটি কী?
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৯/১১ হামলার পর তালেবান সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর এই বিমানঘাঁটি যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক কার্যক্রমের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে।
ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে তালেবানের সঙ্গে করা এক চুক্তির অংশ হিসেবে, বাইডেন প্রশাসনের সময় ২০২১ সালের জুলাই মাসে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো সেনারা বিমানঘাঁটি ছেড়ে যায়।
মার্কিন নিয়ন্ত্রণাধীন সময়ে 'সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ'-এর নামে হাজার হাজার মানুষকে বছরের পর বছর কোনো অভিযোগ বা বিচার ছাড়াই এখানে বন্দী করে রাখা হয়েছিল।
ইকোনমিক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই বিমানঘাঁটির রানওয়ে অনেক আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের চেয়েও দীর্ঘ এবং এখানে রয়েছে আশ্রয়কেন্দ্র, হাসপাতাল ও জ্বালানি মজুতাগার। এছাড়া এখানে বার্গার কিং ও পিৎজা হাটের মতো ফাস্ট-ফুড রেস্তোরাঁ, ইলেকট্রনিক্স থেকে আফগান কার্পেট পর্যন্ত বিক্রির দোকান এবং একটি বিশাল কারাগারও ছিল।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য কেন বাগরাম বিমানঘাঁটি গুরুত্বপূর্ণ?
ইরান, পাকিস্তান, চীনের জিনজিয়াং প্রদেশ ও মধ্য এশিয়ার সংযোগস্থলে কৌশলগতভাবে অবস্থিত ঘাঁটিটি মার্কিন প্রভাব পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর মাধ্যমে ইউরেশিয়ার বিস্তৃত অঞ্চলে, রাশিয়ার সামরিক কার্যক্রম থেকে শুরু করে চীনের প্রকল্প পর্যন্ত, নজরদারি ও সিগন্যাল ইন্টেলিজেন্সের তথ্য সংগ্রহ সম্ভব।
সম্প্রতি যুক্তরাজ্য সফরের সময় ট্রাম্প বলেন, 'আমরা ঘাঁটিটি ফেরত নেওয়ার চেষ্টা করছি। এটি এক ধরনের ব্রেকিং নিউজ বলা যেতে পারে।'
