সোনার প্রতি এশীয়দের প্রেম এখনও অটুট কেন?

ভারতের সবচেয়ে বড় স্বর্ণ বিক্রেতা তানিস্ক। মুম্বাইয়ে তানিস্কের একটি শাখায় বাইরে ঝুলতে থাকা সাইন বোর্ডে লেখা, 'সোনার দামের ঊর্ধ্বগতিতে বিয়ের গয়না কেনা থেমে গেছে?' সেখানে আরও লেখা আছে, 'এবার স্বপ্ন পূরণে কিছুই দিতে হবে না'। তারা তাদের মার্কেটিং স্ট্রাটেজির অংশ হিসেবে 'বিনিময় উৎসব' পালন করছে। তারা তার ক্রেতাদের পুরোনো স্বর্ণের গয়নার বিনিময়ে নতুন গয়না নিতে অফার করছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কারোপের ঘোষণার সময়ই সোনার দামের লাগাম ছিড়ে গেছে। সেসময় প্রতি ট্রয় আউন্স স্বর্ণের দাম বেড়ে দাঁড়ায় ৩,১৬৬ মার্কিন ডলার―যা ট্রাম্পের অভিষেকের সময়ের দামের চেয়ে ১৭.৪ শতাংশ বেশি। এরপর গত ১১ এপ্রিলে স্বর্ণের দাম আরেক দফা বেড়ে দাঁড়ায় ৩,২০০ মার্কিন ডলার।
সোনার দাম আকাশছোঁয়া হলেও, মানুষের আগ্রহ কিন্তু কমেনি। ২০২৪ সালে সোনার দাম ৪০ বার রেকর্ড ভেঙেছে, তবুও ভারতে এর চাহিদা বেশ স্থিতিশীল থেকেছে।
ব্রোকার কোম্পানি কোটাক সিকিউরিটিজের অনিন্দ্য ব্যানার্জি দাবি করেন, স্বর্ণের দাম কত বেশি সেটি মুখ্য বিষয় নয়। বরং দাম কতটা স্থির আছে, সেটাই গুরুত্বপূর্ণ। তার ভাষায়, "দাম যদি একই জায়গায় স্থির থাকে, তাহলে মানুষ আবার কিনতে শুরু করবে।"
ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের তথ্য অনুসারে, ভারতীয়রা এখনও 'প্রয়োজনীয়তার ভিত্তিতে' বিশেষ করে বিয়ে বা বিশেষ অনুষ্ঠানের জন্য স্বর্ণ কিনছে।
স্বর্ণের দাম বেশি হওয়ায় তারা তানিস্কের দেওয়া অফারগুলোর মতো সুবিধা লুফে নিচ্ছে। এছাড়া অনেকের মধ্যেই এখন স্বর্ণ জামানত রেখে অর্থ ঋণ নেওয়ার প্রবণতা বাড়ছে।
এশিয়ার দেশগুলো সোনার সবচেয়ে বড় ভক্ত। তারা প্রচুর পরিমাণে এ হলুদ রঙের ধাতু কিনে থাকে। গত বছর বিশ্বে সবচেয়ে বেশি সোনার গয়না কেনা হয় ভারতে। তারা মোট ৫৬০ টন সোনার গয়না কিনেছে, যেখানে চীনে কিনেছে ৫১০ টনের বেশি। এর পাশাপাশি ভারতীয়রা ২৪০ টন সোনার বার ও কয়েন কিনেছে। আর চীনে কিনেছে ৩৪৫ টন। ভারতের পাশাপাশি থাইল্যান্ডেও বেড়েছে সোনার চাহিদা। ২০২৪ সালে তাদের চাহিদা ১৭ শতাংশ বেড়েছে। তারা গত বছর ৪০ টন বেশি সোনা কিনেছে। তাছাড়া তাদের মধ্যে অ্যাপের মাধ্যমে সোনা কেনা জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এছাড়া ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনামসহ অন্যান্য এশীয় দেশের মোট সোনার চাহিদা ছিল বিশ্বের মোট চাহিদার ৬৪.৫ শতাংশ। তবে এতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর সোনা কেনার পরিমাণ হিসাব করা হয়নি। এদিকে আমেরিকা সোনা কিনেছে মাত্র ৬.৫ শতাংশ।
এশিয়ায় বিশেষ করে ভারতে সোনার প্রতি ভালোবাসার বড় কারণ হলো―জীবনের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার সঙ্গে সোনা জড়িত। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় হলো বিয়ে। ভারতের আরেকটি বড় সোনা বিক্রেতা কল্যাণ জুয়েলার্স বলছে, ভারতে প্রতি বছর প্রায় ১ কোটি বিয়ে হয়। শুধু এই বিয়েগুলোর জন্যই ৩০০ থেকে ৪০০ টন সোনা লাগে। এছাড়া অনেক হিন্দু পরিবার বিশেষ দিনগুলোতে সোনা কেনে, যেমন−দীপাবলি ও অক্ষয় তৃতীয়া।
