নেপালের অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়া কে এই সুশীলা কার্কি?

নেপালের অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সাবেক প্রধান বিচারপতি সুশিলা কার্কিকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আজ (১২ সেপ্টেম্বর) নেপালের প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ের একজন কর্মকর্তা রয়টার্সকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
সম্প্রতি দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনের মুখে প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলি পদত্যাগ করেন। তার পদত্যাগের পরই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নেতৃত্বে কার্কির নাম উঠে আসে।
গত সপ্তাহে সহিংস বিক্ষোভে প্রাণ হারিয়েছেন ৩৪ জন, আহত হয়েছেন এক হাজারের বেশি মানুষ। পুলিশ বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণে আনতে গেলে এ সংঘর্ষ ঘটে।
বিক্ষোভের সূত্রপাত হয়েছিল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারির পর। পরে সরকার সেই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেয়। তবে সহিংসতা থামে অলি পদত্যাগ করার পরই।
রাষ্ট্রপতি রামচন্দ্র পোড়েল ও সেনাপ্রধান অশোক রাজ সিগডেল যে সংবিধান বিশেষজ্ঞের সঙ্গে পরামর্শ করেছেন, তিনি জানিয়েছেন, সুশিলা কার্কিকে অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী করা হবে। আলোচনার সংবেদনশীলতার কারণে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই বিশেষজ্ঞ জানান, 'জেন-জি আন্দোলনকারীরা তাকেই চাইছে। আজই এটি ঘটবে।'
'জেন-জি' নামে পরিচিত বিক্ষোভকারীদের বেশির ভাগই তরুণ। আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদের বয়স থেকেই এ নামের প্রচলন।
কার্কির নিয়োগের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসবে রাষ্ট্রপতি পোড়েলের বাসভবনে স্থানীয় সময় সকাল ৯টায় নির্ধারিত বৈঠকের পর। আলোচনায় জড়িত এক জেন-জি সূত্র এ তথ্য দিয়েছে।
এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য রাষ্ট্রপতির কার্যালয় ও সেনাবাহিনীর মুখপাত্রের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও কোনো সাড়া মেলেনি।
নেপাল দীর্ঘদিন ধরেই রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিরতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ২০০৮ সালে রাজতন্ত্র বিলুপ্ত হওয়ার পর থেকে দেশটি নানা সংকটে জর্জরিত। কর্মসংস্থানের অভাবে লাখো মানুষ বিদেশে কাজ খুঁজে নিয়েছেন এবং সেখান থেকে অর্থ পাঠিয়ে পরিবার চালাচ্ছেন।
আজ কাঠমান্ডুতে দোকানপাট খুলতে শুরু করেছে। রাস্তায় আবার গাড়ি চলছে। পুলিশের হাতে এখন আর আগের মতো বন্দুক নেই, তারা লাঠি নিয়ে দায়িত্ব পালন করছেন।
তবে কিছু সড়ক এখনো অবরুদ্ধ রয়েছে। সেনারা টহল দিচ্ছেন, যদিও আগের তুলনায় তাদের উপস্থিতি কম।
কে এই সুশিলা কার্কি?
নেপালের প্রথম নারী প্রধান বিচারপতি ছিলেন সুশীলা কার্কি। তিনি ২০১৬ সালের জুলাই থেকে ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। দায়িত্ব পালনকালে দুর্নীতির বিরুদ্ধে 'জিরো টলারেন্স' (শূন্য সহনশীলতা) নীতি গ্রহণ করেছিলেন তিনি।
সাত ভাই-বোনের মধ্যে সবার বড় ছিলেন সুশীলা। কৃষক পরিবার থেকে আসা তার পরিবার সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিপি কৈরালার পরিবারের ঘনিষ্ঠ ছিল। কৈরালা ১৯৫৯ থেকে ১৯৬০ সাল পর্যন্ত নেপালের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন।
শিক্ষাজীবনে ১৯৭২ সালে সুশীলা মহেন্দ্র মরাং ক্যাম্পাস থেকে বিএ, ১৯৭৫ সালে বারাণসী হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এমএ এবং ১৯৭৮ সালে ত্রিভুবন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি।
প্রধান বিচারপতি থাকাকালে তিনি দুর্নীতির মামলায় তৎকালীন তথ্য ও যোগাযোগমন্ত্রী জয়প্রকাশ প্রসাদ গুপ্তকে দোষী সাব্যস্ত করেন।
তবে দায়িত্ব পালনের শেষ সময়ে ২০১৭ সালের এপ্রিলে তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়। ক্ষমতাসীন দল নেপালি কংগ্রেস ও সিপিএন (মাওইস্ট সেন্টার)-এর আইনপ্রণেতারা সংসদে তার বিরুদ্ধে অভিশংসন প্রস্তাব আনেন।
তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি পক্ষপাতদুষ্ট রায় দিয়েছিলেন। দুর্নীতি দমন সংস্থার শক্তিশালী প্রধানকে অযোগ্যতার কারণে অপসারণের ক্ষেত্রে সেই রায় ছিল গুরুত্বপূর্ণ।