কেন এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় পাসের হার কমে মাত্র ৫৮.৮৩ শতাংশ?

২০২৫ সালের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় পাসের হারে বড় ধরনের পতন ঘটেছে। এবার ১১টি শিক্ষা বোর্ডে গড় পাসের হার দাঁড়িয়েছে ৫৮ দশমিক ৮৩ শতাংশ, যা গত বছরের ৭৭ দশমিক ৭৮ শতাংশের তুলনায় প্রায় ১৮ দশমিক ৯৫ শতাংশ কম।
সাম্প্রতিক বছরের মধ্যে এটি অন্যতম সর্বনিম্ন ফলাফল।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. খন্দোকার এহসানুল কবির বলেন, 'ইংরেজি, গণিত এবং আইসিটি বিষয়ে দুর্বলতার কারণেই এ বছর ফল খারাপ হয়েছে।
ফল প্রকাশের সময় তিনি আরও বলেন, অনেক শিক্ষার্থী হয়তো যথেষ্ট মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করেনি।
তিনি বলেন, 'এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় প্রায় অর্ধেক শিক্ষার্থী ফেইল করেছে, এটা অনাকাঙ্ক্ষিত। এ পরীক্ষার মাধ্যমে আমরা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দেখলাম, গলদ আছে ।'
এহসানুল কবির আরও বলেন, 'এমন বাস্তবতা আমাদের সামনে এসে হাজির হয়েছে। আমরা সেটা ফ্যাব্রিকেট (বানানো) করিনি। এ ফলাফল খারাপের পাশাপাশি রিয়ালও (বাস্তব) বলা যায়। শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার ব্যাপারে বিমুখ, টেবিল থেকে দূরে ছিলো বলে আমরা ধারণা করছি। সংশ্লিষ্ট সকল অংশীজনের পরবর্তী দায়িত্ব এর কারণ অনুসন্ধান করা।'
আজ (১৬ অক্টোবর) সকাল ১০টায় একযোগে দেশের সব শিক্ষা বোর্ডের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে। ফল জানা গেছে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও অনলাইনে।
এ বছর ১১টি শিক্ষা বোর্ডে মোট ৬৯ হাজার ৯৭ জন শিক্ষার্থী জিপিএ–৫ পেয়েছে। গত বছর এই সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৪৫ হাজার ৯১১। অর্থাৎ, এবার সর্বোচ্চ গ্রেড পাওয়া শিক্ষার্থী কমেছে ৭৬ হাজার ৮১৪ জন।
মোট ১২ লাখ ৩৫ হাজার ৬৬১ জন পরীক্ষার্থী অংশ নেয় সাধারণ শিক্ষা বোর্ডগুলোতে। তাদের মধ্যে ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড, মাদ্রাসা বোর্ড ও কারিগরি বোর্ড মিলে ৭ লাখ ২৬ হাজার ৯৬০ জন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে।
চলতি বছরে এসএসসি ফলাফল প্রকাশের পর মূল্যায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে যে উদ্বেগ উঠেছিল তা মন্ত্রণালয় গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করেছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরার।
তিনি বলেন, 'আমি সব শিক্ষা বোর্ডকে নির্দেশ দিয়েছি— যেন ভবিষ্যৎ পরীক্ষায়, বিশেষ করে এইচএসসি মূল্যায়নে, সীমান্তরেখায় থাকা শিক্ষার্থীদের প্রতি সর্বোচ্চ ন্যায্যতা বজায় রাখা হয়, কিন্তু একই সঙ্গে যেন ফলাফলের বাস্তবতা বিকৃত না হয়। আমরা অতিরিক্ত নম্বর দিয়ে সন্তুষ্টি নয় বরং ন্যায্য নম্বর দিয়ে সততাকে বেছে নিয়েছি। এই সিদ্ধান্ত সহজ নয়, কিন্তু প্রয়োজনীয়।'
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান বলেন, 'উত্তরপত্র মূল্যায়নের নিয়ম অনুসারে খাতা দেখা হয়েছে। অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ইংরেজি, গণিত, আইসিটি বিষয়ে ফেইল করেছেন। এবার অতিরিক্ত সময় নিয়ে উত্তরপত্র মূল্যায়ন করেছেন পরীক্ষকরা। এটাই প্রকৃত ফলাফল।'
তিনি বলেন, উত্তরপত্র মূল্যায়ন করা হয়েছে সরকারি নির্দেশিকা অনুযায়ী।
ফলাফলে এগিয়ে মেয়েরা
সামগ্রিক ফলাফলে পাসের হার কমে গেলেও মেয়েরা এবারও এগিয়ে রয়েছে। উত্তীর্ণের হার ও জিপিএ–৫ প্রাপ্তির দিক থেকে তারা ছেলেদের পেছনে ফেলেছে, যা গত কয়েক বছরের ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে।
সব বোর্ড মিলিয়ে মেয়েদের পাসের হার দাঁড়িয়েছে ৬২ দশমিক ৯৭ শতাংশ, যেখানে ছেলেদের পাসের হার ৫৪ দশমিক ৬০ শতাংশ।
জিপিএ–৫ পাওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যেও মেয়েরা এগিয়ে। ৩৭ হাজার ৪৪ জন ছাত্রী সর্বোচ্চ গ্রেড পেয়েছে, যা ৩২ হাজার ৫৩ জন ছাত্রের চেয়ে বেশি।
বোর্ডভিত্তিক ফলাফলের চিত্র
সাধারণ শিক্ষা বোর্ডগুলোর মধ্যে ঢাকার ফল সবচেয়ে ভালো, পাসের হার ৬৪ দশমিক ৬২ শতাংশ। এর পরেই রয়েছে বরিশাল বোর্ড, পাসের হার ৬২ দশমিক ৫৭ শতাংশ এবং রাজশাহী বোর্ড, পাসের হার ৫৯ দশমিক ৪০ শতাংশ।
অন্যদিকে, ৫৫ শতাংশের নিচে পাসের হার থাকা বোর্ডগুলো হলো কুমিল্লা (৪৮ দশমিক ৮৬ শতাংশ), যশোর (৫০ দশমিক ২০ শতাংশ), চট্টগ্রাম (৫২ দশমিক ৫৭ শতাংশ), সিলেট (৫১ দশমিক ৮৬ শতাংশ) ও ময়মনসিংহ (৫১ দশমিক ৫৪ শতাংশ)।
মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার ৭৫ দশমিক ৬১ শতাংশ, আর কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে ৬২ দশমিক ৬৭ শতাংশ।
ফলাফলে দেখা যায়, ৩৪৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শতভাগ শিক্ষার্থী পাস করেছে। বিপরীতে ২০২টি প্রতিষ্ঠানে কোনো শিক্ষার্থী পাস করতে পারেনি, অর্থাৎ পাসের হার শূন্য শতাংশ।
এ বছর ২৬ জুন শুরু হওয়া এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় দেশের ২ হাজার ৭৯৭টি কেন্দ্রে।