চীনের সংস্কৃতিতেও সোনার গুরুত্ব অনেক। শুধু মূল ভূখণ্ডে নয় বিদেশে বসবাসকারী চীনা নাগরিকদের মধ্যেও সোনা ব্যবহারের প্রবণতা দেখা যায়। তারাও বিয়েতেই বেশি সোনা ব্যবহার করেন। এছাড়া চীনে প্রজন্মের পর প্রজন্ম সোনা সঞ্চয় রাখার প্রচলন রয়েছে। চীনের বাইরে, বিশেষ করে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায়, অনেক চীনা পরিবার "তেওচিউ" সম্প্রদায়ের বিয়ের রীতিনীতি অনুসরণ করে। এই রীতিতে, বরের পরিবার কনেকে চার টি সোনার গয়না উপহার দেয়। চারটি গয়না ঘরের চার কোণকে বুঝায়। অর্থাৎ ঘর হলো একজন স্বামী বিয়ে করার মাধ্যমে তার স্ত্রীর জন্য নিশ্চিত করে আর তার প্রতীক হলো এ সোনার গয়না।
এশিয়ার মানুষ সংস্কৃতির কারণে সোনা পছন্দ করলেও, ভারত ও চীনের সংস্কৃতি একে অপরের থেকে অনেক আলাদা। তাছাড়া দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর (যেমন থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম) মধ্যে ভারত বা চীনের সঙ্গেও মিল খুব একটা নেই। তবে সোনার প্রতি এই ভালোবাসা কিন্তু সংস্কৃতির জন্য নয় বরং এর পেছনে গভীর অর্থনৈতিক ও আর্থিক কারণ।
সোনা এতো গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার কারণ হলো এর নানামুখী প্রয়োজনীয়তা। বিশ্বজুড়ে বিনিয়োগকারীরা সোনাকে নিরাপদ সম্পদ হিসেবে দেখে। বিশেষ করে যখন বাজার অস্থির থাকে বা মূল্যস্ফীতি (দাম বাড়ার প্রবণতা) বেড়ে যায়, তখন মানুষ সোনা কিনে অর্থের মান ধরে রাখতে চায়। ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর থেকে অনেক আমেরিকানও সোনার দিকে ঝুঁকেছে। এমনকি এই মার্চ মাসের শুরুতে, তারা ২০২০ সালের করোনা মহামারির সময়ের থেকেও বেশি সোনা কিনেছে। সিঙ্গাপুরের এক সোনা ব্যবসায়ী বলেন, তিনি এখন ধনী গ্রাহকদের কাছে বড় বড় চালানে সোনা পাঠাচ্ছেন। কারণ, অনেক ধনীরা এখন আতঙ্কে সোনা জমিয়ে রাখছেন।
তবে এশিয়ার দেশগুলো বিশেষ করে ভারত ও চীন, সোনাকে শুধু নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে নয়, বরং তাদের অর্থনীতির বাইরে কোনো সম্পদে বিনিয়োগের উপায় হিসেবেও ব্যবহার করছে। পুঁজি আটকে থাকা একটি সাধারণ বিষয়। তখন বিদেশি বাজারে বিনিয়োগ করা অনেক সময় অসম্ভব হয়ে পড়ে। ব্লুম ভেঞ্চারস (একটি ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফার্ম)-এর একজন বিনিয়োগকারী জোসেফ সেবাস্টিয়ান বলেন, "সোনা আমাদের আটকে থাকা পুঁজি জন্য এমন একটি মাধ্যম যা ব্যবহার করে আমরা রুপির পরিবর্তে যেকোনো সম্পদে বিনিয়োগ করতে পারি।" তবে ভারতের পরিবারগুলো সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিনিয়োগে আগ্রহী হলেও, পুঁজি বাজারে তাদের বিনিয়োগ মাত্র ৬ শতাংশ। সেখানে সোনায় তাদের বিনিয়োগের পরিমাণ ১৫ শতাংশ।
