ছুটিতে বাসা ছাড়ার আগে যে ৫ বৈদ্যুতিক যন্ত্র অবশ্যই খুলে রেখে যাবেন

হাতে অল্প কিছু ছুটির দিন এলেই অনেকেই ছুটে যান দেশে-বিদেশের নানা গন্তব্যে। বেড়াতে বেরোনোর আগে আমরা সাধারণত লাইট বন্ধ করা, গ্যাসের চুলা নিভিয়ে দেওয়া কিংবা দরজায় তালা লাগানোর মতো বিষয়গুলো মাথায় রাখি।
তবে একটি ছোট কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অনেক সময় আমাদের নজর এড়িয়ে যায়—বাসার ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতিগুলো আনপ্লাগ করে রাখা।
এইসব যন্ত্রপাতি আগুন লাগার ঝুঁকি বাড়াতে পারে। এমনকি আগুন না লাগলেও, অনেক ডিভাইস বন্ধ অবস্থাতেও বিদ্যুৎ টানে—যাকে 'স্ট্যান্ডবাই পাওয়ার' বলা হয়, এতে অযথাই বিদ্যুৎ খরচ হয়।
সবচেয়ে ভালো হয়, ছুটিতে বেড়াতে যাওয়ার আগে বাসার প্রতিটি ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতিই আনপ্লাগ করে রাখা। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, কিছু কিছু যন্ত্রপাতি আছে যেগুলো তুলনামূলকভাবে বেশি বিপজ্জনক বা বিদ্যুৎ-খরচকারী।
'গুড হাউসকিপিং ইনস্টিটিউটের হোম ইমপ্রুভমেন্ট ও আউটডোর ল্যাব'-এর বিশেষজ্ঞরা নিরাপত্তা ও জ্বালানি দক্ষতা-সম্পর্কিত পেশাদারদের সঙ্গে একযোগে এমনই কিছু যন্ত্রের একটি তালিকা তৈরি করেছেন, যেগুলো ছুটিতে যাওয়ার আগে অবশ্যই আনপ্লাগ করে রাখা উচিত।
ব্যাটারি চার্জার
গত দশকে লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারি ঘরে ঘরে ছড়িয়ে পড়েছে। ই-সাইকেল, পাওয়ার টুলস, ল্যাপটপসহ নানা ডিভাইসে এই ব্যাটারি ব্যবহার হয়। ছোট জায়গায় বেশি শক্তি ধারণ করার কারণে ব্যাটারিগুলো জনপ্রিয় হলেও, এগুলোতে আগুন লাগার ঝুঁকিও বেশি থাকে। বিশেষ করে যদি ব্যাটারিতে কোনো ক্ষতি থাকে বা দীর্ঘ সময় চার্জে রাখা হয়।
ন্যাশনাল ফায়ার প্রটেকশন অ্যাসোসিয়েশন (এনএফপিএ) এর মতে, রাতে ঘুমানোর সময়ও লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারি চার্জে রেখে দেওয়া ঠিক নয়। ব্যাটারি পুরো চার্জ হয়ে গেলে সঙ্গে সঙ্গে চার্জার থেকে খুলে ফেলা উচিত, যাতে অতিরিক্ত গরম হয়ে দুর্ঘটনা না ঘটে। বিশেষ করে আপনি বাড়িতে না থাকলে, চার্জার আর ব্যাটারি একসঙ্গে যুক্ত রাখা একেবারেই নিরাপদ নয়।
এনএফপিএ আরও পরামর্শ দেয়, ব্যাটারি যেন ঘরের স্বাভাবিক তাপমাত্রায় থাকে এবং আগুন লেগে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকা জিনিসগুলো থেকে দূরে রাখা হয়।
ছোট চার্জার যেমন ফোন বা ল্যাপটপের চার্জারও ব্যবহার না করলে আনপ্লাগ করে রাখা ভালো। এগুলো খুব একটা তাপ সৃষ্টি না করলেও দীর্ঘ সময় বিদ্যুৎ সংযোগে থাকার ফলে ডিভাইসের অভ্যন্তরীণ যন্ত্রাংশে চাপ পড়ে এবং দ্রুত নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
স্পেস হিটার
ন্যাশনাল ফায়ার প্রটেকশন অ্যাসোসিয়েশনের (এনএফপিএ) তথ্য অনুযায়ী, ঘরে আগুন লাগার অন্যতম প্রধান কারণ হলো হিটিং যন্ত্রপাতি—যার ফলে প্রতি বছর প্রায় ৪০,০০০টিরও বেশি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। আবার তার মধ্যে স্পেস হিটার কটি বড় ভূমিকা রাখে।
তাই স্পেস হিটার ব্যবহার না করলে সেটি অবশ্যই আনপ্লাগ করে রাখা জরুরি।
এনএফপিএ'র জ্যেষ্ঠ ইলেকট্রিক্যাল কনটেন্ট বিশেষজ্ঞ কোরি হ্যানাস বলেন, 'যেসব যন্ত্রপাতি তাপ উৎপন্ন করে আর ব্যবহার শেষে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয় না, সেগুলো বিদ্যুৎ সংযোগে লাগানো অবস্থায় থাকলে বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে।'

