ইউক্রেনের ড্রোন হামলার প্রতিশোধ নেবেন পুতিন: ট্রাম্পের সতর্কবার্তা

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনের বড় ড্রোন হামলার জবাবে প্রতিক্রিয়া দেখাতে বাধ্য হবেন বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। খবর বিবিসি'র।
পুতিনের সঙ্গে ফোনালাপের পর ট্রাম্প বলেন, 'প্রেসিডেন্ট পুতিন স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, সাম্প্রতিক বিমানঘাঁটিতে হামলার জবাবে তিনি অবশ্যই পদক্ষেপ নেবেন।'
রাশিয়ার পক্ষ থেকে বুধবার রাত পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি। তবে মস্কো আগে থেকেই বলেছে, তাদের প্রতিক্রিয়ার জন্য সামরিক বিকল্প 'প্রস্তুত রাখা হয়েছে'।
ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানান, এক ঘণ্টার বেশি সময় ধরে পুতিনের সঙ্গে তার ফোনে কথা হয়েছে। তবে তিনি স্বীকার করেন, এতে রাশিয়া-ইউক্রেন শান্তি প্রতিষ্ঠায় 'তাৎক্ষণিক কোনো ফল' আসেনি।
রুশ বার্তা সংস্থা আরআইএ নোভোস্তির বরাতে জানা যায়, পুতিন ট্রাম্পকে জানিয়েছেন, ইউক্রেন আলোচনায় বাধা দিচ্ছে এবং কিয়েভের সরকার 'মূলত একটি সন্ত্রাসী সংগঠনে পরিণত হয়েছে'।
সংস্থাটি আরও জানায়, দুই নেতা 'দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতা পুনঃস্থাপনের সম্ভাবনা' নিয়ে আলোচনা করেন, যা তাদের মতে 'বিশাল সম্ভাবনাময়'।
গত ১ জুন রাশিয়ার কয়েকটি বিমানঘাঁটিতে ড্রোন হামলা চালায় ইউক্রেন। ওই হামলার পর এটি দুই নেতার মধ্যকার প্রথম ফোনালাপ।
রুশ প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা ইউরি উশাকভ জানান, ট্রাম্প পুতিনকে বলেছেন, হামলার আগেই যুক্তরাষ্ট্রকে কোনো সতর্কতা দেওয়া হয়নি।
এদিকে, ইউক্রেনের কৌশলগত শিল্পমন্ত্রী ইউরি সাক বিবিসির রেডিও ৪-কে বলেন, তারা আশা করেছিলেন যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার 'অবিরাম ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা' মোকাবিলায় 'আরও নিষেধাজ্ঞা ও চাপ' দেবে।
গত সপ্তাহে ট্রাম্প পুতিনকে শান্তি আলোচনার জন্য দুই সপ্তাহের সময়সীমা দিয়েছিলেন। তিনি হুঁশিয়ারি দেন, পুতিন তাকে প্রতারণা করলে যুক্তরাষ্ট্রের রুশনীতি পরিবর্তন হবে।
২৬ মে ট্রাম্প বলেছিলেন, পুতিন 'সম্পূর্ণ উন্মাদ' হয়ে গেছেন এবং 'আগুন নিয়ে খেলছেন', কারণ রাশিয়া ইউক্রেনের শহরগুলোতে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা বাড়িয়েছে, যেখানে বহু বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছেন।
তবে বুধবার ট্রাম্প তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পোস্টে আগের মন্তব্য বা সময়সীমার কথা উল্লেখ করেননি।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এক্স-এ লিখেছেন, 'রাশিয়ার সঙ্গে বিভিন্ন পর্যায়ে অনেক আলোচনা হয়েছে, কিন্তু কোনোটাই নির্ভরযোগ্য শান্তি বা যুদ্ধ বন্ধ করতে পারেনি।'
তিনি আরও লেখেন, 'বিশ্ব যদি পুতিনের হুমকিতে দুর্বল প্রতিক্রিয়া দেখায়, তবে তিনি সেটাকে নিজের কাজের প্রতি চোখ বন্ধ করে দেওয়ার প্রস্তুতি হিসেবে নেবেন।'
এদিকে, ইউক্রেনের প্রতিনিধি দল, যাদের মধ্যে ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী ইউলিয়া স্বিরিডেঙ্কো এবং প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ের প্রধান আন্দ্রেই ইয়েরমাক রয়েছেন, বুধবার ওয়াশিংটনে মার্কিন সিনেটরদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে অস্ত্র কেনা ও যুদ্ধ বন্ধের চেষ্টার বিষয়গুলো আলোচিত হয়।
ইয়েরমাক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানান, তারা 'প্রতিরক্ষা সহায়তা, যুদ্ধ পরিস্থিতি, রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা এবং পুনর্গঠন তহবিল' নিয়ে আলোচনা করবেন।
এই উদ্যোগ ইস্তাম্বুলে দ্বিতীয় দফা শান্তি আলোচনা বড় অগ্রগতি ছাড়াই শেষ হওয়ার কয়েক দিনের মধ্যেই এলো। যদিও আলোচনায় বন্দি বিনিময়ের বিষয়ে একটি সমঝোতায় পৌঁছানো গেছে।
ইউক্রেনীয় আলোচকরা জানান, রাশিয়া 'নিরপেক্ষ ও শর্তহীন যুদ্ধবিরতি' প্রত্যাখ্যান করেছে, যা কিয়েভ ও তাদের পশ্চিমা মিত্রদের প্রধান দাবি।
রুশ প্রতিনিধি দল জানায়, তারা ইউক্রেন সীমান্তের 'কিছু অংশে' কয়েক দিনের জন্য যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়েছে, তবে বিস্তারিত জানায়নি।
ট্রাম্প আগেও বলেছেন, যুদ্ধ চললেও দুই পক্ষ অগ্রগতি করছে বলে তিনি বিশ্বাস করেন।
এদিন, পুতিনের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন পোপ লিও চতুর্দশও। ভ্যাটিকান জানিয়েছে, আলোচনায় ইউক্রেন যুদ্ধের শান্তিপূর্ণ সমাধানে 'বিশেষ মনোযোগ' দেওয়া হয়েছে।
ফোনালাপে ট্রাম্প ও পুতিন ইরান নিয়েও আলোচনা করেন। ট্রাম্প বলেন, তারা দুজনই 'ইরান পারমাণবিক অস্ত্র পাবে না' এই বিষয়ে একমত।
যুক্তরাষ্ট্র ইরানকে সব ধরনের সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম উৎপাদন বন্ধ করার প্রস্তাব দিয়েছে, যেটি পারমাণবিক অস্ত্র তৈরিতেও ব্যবহার করা যায়। এর পরিবর্তে আঞ্চলিক একটি কনসোর্টিয়ামের মাধ্যমে জ্বালানি সংগ্রহের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
গত শনিবার আলোচনায় এই প্রস্তাব দেওয়া হলেও ইরান এখনও কোনো উত্তর দেয়নি।
ট্রাম্প জানান, পুতিন 'ইরানের সঙ্গে আলোচনা করবেন এবং দ্রুত সমাধানে সহায়তা করতে পারেন'।
ট্রাম্প আরও লেখেন, 'ইরান এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করছে। খুব শিগগিরই আমাদের একটি স্পষ্ট উত্তর দরকার।'
অন্যদিকে, ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি মার্কিন প্রস্তাবের নিন্দা জানিয়ে বলেন, 'এটি ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধি বন্ধ করতে পারবে না।'