চীনে, এমনকি দেশীয়ভাবে বিনিয়োগ করা কঠিন। দেশের বিভিন্ন লাভজনক প্রতিষ্ঠান সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন। তাই সেখানে স্বল্প বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ করতে পারে না। তাছাড়া সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের শুল্কারোপের আগে ২০২০ সালের মহামারির সময় চীনের শেয়ারবাজার যে উচ্চতায় ছিল তারও অনেক নিচে নেমে এসেছিল। আগে লোকজন ঘরবাড়ি কিনে সম্পদ গড়ত। কিন্তু মানুষ ধনী হওয়ার এ তরিকা থেকে সরে এসেছে। কারণ ২০২১ সালে চীনে নতুন বাড়ির দামে পাঁচ শতাংশ পর্যন্ত পতন হয়েছে। কিন্তু গত পাঁচ বছরে চীনে প্রতি গ্রাম সোনার দাম দ্বিগুণ হয়ে ৭৩৭ ইউয়ানে গিয়ে ঠেকেছে। এর ফলে বার্ষিক রিটার্ন এসেছে ১৫.৪ শতাংশ।
সাম্প্রতিক বিভিন্ন চাপের কারণে চীনের অর্থনীতি বর্তমানে ধীরগতিতে চলছে। যার কারণে দেশটির মানুষের কাছে সোনা এখন আরও আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। বর্তমানে চীনের তরুণরা ব্যাংকে অর্থ রেখে ১-২ শতাংশ সুদ পাওয়ার চেয়ে ছোট দানার এক গ্রাম সোনা কেনাকে লাভজনক ভাবছে। এর পাশাপাশি সরকারের নীতির কারণেও তারা এ দিকে ঝুঁকছেন। জিয়ানের এক স্বর্ণ ব্যবসায়ী অ্যালেক্স হে বলেন, "চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক যখন সোনা কেনে, তখন লোকেরা মনে করে 'ওহ, আমারও সোনা কেনা উচিত।" চীনে এখন সোনার গয়না কেনা থেকে সোনালি বুলিয়ন (ধাতু বার) কেনার দিকে সরে আসছে। এর মানে হলো, মানুষ সংস্কৃতির জন্য নয় বরং বিনিয়োগ হিসেবে সোনা কিনছে।
সোনার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা হচ্ছে আর্থিক নিরাপত্তা। চীন, ভারত, পাকিস্তান এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বেশিরভাগ দেশেই অর্ধেকেরও কম কর্মক্ষম মানুষ পেনশন পান। এ অবস্থায় বাকিদের জন্য সোনা শেষ বয়সের আর্থিক নিরাপত্তা হিসেবে কাজ করে। বিশেষ করে এশিয়ার অনেক দেশে নারীরা পুরুষদের মতো উপার্জন করতে পারেন না। তাছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার কিছু অঞ্চলে, নারীদের অনেক সময় নিজের নামে কোনো সম্পত্তি থাকে না। সেক্ষেত্রে সোনা তাদের বাড়তি নিরাপত্তা দেয়।
সোনা কৃষক ও ব্যবসায়ীদের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ কৃষক এবং ব্যবসায়ীদের আয়ের বেশিরভাগই আবহাওয়া এবং অর্থনৈতিক পরিবর্তনের ওপর নির্ভরশীল। সেজন্য সোনা তাদের আর্থিক লেনদেনকে সহজ করে এবং আর্থিক মন্দার সময়ও কাজে আসে। তাই চীনের যুবকদের মতো, ভারতের অনেক গ্রামীণ মানুষও অল্প পরিমাণে সোনা কিনে রাখে, যাতে অর্থ সংকটের সময়ে তারা সহজে তা নগদে রূপান্তর করতে পারে।
