কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভে গ্রেপ্তার অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী

নিউইয়র্কের কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটির মূল গ্রন্থাগার দখল করে নেয়া শিক্ষার্থীদের বুধবার গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে শুরু হওয়া আন্দোলনের মধ্যে এটি অন্যতম বড় একটি ক্যাম্পাসভিত্তিক বিক্ষোভ।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, গ্রন্থাগারের দ্বিতীয় তলায় অবস্থান নেওয়া প্রায় ৪০ থেকে ৫০ শিক্ষার্থীকে প্লাস্টিকের হ্যান্ডকাফ দিয়ে বেঁধে নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগের (এনওয়াইপিডি) ভ্যানে তুলে নেওয়া হয়। এসময় ছয়তলা ভবনজুড়ে তল্লাশি চালিয়ে বাকি অবস্থানকারীদেরও সরিয়ে দেয় পুলিশ।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অনুরোধেই পুলিশ ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে। তারা জানায়, শিক্ষার্থীরা লাইব্রেরির অংশ বিশেষ দখল করে আইন লঙ্ঘন করেছেন। সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, মুখোশ পরা শিক্ষার্থীরা ঝাড়বাতির নিচে দাঁড়িয়ে টেবিলের ওপর থেকে 'স্ট্রাইক ফর গাজা' ও 'লিবারেটেড জোন' লেখা ব্যানার উড়াচ্ছেন, ড্রাম বাজাচ্ছেন।
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এর আগেও কলাম্বিয়ায় ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভের কড়া সমালোচনা করে একে 'ইহুদিবিদ্বেষমূলক' বলে আখ্যা দেন এবং বলেন, এসব ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় ইহুদি শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে।
তবে শিক্ষার্থীরা, যাদের মধ্যে ইহুদি সংগঠকেরাও রয়েছেন, পাল্টা যুক্তি তুলে বলেন— ট্রাম্প ও তার প্রো-ইসরায়েল অবস্থানের রাজনীতিকরা উদ্দেশ্যমূলকভাবে ফিলিস্তিনপন্থী অবস্থানকে ইহুদিবিদ্বেষের সঙ্গে গুলিয়ে দিচ্ছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদ এখন ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে একটি বিতর্কিত আলোচনায় জড়িত। কারণ, মার্চে হোয়াইট হাউস কলাম্বিয়ার বৈজ্ঞানিক গবেষণার জন্য বরাদ্দকৃত শত শত মিলিয়ন ডলারের অনুদান বাতিল ঘোষণা করে। বিশ্ববিদ্যালয় বলছে, তারা ক্যাম্পাসে ইহুদিবিদ্বেষ ও অন্য যে কোনো বিদ্বেষমূলক আচরণের বিরুদ্ধে কাজ করছে। একইসঙ্গে তারা 'একাডেমিক স্বাধীনতায়' হস্তক্ষেপ নিয়ে নাগরিক অধিকার সংগঠনগুলোর অভিযোগ প্রতিহত করার চেষ্টাও করছে।
বুধবার রাতে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় জানায়, 'ভবন সুরক্ষার' স্বার্থে এনওয়াইপিডি-র সহায়তা চাওয়া হয়েছিল। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই জন নিরাপত্তাকর্মী আহত হন।
এনওয়াইপিডি জানায়, লাইব্রেরিতে অবৈধভাবে প্রবেশ করা বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যদিও তারা নির্দিষ্ট সংখ্যা জানায়নি।
নিউইয়র্কের গভর্নর ক্যাথি হোকুল বলেন, 'শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের অধিকার সকলের রয়েছে। কিন্তু সহিংসতা, ভাঙচুর বা সম্পত্তি ধ্বংস কখনই গ্রহণযোগ্য নয়।'
পুলিশ আসার আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তাকর্মীরা লাইব্রেরির সামনের দরজা বন্ধ করে দেয়। এতে আরও শিক্ষার্থীর প্রবেশ বন্ধ হয়ে যায় এবং বাইরে কিছু সময়ের জন্য ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়। এক শিক্ষার্থী আহত হন এবং আরেকজনকে স্ট্রেচারে করে বের করে নিয়ে যেতে দেখা যায়।
লাইব্রেরিতে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি হলে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে রাস্তায় জড়ো হন।
এক ছাত্র সংগঠন অভিযোগ করে, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা বাহিনী প্রতিবাদকারীদের ওপর 'আক্রমণ' চালিয়েছে। তারা এ-ও স্বীকার করে, কিছু শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে আইডি দেখাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
'কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটি অ্যাপারথেইড ডিভেস্ট' নামের একটি জোট বুধবার আবারও তাদের পুরনো দাবি তোলে— বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৪ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলারের তহবিল যেন অস্ত্র প্রস্তুতকারী এবং ইসরায়েলি দখলদারতাকে সমর্থনকারী প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ না করে।
এর আগে সোমবারও ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ভবন দখল করেন শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবি, ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর সঙ্গে বোয়িং কোম্পানির চুক্তির কারণে বিশ্ববিদ্যালয় যেন প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে। সেখানে ৩৪ জনকে গ্রেপ্তার করে বিশ্ববিদ্যালয়, যাদের মধ্যে ২১ জনকে সাময়িক বরখাস্ত করে ক্যাম্পাসে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।
২০২৩ সালে গাজায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটি যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ইসরায়েলবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রে রয়েছে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প এও ঘোষণা দিয়েছেন, যেসব আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ফিলিস্তিনপন্থী আন্দোলনে যুক্ত, তাদের যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কার করা হবে, কারণ তারা মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির জন্য হুমকি।
লাইব্রেরি দখলকারী আন্দোলনকারীরা আরও দাবি তুলেছেন— ফিলিস্তিনি অধিকারকর্মী ও কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েট ছাত্র মাহমুদ খলিলের মুক্তি দিতে হবে। তিনি এখনো লুইজিয়ানার একটি অভিবাসন আটক কেন্দ্রে বন্দি রয়েছেন। তাকে ট্রাম্প প্রশাসন যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কারের উদ্যোগ নিয়েছে।