ইউক্রেন ইস্যুতে পুতিনের সঙ্গে আগামী সপ্তাহেই বৈঠক করতে পারেন ট্রাম্প

হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তার বরাতে বুধবার জানানো হয়েছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আগামী সপ্তাহেই ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করতে পারেন। ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধে রাশিয়ার ওপর চাপ তৈরি করতে যুক্তরাষ্ট্র নতুন করে দ্বৈত নিষেধাজ্ঞা, এমনকি চীনের বিরুদ্ধেও নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
এই বৈঠকটি হবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ও রুশ প্রেসিডেন্টের মধ্যে প্রথম সরাসরি সাক্ষাৎ, যা শেষবার হয়েছিল ২০২১ সালের জুনে। তখন জো বাইডেন ও পুতিন জেনেভায় মুখোমুখি হয়েছিলেন। ওই বৈঠকের আট মাস পরই রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা চালায়, যা ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপে সবচেয়ে বড় সামরিক আগ্রাসন।
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের পর আর মুখোমুখি হননি এবং তারা প্রকাশ্যে একে অপরের প্রতি অবজ্ঞা প্রকাশ করেন।
দ্য নিউইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, বুধবার ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে এক ফোনালাপে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তিনি প্রথমে পুতিনের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন, এরপর পুতিন ও জেলেনস্কিকে নিয়ে একটি ত্রিপাক্ষিক বৈঠক করবেন বলে পরিকল্পনা করছেন।
ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, 'খুব শীঘ্রই একটি বৈঠক হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।'
হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট বলেন, 'রুশ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকের আগ্রহ প্রকাশ করেছে এবং প্রেসিডেন্ট পুতিন ও প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি—উভয়ের সঙ্গেই বৈঠকে বসার ব্যাপারে ট্রাম্প প্রস্তুত।'
বুধবার রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফের মধ্যে বৈঠকের পর এই বিষয়গুলো প্রকাশ্যে আসে। এই বৈঠককে ডোনাল্ড ট্রাম্প ট্রুথ সোশ্যালে 'গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি' বলে বর্ণনা করলেও পরে বলেন, তিনি একে 'ব্রেকথ্রু' বা বড় ধরনের সাফল্য বলবেন না।
ক্রেমলিনের এক উপদেষ্টা বলেন, আলোচনাটি ছিল 'উপযোগী ও গঠনমূলক'।
এই কূটনৈতিক তৎপরতা এমন এক সময়ে হচ্ছে, যখন ট্রাম্পের নির্ধারিত সময়সীমা অনুযায়ী রাশিয়াকে ইউক্রেনে শান্তিচুক্তিতে রাজি হতে হবে, নইলে নতুন নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হতে হবে।
শান্তি আলোচনায় কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি না হওয়ায় ট্রাম্প পুতিনের ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছেন। তিনি হুমকি দিয়েছেন, রাশিয়ার রপ্তানি, বিশেষ করে জ্বালানি তেল কেনা দেশগুলোর ওপর বড় অঙ্কের শুল্ক আরোপ করবেন।
বুধবার ট্রাম্প বলেন, তিনি চীনের ওপরও অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করতে পারেন, ভারতের ক্ষেত্রে যেমন ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছিল রাশিয়ার তেল কেনার কারণে।
তিনি বলেন, 'আমরা এটা ভারতের ওপর প্রয়োগ করেছি। আমরা সম্ভবত আরও কয়েকটি দেশের ওপরও এটা করতে যাচ্ছি। এর মধ্যে একটি হতে পারে চীন।'
ট্রুথ সোশ্যাল-এ এক পোস্টে ডোনাল্ড ট্রাম্প জানান, স্টিভ উইটকফের পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের পর তিনি যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকজন ইউরোপীয় মিত্রকে অবহিত করেছেন।