তাছাড়া ভারতে জমি রেকর্ড ব্যবস্থা দুর্বল আর মর্টগেজ (জমির বিপরীতে ঋণ নেওয়া) সিস্টেমও ভালো না। এর ফলে বিভিন্ন ধরনের ঋণ নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। তাই সোনার বিনিময়ে ঋণের বাজার বেড়েছে। ভারতের বৃহত্তম সোনার ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান মুথুট মাত্র ১৫ মিনিটের মধ্যে ঋণ দেয়। যার কারণে মধ্যবিত্ত মানুষের ঋণের চাহিদা বেড়েছে। গত বছরের এপ্রিল থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে সোনার বিনিময়ে ঋণের পরিমাণ ৬৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা ২০২৩ সালের শেষ ৯ মাসের তুলনায় ১২.৭ শতাংশ বেশি।
এশিয়ায় সোনার ব্যাপক চাহিদা ব্যক্তিগতভাবে যুক্তিযুক্ত হলেও জাতীয়ভাবে তা ক্ষতিকর হতে পারে। অর্থনীতিবিদরা অভিযোগ করেন, সোনার পিছনে ব্যয় করা অর্থগুলো আরও লাভজনক খাতে ব্যয় করা যেত।
আরও বড় অভিযোগ হলো বাণিজ্যের ওপর এর প্রভাব। গত বছর থাইল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক অভিযোগ করে, অনেক বেশি সোনা আমদানি ফলে তাদের বাণিজ্যিক ভারসাম্যকে বদলে দিয়েছে। এর কারণে ব্যাংকের চলতি হিসাবগুলোতে ঘাটতি দেখা দিয়েছে।
ভারত তার মোট আমদানির ৮ শতাংশ সোনা আমদানি করে। কিছু কিছু মাসে ভারতে একক পণ্য হিসেবে সবচেয়ে বেশি সোনা আমদানি করা হয়।
২০২৪ সালের মার্চ মাসে শেষ হওয়া অর্থবছরে, ভারতের ৪৫ বিলিয়ন ডলারের সোনা আমদানি করা হয়। এর পরিমাণ সে সময়ের চলতি ব্যাংক হিসাবগুলোর ঘাটতির প্রায় দ্বিগুণ। এর ফলে ভারতীয় রুপির ওপর চাপ পড়ে, মানে রুপির মান কমে যায়। আর রুপি দুর্বল হলে মানুষ আরও বেশি সোনার দিকে ঝোঁকে, কারণ সোনা তখন নিরাপদ মনে হয়।
সেবাস্টিয়ান নামের একজন বলেন, দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে সোনা ভালো নয়। কিন্তু তারপরও আমি ব্যক্তিগত ভাবে নিজের সম্পদের ২০ শতাংশ সোনা রাখি।
তবে এটি নিয়ন্ত্রণের কোনো সহজ পন্থা নেই। এসব নিয়ন্ত্রণে সরকার সোনা কেনা কমানোর জন্য বিভিন্ন নীতি গ্রহণ করতে পারে। কিন্তু এর ফলে আবার অবৈধ চোরাচালান ও কালোবাজারি বৃদ্ধি পাবে।
এর আরেকটি বিকল্প হতে পারে, দেশে আরও সোনা উৎপাদন করা। তবে এর জন্য ভূতত্ত্বীয় কিছু বিষয় থাকে যার কারণে চাইলেই এর উৎপাদন সম্ভব নয়। চীন বিশ্বের সবচেয়ে বড় সোনা উৎপাদনকারী দেশ। তারা ২০২৩ সালে ৩৭৮ টন সোনা উৎপাদন করে। কিন্তু এ পরিমাণ দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদার মাত্র ৪০ শতাংশ পূরণ করে।
এদিকে ভারতের সোনা উৎপাদন গত কয়েক দশক ধরে হ্রাস পাচ্ছে, যদিও দেশটির পর্যাপ্ত খনিজ সম্পদ রয়েছে।
২০২২ সালে ভারত মাত্র ১ টন সোনা উৎপাদন করেছিল, তবে সেবছর ৭০০ টনের বেশি সোনা আমদানি করা হয়।
সোনা কেনার পরিমাণ কমাতে চাইলে সরকারকে আরও বেশি কঠোর ও অপ্রিয় পদক্ষেপ নিতে হবে। যেমন- ক্রেডিট মার্কেট আরও শক্তিশালী করা, জমির রেকর্ডজনিত সমস্যা দূরীকরণ, আদালত ব্যবস্থার সংস্কার এবং পুঁজি স্থানান্তরকে আরও সহজ করতে হবে।
সোনার প্রতি এশীয়দের ভালোবাসার জন্য সংস্কৃতিকে দায়ী করা হলেও এর মূল কারণ রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক। তাই এশীয়রা সোনার প্রতি আসক্ত থাকবেই।
অনুবাদ: সাদিয়া আফরিন রেনেসাঁ