নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী সত্য উন্মোচন করায় বিভিন্ন জায়গায় আমাদের বাধা দেওয়া হচ্ছে: নাহিদ

কক্সবাজারে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর দেওয়া বক্তব্যের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী সত্য উন্মোচন করেছেন। এজন্য বিভিন্ন জায়গায় তারা বাধার শিকার হচ্ছেন।
রোববার (২০ জুলাই) রাতে চট্টগ্রাম নগরীর দুই নম্বর গেট এলাকায় অনুষ্ঠিত এনসিপির 'দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা' কর্মসূচির অংশ হিসেবে এক সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন।
নাহিদ বলেন, আপনারা দেখেছেন— জাতীয় নাগরিক পার্টির বিপ্লবী মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী সত্য উন্মোচন করেছেন। সেই সত্য উন্মোচন করার জন্য বিভিন্ন জায়গায় আমাদের বাধা দেওয়া হচ্ছে। বাঁশখালীতে আমাদের সংগঠকের মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আমরা বলেছিলাম, বাধা দিলে লড়াই হবে এবং আমরা এই লড়াই জিতব। বাধা দিয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির তারুণ্যের শক্তি, চট্টগ্রামের শক্তিকে কোনোভাবেই থামানো যাবে না।
তিনি বলেন, দেশের অর্থনীতি ও বাণিজ্যের লাইফলাইন হচ্ছে এই শহর। কিন্তু আজ নানা ষড়যন্ত্র চলছে, পরাশক্তির চোখ রয়েছে চট্টগ্রামের দিকে। আমরা হুঁশিয়ার করে দিতে চাই, চট্টগ্রামের দিকে যদি কেউ চোখ তোলে, সারাদেশ বিদ্রোহ ঘোষণা করবে।
চট্টগ্রাম নগরীর অপরিকল্পিত ব্যবস্থাপনার সমালোচনা করে অন্তর্বর্তী সরকারের সাবেক এই উপদেষ্টা বলেন, এই ঐতিহাসিক নগরী লুটেরা ও মাফিয়াদের কারণে ধ্বংসের পথে। পানি সংকটসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত। চট্টগ্রামকে নতুন করে সাজাতে হবে। আমরা নতুন চট্টগ্রাম, নতুন বাংলাদেশ দেখতে চাই। চট্টগ্রামকে নতুন অর্থনৈতিক জোনে পরিণত করতে হবে, দেশের নৌশক্তি ও সমুদ্রশক্তিকে শক্তিশালী করতে হলে চট্টগ্রামকে শক্তিশালী করা ছাড়া উপায় নেই।
তিনি বলেন, চট্টগ্রাম কোনো গুটি কয়েক পরিবারের হবে না, এটা হবে জনগণের চট্টগ্রাম। পাহাড়ি, বিহারী, হিন্দু, মুসলমান—সব জনগোষ্ঠীর অধিকার ও মর্যাদা রক্ষা করতে হবে। চট্টগ্রামকে বহু ভাষা ও বহু সংস্কৃতির নগর হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
নতুন বাংলাদেশে লুটপাটের রাজনীতি দেখতে চাই না: আখতার হোসেন
সমাবেশে এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, 'আমাদের লড়াই সেকেন্ড রিপাবলিক বা দ্বিতীয় প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লড়াই। নতুন বাংলাদেশ গড়তে চাই। নতুন বাংলাদেশে লুটপাটের রাজনীতি দেখতে চাই না। রাস্তা-ঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট, বিল্ডিং দেখিয়ে বিদেশে টাকা পাচার করা হয়েছে— মানুষ এসবের জবাব চায়। নতুন বাংলাদেশে প্রতিটি প্রকল্প, প্রতিটি পয়সার হিসাব জনগণের কাছে খোলাসা করতে হবে।
