গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য আলোচনায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির কথা জানাল চীন ও যুক্তরাষ্ট্র

সুইজারল্যান্ডে দুই দেশের মধ্যকার বাণিজ্য আলোচনায় অগ্রগতি হয়েছে বলে জানিয়েছে চীন ও যুক্তরাষ্ট্র। খবর বিবিসি'র।
মার্কিন ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট এই আলোচনাকে 'গঠনমূলক ও ফলপ্রসূ' বলেছেন। চীনের ভাইস-প্রিমিয়ার হে লিফেং আলোচনাকে 'গভীর' ও 'উন্মুক্ত' বলেছেন।
দুই দেশের প্রতিনিধিরা পুরো সপ্তাহজুড়ে গোপন বৈঠকে অংশ নেন। জানুয়ারিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনা পণ্যের ওপর বড় অঙ্কের শুল্ক আরোপ করার পর এটি ছিল দুই দেশের মধ্যকার প্রথম মুখোমুখি বৈঠক।
ট্রাম্প চীনা পণ্যের ওপর ১৪৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছিলেন। এর পাল্টা জবাবে বেইজিং কিছু মার্কিন পণ্যের ওপর ১২৫ শতাংশ শুল্ক বসায়।
এই বিশাল শুল্ক আরোপের ফলে বিশ্ববাজারে অস্থিরতা দেখা দেয় এবং বৈশ্বিক মন্দার আশঙ্কা তৈরি হয়।
আলোচনার পূর্ণ বিবরণ সোমবার যৌথভাবে প্রকাশ করা হবে।
একজন বাণিজ্য বিশেষজ্ঞ বিবিসিকে জানিয়েছেন, এই ঘোষণায় শুল্ক কমানোর বিষয়টি থাকতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য দপ্তরের সাবেক আন্ডারসেক্রেটারি ফ্র্যাঙ্ক ল্যাভিন বলেন, তিনি আশা করছেন দুই দেশ শুল্ক কমাবে; যদিও তা 'ইতিহাসের তুলনায় অনেক বেশি' থাকবে।
তবে হিনরিখ ফাউন্ডেশনের ট্রেড পলিসি প্রধান ডেবোরাহ এলমস ততটা আশাবাদী নন।
তিনি বলেন, 'এই পাল্টা শুল্কের বিষয়ে আলোচনা হতে পারে, তবে সম্ভবত তেমন কিছু হবে না। আমার ধারণা, মূলত আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার একটা চুক্তিই হবে।'
দুই দিনের আলোচনা শেষে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি অ্যাম্বাসেডর জেমিসন গ্রিয়ার বলেন, 'চীনা অংশীদারদের সঙ্গে যে চুক্তি হয়েছে, তা যুক্তরাষ্ট্রের ১.২ ট্রিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে সহায়তা করবে।'
বেসেন্ট বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও চীন বাণিজ্যযুদ্ধ কমাতে 'গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি' অর্জন করেছে।
ভাইস-প্রিমিয়ার হে বলেন, এই আলোচনা শুধু দুই দেশের জন্য নয়, বৈশ্বিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের জন্যও তাৎপর্যপূর্ণ।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, তিনি জেনেভায় সাংবাদিকদের জানিয়েছেন যে এই বৈঠকগুলো ছিল 'গঠনমূলক'।
বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার ইন্সপেক্টর জেনারেল এনগোজি ওকোনজো-ইওয়ালা এই আলোচনাকে বলেছেন 'একটি বড় অগ্রগতি'।
তিনি বলেন, 'আমি দুই দেশকে আহ্বান জানাই এই গতি বজায় রেখে এমন বাস্তবসম্মত সমাধান খুঁজে বের করতে, যা উত্তেজনা প্রশমিত করবে, নির্ভরযোগ্যতা ফিরিয়ে আনবে এবং বহুপক্ষীয় বাণিজ্য ব্যবস্থার প্রতি আস্থা পুনর্গঠনে সাহায্য করবে।'
শনিবার আলোচনার প্রথম দিনের পর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছিলেন, দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে এটি ছিল 'সম্পূর্ণ নতুন সূচনা'।
ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্টে আলোচনাকে 'খুবই ভালো' বলে উল্লেখ করেছেন এবং বলেছেন, পরিবর্তন এসেছে 'বন্ধুত্বপূর্ণ কিন্তু গঠনমূলক' আলোচনার মাধ্যমে।
তিনি আরও বলেন, 'আমরা চাই—চীন ও যুক্তরাষ্ট্র উভয়ের কল্যাণে—চীন যেন মার্কিন ব্যবসার জন্য উন্মুক্ত হয়। দারুণ অগ্রগতি হয়েছে!!!'
