একনজরে ইরান: কত বড় দেশ, জনসংখ্যা কত, জাতিগত গঠন কেমন

১৩ জুন ইসরায়েলি হামলার পর মধ্যপ্রাচ্যের দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ ইরান আবারও আন্তর্জাতিক মনোযোগের কেন্দ্রে উঠে এসেছে।
উত্তরে কাস্পিয়ান সাগর থেকে দক্ষিণে ওমান উপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত ইরানের ভূ-প্রকৃতি যেমন বৈচিত্র্যময়, তেমনি এর ইতিহাসও সমৃদ্ধ। দেশটির রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ জলপথগুলোর সংযোগ—বিশেষ করে হরমুজ প্রণালি, যার মধ্য দিয়ে বিশ্বের মোট তেলের ২০ শতাংশ পরিবাহিত হয়।
ইরানের ইতিহাস হাজার হাজার বছরের পুরোনো। এটি বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন ও সংস্কৃতিসমৃদ্ধ দেশ। ইরান পুরো ইতিহাস জুড়েই ছিল একটি বসবাসযোগ্য নগরী ও প্রভাবশালী।
এই ভিজ্যুয়াল এক্সপ্লেইনারে আল জাজিরা ইরানের ভূগোল, প্রধান শহরগুলো, জনসংখ্যার গঠন ও জাতিগত বৈচিত্র্যের একটি সংক্ষিপ্ত চিত্র তুলে ধরেছে।

এক নজরে ইরান
৯ কোটি ২০ লাখ জনসংখ্যা নিয়ে ইরান বিশ্বের ১৭তম বৃহত্তম দেশ।
দেশটির নামমাত্র মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) ৪১৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা অর্থনীতির আকার অনুযায়ী ইরানকে বিশ্বের ৩৬তম স্থানে রেখেছে। ইরানে বেকারত্বের হার প্রায় ৭.২ শতাংশ।
দেশটির প্রাপ্তবয়স্কদের সাক্ষরতার হার ৮৯ শতাংশ, আর তরুণদের সাক্ষরতার হার প্রায় ৯৯ শতাংশ—যদিও এই হার গ্রামীণ ও শহরাঞ্চলের মধ্যে ভিন্নতা রয়েছে।
ইরান খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ। এটি বিশ্বের নবম বৃহত্তম তেল উৎপাদনকারী এবং তৃতীয় বৃহত্তম প্রাকৃতিক গ্যাস উৎপাদনকারী দেশ।

ইরানের আয়তন কত?
পশ্চিম এশিয়ায় অবস্থিত ইরান মধ্যপ্রাচ্যের দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ। সৌদি আরবের পরেই এর অবস্থান। এটি বিশ্বের ১৭তম বৃহত্তম দেশ, যার আয়তন প্রায় ১৬.৫ লাখ বর্গকিলোমিটার (৬৩৬,০০০ বর্গমাইল)।
ইরানের সাতটি দেশের সঙ্গে স্থলসীমা রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে দীর্ঘ সীমান্ত ইরাকের সঙ্গে। এরপর রয়েছে তুর্কমেনিস্তান, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, আজারবাইজান, তুরস্ক এবং আর্মেনিয়ার সঙ্গে।
ইরানের ভৌগোলিক আয়তন যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় এক-ষষ্ঠাংশ, যা প্রায় আলাস্কা অঙ্গরাজ্যের সমান।
এটি ইউরোপের এক-ষষ্ঠাংশের মতো, অস্ট্রেলিয়ার প্রায় এক-পঞ্চমাংশ, ভারতের অর্ধেক এবং ইসরায়েলের চেয়ে প্রায় ৮০ গুণ বড়।

