তীব্র তাপপ্রবাহে পুড়ছে ইউরোপ, সবচেয়ে উষ্ণ জুন দেখল স্পেন-ইংল্যান্ড

গ্রীষ্মের শুরুতেই তীব্র তাপপ্রবাহ বইছে ইউরোপজুড়ে। স্পেন ও ইংল্যান্ডে জুন মাসে ইতিহাসের সর্বোচ্চ গরম রেকর্ড করা হয়েছে। খবর বিবিসির।
স্পেনের আবহাওয়া সংস্থা অ্যামেট জানায়, জুনে দেশটির গড় তাপমাত্রা ছিল ২৩.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা সাধারণত জুলাই-আগস্টের গড়। সংস্থাটি জানায়, এবারের গরম সব পূর্ববর্তী রেকর্ড 'চূর্ণ-বিচূর্ণ' করে দিয়েছে।
ইংল্যান্ডেও জুনে গড় তাপমাত্রা ছিল ১৬.৯ ডিগ্রি, যা ওই মাসে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ। পুরো যুক্তরাজ্যজুড়ে এটি ছিল দ্বিতীয় গরম জুন, ১৮৮৪ সাল থেকে রেকর্ড শুরু হওয়ার পর থেকে। সেন্ট জেমস পার্কে ৩৪.৭ ডিগ্রি ও হিথ্রো বিমানবন্দরে ৩৩.১ ডিগ্রি রেকর্ড করা হয় বছরের সবচেয়ে গরম দিন হিসেবে।
পর্তুগালের মোরা শহরে রোববার ৪৬.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে, যা মূলভূখণ্ডের ইতিহাসে সর্বোচ্চ।
তীব্র গরমে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। তুরস্কে দাবানলে ৫০ হাজারের বেশি মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। ইতালিতে তাপজনিত কারণে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। লোম্বার্ডি, এমিলিয়াসহ ১৩টি অঞ্চলে দুপুরে বাইরে কাজ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
ফ্রান্সের বহু শহরে রেকর্ড গরমে ১,৮০০-র বেশি স্কুল-কলেজ বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। প্যারিসের আইফেল টাওয়ার পর্যন্ত বন্ধ রাখতে হয়েছে। দেশটির ১৬টি অঞ্চলে জারি করা হয়েছে লাল সতর্কতা।
গ্রিসের রাজধানী অ্যাথেন্সের আশপাশে দাবানলে বহু ঘরবাড়ি পুড়ে গেছে। মানুষজনকে আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। জার্মানিতেও তাপমাত্রা ৩৮ ডিগ্রির কাছাকাছি পৌঁছেছে। পানির স্তর কমে যাওয়ায় রাইন নদীতে নৌ চলাচল ব্যাহত হচ্ছে।
তাপপ্রবাহের প্রভাবে অ্যাড্রিয়াটিক সাগরে দেখা দিচ্ছে বিষাক্ত সামুদ্রিক প্রাণী। দ্রুত গলে যাচ্ছে পাহাড়ি হিমবাহ। জলবায়ু বিজ্ঞানীরা বলছেন, মানুষের সৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনের ফলেই এসব তীব্র আবহাওয়া পরিস্থিতি ঘন ঘন দেখা দিচ্ছে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ভলকার তুর্ক বলেন, "উষ্ণতা, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা, বন্যা, খরা ও দাবানল আমাদের জীবন, স্বাস্থ্য এবং পরিবেশের অধিকারের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।" তিনি জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে সরে এসে টেকসই ভবিষ্যতের পথে এগোনোর আহ্বান জানান।
যুক্তরাজ্যের রিডিং বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রিচার্ড অ্যালান বলেন, "গরম ও আর্দ্রতাপিপাসু বায়ুমণ্ডল মাটি দ্রুত শুকিয়ে ফেলছে, যার ফলে তাপপ্রবাহ আরও তীব্র হয়ে উঠছে, আর মাঝারি মাত্রার গরম এখন চরম মাত্রায় পৌঁছাচ্ছে।"
অনুবাদ- নাফিসা ইসলাম মেঘা