হেগের কারাগার থেকেই নিজ শহরের মেয়র নির্বাচিত হলেন ফিলিপাইনের সাবেক প্রেসিডেন্ট

নেদারল্যান্ডের হেগের কারাগার থেকেই ফিলিপাইনের দাভাও শহরের মেয়র নির্বাচিত হলেন দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতার্তে। খবর বিবিসির।
মাদকের বিরুদ্ধে লড়াই করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন রদ্রিগো দুতার্তে। কিন্তু সেই লড়াই চালাতে গিয়ে মানবাধিকার লঙ্ঘন করায় তাকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত। বর্তমানে তিনি হেগের একটি কারাগারে বন্দী আছেন।
এদিকে রদ্রিগো দুতার্তের তার দুই বিশ্বস্ত সহকারী ক্রিস্টোফার 'বং' গো এবং এক সময়ের পুলিশ প্রধান রোনাল্ড 'বাটো' দেলা রোসাও আবারও সিনেট সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন।
তবে এই মধ্যবর্তী নির্বাচনে কিছু অপ্রত্যাশিত ফলাফলও দেখা গেছে।
দুতার্তের কন্যা, বর্তমান ভাইস-প্রেসিডেন্ট সারা দুতার্তের ভাগ্য এখনো অনিশ্চিত, কারণ ভোট গণনা এখনও চলমান।
২০২৮ সালের নির্বাচনে যাকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ভাবা হচ্ছিল সেই সারা দুতার্তে আজীবনের জন্য রাজনীতি থেকে নিষিদ্ধ হতে পারেন। কারণ সিনেট সদস্যদের নিয়ে গঠিত জুরি তাকে অভিশংসিত করার পক্ষে ভোট দিতে পারে।
কারণ, স্থানীয় প্রতিনিধি থেকে শুরু করে গভর্নর ও সিনেটর পর্যন্ত ১৮ হাজার পদে অনুষ্ঠিত এ মধ্যবর্তী নির্বাচনে সারার একসময়ের মিত্র বর্তমান প্রেসিডেন্ট ফার্দিনান্দ 'বংবং' মারকোস জুনিয়র ও তার সমর্থকরাই এখন সারার প্রতিপক্ষ।
দুতার্তে ও মারকোস দুই রাজনৈতিক পরিবারকে কেন্দ্র করে দাঁড়িয়ে থাকা প্রার্থীরা একে অপরের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। দুতার্তে শিবিরকে সিনেটে অভিশংসন এড়াতে হলে ৯টি ভোট নিশ্চিত করতে হবে।
ভোটের ৬৮ শতাংশের একটি অনানুষ্ঠানিক গণনা অনুযায়ী এখনো স্পষ্ট নয় যে পরিস্থিতি কোন দিকে যাচ্ছে।
মারকোস জুনিয়রের সমর্থনপুষ্ট প্রার্থীদের ফলাফল জনমত জরিপের পূর্বাভাস অনুযায়ী হচ্ছে না। তার পছন্দের প্রার্থীদের মধ্যে কেবল টেলিভিশন উপস্থাপক আারউইন তুলফো অনানুষ্ঠানিক গণনায় শীর্ষ পাঁচে স্থান পেয়েছেন।
বাকি শীর্ষ পাঁচে রয়েছেন দুতার্তের দুই বিশ্বস্ত সহকারী ও দুইজন স্বতন্ত্র প্রার্থী, আর বাকি সাতটি সিনেট আসনের জন্য হাড্ডাহাড্ডি লড়াই চলছে।
এদিকে, রাজনৈতিক সংকটের মধ্যেও ভাইস-প্রেসিডেন্ট সারা দুতার্তে এখনো ব্যাপক জনপ্রিয় এবং প্রেসিডেন্ট মারকোস ২০২৮ সালে নিজের মেয়াদ শেষ করে বিদায় নেবেন।
এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, দুতার্তে পরিবার দেশটির দক্ষিণাঞ্চলে তাদের ক্ষমতা ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে।
রদ্রিগো দুতার্তের মেয়র পদে জয়লাভ করা ছিল ব্যাপকভাবে প্রত্যাশিত, কারণ ১৯৮০-এর দশকের মাঝামাঝি থেকেই এই পদটি তাদের পরিবারের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
রদ্রিগো দুতার্তে নিজে ২০১৬ সালে দেশের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার আগে দুই দশক ধরে দক্ষিণের বিস্তীর্ণ মহানগরী দাভাও শহরের নেতৃত্ব দিয়েছেন। সেখানেই তিনি তার মাদকবিরোধী অভিযান শুরু করেন।
বর্তমান মেয়র, রদ্রিগো দুতার্তের ছোট ছেলে সেবাস্তিয়ান এবার ডেপুটি-মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। অর্থাৎ বাবার অনুপস্থিতিতে তিনিই তার দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। দুতার্তের আরেক ছেলে পাওলো আবারও সংসদ সদস্য হিসেবে পুনর্নির্বাচিত হয়েছেন। তার নাতি-নাতনিরাও স্থানীয় পদে বিজয়ী হয়েছেন।
দুতার্তের নাম ব্যালটে ছিল, কারণ তিনি এখনো কোনো অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হননি।
দক্ষিণের দাভাও শহরে রাজনৈতিক ভিত্তি ধরে রাখা দুতার্তে পরিবারের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই এলাকাতেই তারা সবচেয়ে বেশি ভোট পান।