শুক্রবার আলোচনার শুরু হওয়ার আগে হোয়াইট হাউজের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট বলেন, ওয়াশিংটন একতরফাভাবে শুল্ক কমাবে না। চীনকেও কিছু ছাড় দিতে হবে।
দুই পক্ষই বৈঠকের আগে নানা ধরনের হুঁশিয়ারি দেয়। বেইজিং জানায়, যুক্তরাষ্ট্রকে অবশ্যই শুল্ক কমাতে হবে। অন্যদিকে বেসেন্ট বলেন, আলোচনার মূল লক্ষ্য 'উত্তেজনা প্রশমিত করা'; এটি কোনো 'বড় বাণিজ্য চুক্তি' নয়।
চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানায়, বিশ্বের প্রত্যাশা, নিজেদের স্বার্থ এবং মার্কিন ব্যবসায়ীদের আবেদন বিবেচনা করে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় বসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বেইজিং।
গত মাসে বিবিসি এক প্রতিবেদনে জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কের কারণে চীনা রপ্তানিকারকেরা বিপাকে পড়েছে। 'সর্বো টেকনোলজি' নামে একটি প্রতিষ্ঠান জানায়, তাদের অর্ধেক পণ্য সাধারণত যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রি হতো। এখন সেগুলো চীনের একটি গুদামে বাক্সবন্দি অবস্থায় পড়ে আছে।
এদিকে, বছরের প্রথম তিন মাসে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি কিছুটা কমে এসেছে। হিসাব অনুযায়ী, এটি বছরে ০.৩ শতাংশ হারে কমেছে। তখন অনেক মার্কিন কোম্পানি দ্রুত পণ্য আমদানি করছিল।
গত মাসে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প 'লিবারেশন ডে' ঘোষণার দিনে সব আমদানির ওপর সাধারণ শুল্ক আরোপ করেন, যার ফলে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্যযুদ্ধ আরও বেড়ে যায়।
হোয়াইট হাউজ জানায়, প্রায় ৬০টি বাণিজ্য অংশীদারকে [যাদের 'সবচেয়ে বড় অপরাধী' হিসেবে উল্লেখ করা হয়] অন্যদের তুলনায় বেশি শুল্কের আওতায় আনা হয়েছে। এই তালিকায় চীন ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন অন্তর্ভুক্ত ছিল।
ট্রাম্প বলেন, এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি বছরের পর বছর ধরে চলা অন্যায্য বাণিজ্যনীতির জবাব।
তিনি আরও ঘোষণা করেন, যুক্তরাষ্ট্রে আসা সব ধাতু (স্টিল ও অ্যালুমিনিয়াম) এবং গাড়ি ও গাড়ির যন্ত্রাংশের ওপর ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক আরোপ করা হবে।
গত সপ্তাহে ঘোষণা দেওয়া হয়, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য একটি চুক্তিতে পৌঁছেছে। এর ফলে, যুক্তরাজ্য ১ লাখ গাড়ি পর্যন্ত রপ্তানি করলে সেগুলোর ওপর শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হবে। গত বছর যুক্তরাজ্য ঠিক এই সংখ্যক গাড়ি যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করেছিল।
যুক্তরাষ্ট্রে যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে বড় রপ্তানি পণ্য হলো গাড়ি, যার বাজার মূল্য গত বছর ছিল প্রায় ৯ বিলিয়ন পাউন্ড।