তিনি বলেন, দীর্ঘসময় নাগরিকদের মর্যাদা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। থানায়, সচিবালয়ে, শিক্ষাবোর্ডে, এনআইডি কার্ড সংশোধন করতে, শিক্ষাভবনে গেলে মানুষ কাঙ্ক্ষিত সেবা পায় না, হয়রানির শিকার হয়। নতুন বাংলাদেশে এগুলো থাকবে না। জনপ্রশাসন, স্থানীয় সরকার, পুলিশে মৌলিক সংস্কার করতে হবে। বাংলাদেশে সংস্কার ও বিচারের প্রয়োজন আগে।
স্বৈরাচারের পতন ঘটাতে পেরেছি, কিন্তু সফলভাবে রাষ্ট্র গঠন করতে পারিনি: হাসনাত
এনসিপির মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, 'ঢাকায় ১৬ জুলাই প্রথম প্রতিরোধ হয়েছে। চট্টগ্রামে এর একদিন আগেই ছাত্রলীগেকে প্রতিরোধ করেছিলেন ছাত্র-জনতা। চট্টগ্রাম প্রতিরোধে শহর, লড়াইয়ে শহর। আমরা প্রতিটি উপজেলায় গিয়েছি। আমরা সফলভাবে স্বৈরাচারে পতন ঘটাতে পেরেছি। কিন্তু সফলভাবে রাষ্ট্র গঠন করতে পারিনি।
তিনি বলেন, আগে যারা দেশ শাসন করেছেন, তারা জানতেন ভারত, আমেরিকা বা লন্ডন পালাবেন। এ কারণে তারা সেকেন্ড, থার্ড হোম বানিয়েছেন। আমরা যারা বাংলাদেশে থাকব, আমাদেরকেই এই দেশ গড়তে হবে।
এর আগে সকালে চট্টগ্রাম নগরীর হোটেল সৈকতে শহীদ পরিবারের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেছিলেন এনসিপির নেতৃবৃন্দ। এরপর পার্বত্য রাঙামাটিতে বিকেলে পথসভায় অংশ নেন তারা। সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম নগরীর বহাদ্দারহাট থেকে মুরাদপুর হয়ে দুই নম্বর গেটে বিপ্লব উদ্যানে পদযাত্রার সমাপ্ত করে সমাবেশ করা হয়। সভার শুরুতে কবিতা আবৃতি করেন এনসিপির কেন্দ্রীয় সদস্য জাওয়াদ করিম।
এনসিপির কর্মসূচিতে আরও উপস্থিত ছিলেন নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা, যুগ্ম আহ্বায়ক তাসনূভা জাবীন, যুব শক্তির আহ্বায়ক মো. তারিকুল ইসলাম প্রমুখ।
এনসিপি উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলমের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরো বক্তব্য দেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব নাহিদা সরওয়ার নিভা, যুগ্ম আহ্বায়ক হাসান আলী, যুগ্ম সদস্য সচিব মীর আরশাদুল হক ও সাগুপ্তা বুশরা মিশমা, যুগ্ম মুখ্য সংগঠক জোবাইরুল হাসান আরিফ ও ইমন সৈয়দ, জাতীয় যুব শক্তির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট তারিকুল ইসলাম প্রমুখ।
আরও উপস্থিত ছিলেন, দলের মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা, যুগ্ম আহ্বায়ক তাসনূভা জাবীন প্রমুখ।
উল্লেখ্য, গতকাল শনিবার কক্সবাজারে এনসিপির পথসভায় নাসীরুদ্দীন বলেছিলেন, 'আগে নারায়ণগঞ্জে বিখ্যাত গডফাদার শামীম ওসমান ছিল। এখন শুনছি কক্সবাজারের নব্য গডফাদার শিলং থেকে এসেছে। ঘের দখল করছে, মানুষের জায়গাজমি দখল করছে। চাঁদাবাজি দখল করছে। আবার নাকি সে সংস্কার বোঝে না।'
নাসীরুদ্দীনের এ বক্তব্যের পর কক্সবাজারে তীব্র প্রতিক্রিয়া শুরু হয় বিএনপির নেতা-কর্মীদের মধ্যে। এ ঘটনায় কক্সবাজারের চকরিয়ায় এনসিপির পথসভা মঞ্চ ভাঙচুর করেন বিএনপি ও ছাত্রদলের ক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা।
বিএনপির নেতা-কর্মীরা বলেন, নাসীরুদ্দীন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদকে নিয়ে আপত্তিকর বক্তব্য দিয়েছেন। এটা বিএনপির নেতা-কর্মীদের হৃদয়ে আঘাত করেছে।