৬ মাসে দ্বিগুণ বড় হয়েছে সেই 'ডায়ার উলফ' ছানাগুলো

প্রায় ১০ থেকে ১২ হাজার বছর আগে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া ডায়ার উলফ পৃথিবীতে আর নেই। তবে তাদের আধুনিক সংস্করণ নিয়ে কদিন আগে আলোচনায় এসেছে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং প্রতিষ্ঠান কলোসাল বায়োসাইন্সেস। আজ থেকে ছয় মাস আগে জন্ম নেয়া দুই ডায়ার উলফ রোমুলাস ও রেমাস, এখন বেশ বড় হয়েছে। তাদের ছোট বোন খালিসি-সহ তিনজনই বেড়ে উঠছে কলোসাল এর তত্ত্বাবধানে।
কলোসাল সম্প্রতি প্রকাশিত একটি ভিডিওতে জানায়, রোমুলাস ও রেমাস এখন ছয় মাস পেরিয়েছে এবং তাদের ওজন ৯০ পাউন্ড বা প্রায় ৪১ কেজি, যা সাধারণ ধূসর নেকড়ের চেয়ে ২০ শতাংশ বেশি। তাদের চিফ অ্যানিমেল অফিসার ম্যাট জেমস বলেন, "ডায়ার উলফের জিনগুলো যে কাজ করছে, তা এখন পরিষ্কার। ওদের দেখে বোঝাই যাচ্ছে, এগুলো আগের প্রজাতির চেহারা ও আকৃতির খুব কাছাকাছি।"
অন্যদিকে খালিসি তুলনায় একটু ছোট, তার বয়স কম এবং ওজন প্রায় ৩৫ পাউন্ড (প্রায় ১৬ কেজি)। তবে সেও গড়ে ধূসর নেকড়ের চেয়ে ১০-১৫ শতাংশ বড়। ভবিষ্যতে তাকে দুই ভাইয়ের সঙ্গে একত্রে দলে যুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে।
তবে এ ধরনের 'ডায়ার উলফ' তৈরিকে ঘিরে সমালোচনাও রয়েছে। অনেক বিজ্ঞানীই বলছেন, রোমুলাস ও রেমাস প্রকৃত ডায়ার উলফ নয়, বরং জেনেটিকভাবে পরিবর্তিত ধূসর নেকড়ে, যাদের ডিএনএ-তে বিলুপ্ত ডায়ার উলফের জিন অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
প্রকৃত অর্থে কোনো প্রাণীকে "ডি-এক্সটিংক্ট" করতে হলে সেটিকে ক্লোন করতে হবে এমনটা বলেন নিউজিল্যান্ডের ওটাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যালিওজেনেটিক বিশেষজ্ঞ অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর নিক রলেন্স। তবে বিলুপ্ত প্রাণীর ডিএনএ সংরক্ষিত না থাকায় এটি সম্ভব নয়।
কলোসাল বলছে, তারা ধূসর নেকড়ের জিনে ১৪টি ভিন্ন জিনের ২০টি পরিবর্তন এনেছে, যাতে করে প্রাণীগুলো দেখতে প্রাচীন ডায়ার উলফের মতো হয়। প্রকৃত ডায়ার উলফ না হলেও, এগুলো গত ১০ হাজার বছরের মধ্যে সবচেয়ে কাছাকাছি প্রতিরূপ।
এ ধরনের জেনেটিক প্রকল্প শুধুমাত্র রোমাঞ্চ বা বিজ্ঞানের প্রদর্শনী নয় ,এর পেছনে রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ সংরক্ষণমূলক উদ্দেশ্যও। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, লাল নেকড়ে (red wolf) এখন বিশ্বের অন্যতম বিপন্ন প্রজাতি, যার মাত্র ১৫-২০টি বুনো পরিবেশে টিকে আছে বলে ধারণা করা হয়।
কলোসাল তাদের উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে চারটি লাল নেকড়ের ক্লোন করেছে—হোপ, ব্লেজ, সিন্ডার এবং অ্যাশ। ক্লোন তৈরির জন্য ব্যবহার করা হয়েছে এমন কায়োট (coyote), যাদের জিনে আগে থেকেই লাল নেকড়ের ডিএনএ রয়েছে।
আফ্রিকার কেনিয়াতে আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে নর্দার্ন হোয়াইট রাইনো। বেঁচে আছে মাত্র দুটি স্ত্রী রাইনো। কলোসাল এর পরিকল্পনা,এই হোয়াইট রাইনোকে সারোগেট হিসেবে ব্যবহার করে সংরক্ষিত শুক্রাণু ও ডিম্বাণুর মাধ্যমে নতুন করে প্রজাতিটি ফিরিয়ে আনা। এর জন্য দরকার জটিল জেনেটিক গবেষণা এবং অত্যন্ত উন্নত ল্যাব প্রযুক্তি।
এমন উচ্চাকাঙ্ক্ষী প্রকল্পগুলো সবসময় বিতর্কের বাইরে থাকে না। নৈতিক দিক, প্রাণীদের প্রকৃতি নিয়ে বিতর্ক এবং ভাষা ব্যবহারে অস্পষ্টতা সবই সামনে আসে। রোমুলাস ও রেমাস হয়তো পুরোপুরি ডায়ার উলফ নয়, তবে তারা এ পর্যন্ত আসা সবচেয়ে কাছের প্রতিরূপ। এবং হয়তো তারা বিশ্ব থেকে হারিয়ে যেতে বসা অন্য প্রাণীগুলোকে বাঁচানোর পথ দেখাবে।
অনুবাদ : নাফিসা ইসলাম মেঘা