ইরানের প্রধান জনবসতি অঞ্চল কোনগুলো?
ইরানের ৯২ মিলিয়ন জনসংখ্যার অধিকাংশই দেশের পশ্চিমাংশে বসবাস করে। সেখানে কঠিন পাহাড়ি ভূপ্রকৃতির সঙ্গে রয়েছে উর্বর উপত্যকা ও নদী অববাহিকা—যা ওই অঞ্চলে জনজীবন টিকিয়ে রাখে।
১৭৯৫ সাল থেকে রাজধানী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত তেহরান দেশটির সবচেয়ে বড় শহর, যার জনসংখ্যা ৯০ লাখ ৬০ হাজার। এটি আলবর্জ পর্বতমালার পাদদেশে অবস্থিত এবং এর ইতিহাস ৬ হাজার বছরেরও বেশি পুরোনো।
উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মাশহাদ ইরানের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর, যার জনসংখ্যা ৩০ লাখ ৪০ হাজার এবং এর ইতিহাস ১,২০০ বছরের বেশি পুরোনো। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র এবং এখানে অবস্থিত ইমাম রেজা দরগাহয় প্রতি বছর সারা বিশ্বের লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মানুষ এখানে আসেন।
ইরানের তৃতীয় বৃহত্তম শহর ইসফাহানে বসবাস করে প্রায় ২৩ লাখ মানুষ। শহরটির বয়স ২,৫০০ বছরের বেশি এবং এটি একসময় (১৫০১ থেকে ১৭২২ সাল পর্যন্ত) সাফাবি সাম্রাজ্যের রাজধানী ছিল। ইসফাহানে রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, এবং এটি বস্ত্রশিল্প, স্টিল, ম্যানুফ্যাকচারিং, পাশাপাশি পারমাণবিক ও মহাকাশ শিল্পের জন্য পরিচিত।
ইরানের অন্যান্য উল্লেখযোগ্য জনবহুল শহরগুলো হলো: শিরাজে ১৭ লাখ, তাবরিজে ১৭ লাখ, করাজে ১৬ লাখ, কুমে ১৪ লাখ, আহভাজে ১৩ লাখ মানুষ বসবাস করে।

জনসংখ্যার গঠন
জাতিসংঘ পরিসংখ্যান বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ইরানের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৬০ শতাংশের বয়স ৩৯ বছরের নিচে।
দেশটির গড় বয়স প্রায় ৩৩ থেকে ৩৪ বছর। আর মোট জনসংখ্যার প্রায় ৭৭ শতাংশ মানুষ শহরে বাস করে।
ইরানে সবচেয়ে বড় বয়সভিত্তিক গোষ্ঠী হলো ৩০–৩৪ এবং ৩৫–৩৯ বছর বয়সীরা—অর্থাৎ অধিকাংশ ইরানিই ১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লব (যার মাধ্যমে পাহলভি শাহ শাসন পতন ঘটে) পরবর্তী সময়ে জন্মগ্রহণ করেছে।
তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইরানে অর্থনৈতিক সংকটের কারণে অনেক পেশাজীবী দক্ষ মানুষ দেশত্যাগ করেছেন।

ইরানের জাতিগত গঠন কী?
ইরান জাতিগত ও সাংস্কৃতিক দিক থেকে অত্যন্ত বৈচিত্র্যময় একটি দেশ। দেশটির প্রায় ৬১ শতাংশ মানুষ পারস্যের, ১৬ শতাংশ আজারবাইজানের, ১০ শতাংশ কুর্দিস্তানের, ৬ শতাংশ লুর, ২ শতাংশ আরব, ২ শতাংশ বেলুচিস্তানের আর বাকি ২ শতাংশ তুরস্কের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মানুষ।
এছাড়া ধর্মীয় দিক থেকে ইরানের প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ শিয়া মুসলিম, যা দেশটির প্রধান ধর্মীয় সম্প্রদায়। সুন্নি মুসলিম ও অন্যান্য মুসলিম উপমতাদর্শী প্রায় ৯ শতাংশ। এছাড়া অন্য ধর্মের মধ্যে প্রায় ৩ লাখ বাহাই, প্রায় ৩ লাখ খ্রিষ্টান, ৩৫ হাজার জরথুষ্ট্রীয়, ২০ হাজার ইহুদি এবং ১০ হাজার সাবেইয়ান মান্দেইয়ান রয়েছেন।
এছাড়া সীমান্তবর্তী অঞ্চল কুর্দিস্তান, খুজেস্তান এবং সিস্তান-বেলুচিস্তানসহ আরও কিছু অঞ্চলের বিভিন্ন জাতিগত গোষ্ঠী ইরানের জাতিগত ও ধর্মীয় বৈচিত্র্য গঠনে এবং আঞ্চলিক রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
যদিও ফারসি ইরানের রাষ্ট্রভাষা, দেশজুড়ে বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন ভাষা প্রচলিত রয়েছে।