জার্মান সরকারের একজন মুখপাত্র জানান, ট্রাম্প জার্মান চ্যান্সেলর ও অন্যান্য ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে ফোনালাপে রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনার সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে তথ্য দিয়েছেন।
ভারতের পর এবার চীনের ওপর চাপ
বুধবার ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন, কারণ নয়াদিল্লি রাশিয়া থেকে তেল আমদানি অব্যাহত রেখেছে।
এই নতুন পদক্ষেপের ফলে ভারতের কিছু পণ্যের ওপর শুল্ক ৫০ শতাংশ পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে, যা যুক্তরাষ্ট্রের যেকোনো বাণিজ্য অংশীদারের ক্ষেত্রে অন্যতম সর্বোচ্চ।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ সিদ্ধান্তকে 'চরম দুর্ভাগ্যজনক' বলে মন্তব্য করেছে।
ক্রেমলিন বলেছে, যেসব দেশ রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য করছে, তাদের শাস্তি দেওয়ার হুমকি অবৈধ।
বুধবার ট্রাম্পের মন্তব্য অনুযায়ী, তিনি চীনের ওপরও নতুন শুল্ক আরোপ করতে পারেন, যা হলে বিশ্বের দুই বৃহত্তম অর্থনীতির মধ্যে উত্তেজনা আরও বাড়বে।
যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট গত সপ্তাহে চীনা কর্মকর্তাদের সতর্ক করে বলেছেন, নিষেধাজ্ঞা জারি থাকা সত্ত্বেও চীন যদি রাশিয়া থেকে তেল আমদানি চালিয়ে যায়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের আইন অনুযায়ী বিশাল শুল্ক আরোপ করা হবে।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন বর্তমানে বাণিজ্য ও শুল্ক নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে, যার মূল লক্ষ্য হলো ৯০ দিনের একটি শুল্কবিরতি চুক্তি বাড়ানো। এই চুক্তির মেয়াদ আগামী ১২ আগস্ট শেষ হচ্ছে। সময়সীমা শেষ হলে, দ্বিপাক্ষিক শুল্ক আবার তিন অঙ্কের উচ্চ হারে ফিরে যেতে পারে।
বিমান হামলা
ব্লুমবার্গ ও রাশিয়ার স্বাধীন সংবাদমাধ্যম দ্য বেল জানিয়েছে, ক্রেমলিন হয়তো রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে বিমান হামলা বন্ধে একটি সাময়িক নিষেধাজ্ঞা প্রস্তাব করতে পারে। এই ধারণাটি গত সপ্তাহে বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্ডার লুকাশেঙ্কো পুতিনের সঙ্গে বৈঠকে উত্থাপন করেছিলেন।
যদি এটি বাস্তবায়নও হয়, তবু এটি পুরোপুরি ও তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতি নয়, যা ইউক্রেন ও যুক্তরাষ্ট্র মাসের পর মাস ধরে দাবি করে আসছে। তবে এটি উভয় পক্ষের জন্য সাময়িক স্বস্তি আনতে পারে।
শান্তি আলোচনা মে মাসে ফের শুরু হওয়ার পর, রাশিয়া এখন পর্যন্ত যুদ্ধের সবচেয়ে ভয়াবহ বিমান হামলা চালিয়েছে, যাতে শুধু কিয়েভেই অন্তত ৭২ জন নিহত হয়েছে। ট্রাম্প এই হামলাগুলোকে 'ঘৃণ্য' বলে অভিহিত করেছেন।
ইউক্রেন পাল্টা জবাব হিসেবে এখনো রাশিয়ার তেল শোধনাগার ও ডিপোতে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।
ক্রেমলিন ঘনিষ্ঠ তিনটি সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে, ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞার আল্টিমেটাম মেনে নেওয়ার সম্ভাবনা কম, কারণ পুতিন মনে করেন তিনি যুদ্ধ জিতছেন, আর তার সামরিক লক্ষ্য যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
তারা আরও জানায়, নতুন করে নিষেধাজ্ঞা দিলেও পুতিনের তাতে খুব একটা প্রভাব পড়বে না বলে মনে করেন, কারণ যুদ্ধ চলাকালে রাশিয়া ইতোমধ্যেই একাধিক অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা মোকাবিলা করেছে।