রান্নাঘরের ছোট ছোট ইলেকট্রনিক যন্ত্র:
টোস্টার, টোস্টার ওভেন, ইলেকট্রিক কেটলিসহ রান্নাঘরের অনেক ছোটখাটো ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতিই উচ্চ তাপ উৎপন্ন করে। ফলে বাসার বিদ্যুৎ লাইনে কোনো ত্রুটি বা শর্ট সার্কিট হলে এসব যন্ত্রের হিটিং এলিমেন্টে অতিরিক্ত ভোল্টেজ চলে যেতে পারে, যা আগুন লাগার ঝুঁকি বাড়ায়।
এ ছাড়া এসব যন্ত্রের ভেতরে জমে থাকা পাউরুটির গুড়ো, তেল বা অন্যান্য দাহ্য উপাদান আগুন লাগার সম্ভাবনাকে আরও বাড়িয়ে দেয়। তাই ছুটিতে যাওয়ার আগে এসব যন্ত্র অবশ্যই আনপ্লাগ করে রাখা উচিত।
হোম এন্টারটেইনমেন্ট সিস্টেম
লরেন্স বার্কলি ন্যাশনাল ল্যাবরেটরির এক গবেষণায় দেখা গেছে, ঘরের মোট বিদ্যুৎ খরচের ৫ থেকে ১০ শতাংশই হয় স্ট্যান্ডবাই পাওয়ারের মাধ্যমে—অর্থাৎ যেসব ডিভাইস বন্ধ অবস্থায় থেকেও বিদ্যুৎ টানে। এ দিক থেকে হোম এন্টারটেইনমেন্ট ডিভাইসগুলো সবচেয়ে বড় 'অপরাধী'।
বিশেষ করে ভিডিও গেমিং এর কনসোলগুলো—যেমন এক্সবক্স বা প্লে স্টেশন সবচেয়ে বেশি বিদ্যুৎ টানে, এগুলোর আধুনিক কনসোলে থাকে ভয়েস কন্ট্রোল, জেসচার সেন্সিং এবং ওয়্যারলেস কন্ট্রোলার সুবিধা, যা ডিভাইস বন্ধ থাকা সত্ত্বেও বিদ্যুৎ ব্যবহার করে।

তাই বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দেন, এই ডিভাইসগুলোর পাওয়ার-সেভিং সেটিং যেমন এক্সবক্সের 'এনার্জি সেভিং মোড' বা প্লে স্টেশনের 'রেস্ট মোড' চালু রাখার। তবে লম্বা ছুটিতে বাইরে গেলে কনসোলগুলো পুরোপুরি আনপ্লাগ করাই নিরাপদ।
আরও একটি দরকারী পরামর্শ হলো—গেম কনসোল, টিভি, মনিটর ইত্যাদি ডিভাইসগুলো একসঙ্গে সার্জ-প্রটেকশন পাওয়ার স্ট্রিপে সংযুক্ত রাখা। এতে একবারে সবকিছু বন্ধ করা যায়, এবং হঠাৎ ভোল্টেজ ওঠানামা, বজ্রপাত বা বিদ্যুতের ত্রুটি থেকেও যন্ত্রপাতি রক্ষা পায়।
চুল সাজানোর ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি
কার্লিং আয়রন বা কার্লিং ওয়ান্ড ব্যবহার করলে হয়তো আপনারও জীবনে একবার না একবার ভুলবশত চালু অবস্থায় রেখে যাওয়ার অভিজ্ঞতা আছে। তাই ব্যবহার শেষে এগুলো আনপ্লাগ করে রাখা সবচেয়ে নিরাপদ অভ্যাস।
একইভাবে, হেয়ার ড্রায়ারও ব্যবহার শেষে আনপ্লাগ করে রাখা উচিত। কারণ তার বা সংযোগে কোনো সমস্যা থাকলে আগুন লাগার আশঙ্কা থাকে।
এই যন্ত্রগুলো সাধারণত বাথরুমে ব্যবহার হয়, যেখানে জিএফসিআই আউটলেট থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
জিএফসিআই বা গ্রাউন্ড-ফল্ট সার্কিট-ইনটারাপ্টার হলো একটি নিরাপত্তা ব্যবস্থা, যা যন্ত্রপাতির তার ক্ষতিগ্রস্ত হলে বা মোটর অতিরিক্ত গরম হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। এর ফলে আগুন লাগা বা বৈদ্যুতিক শকের মতো দুর্ঘটনা রোধ করা যায়। রান্নাঘরেও এই ধরনের আউটলেট ব্যবহারের পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।