শুল্ক নিয়ে চীনের বিরোধিতায় আটকে গেল টিকটক বিক্রির চুক্তি

টিকটকের মার্কিন অংশ বিক্রি নিয়ে যে চুক্তির কথা চলছিল, সেটি আপাতত স্থগিত হয়েছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন শুল্ক বৃদ্ধির ঘোষণার পর চীন এই চুক্তি অনুমোদন দেবে না বলে জানিয়েছে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট দুই সূত্র রয়টার্সকে নিশ্চিত করে।
শুক্রবার ট্রাম্প বাইটডান্সকে দেওয়া সময়সীমা আরও ৭৫ দিন বাড়িয়েছেন। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে টিকটক চালু রাখতে হলে কোম্পানিটিকে অবশ্যই টিকটকের মার্কিন অংশ বিক্রি করতে হবে।
এর আগে, গত ২০ জানুয়ারি ৭৫ দিনের জন্য বাড়িয়ে এক নির্বাহী আদেশে সই করেন ট্রাম্প।
সূত্র জানিয়েছে, বুধবারের মধ্যে চুক্তির কাঠামো অনেকটাই চূড়ান্ত হয়েছিল। প্রস্তাবিত চুক্তি অনুযায়ী, টিকটকের মার্কিন কার্যক্রম আলাদা একটি কোম্পানিতে রূপান্তর করা হতো, যার প্রধান মালিক ও পরিচালনাকারী হতেন যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগকারীরা। বাইটডান্স সেখানে ২০ শতাংশের কম শেয়ার রাখত।
এই চুক্তিতে বাইটডান্স, বিদ্যমান ও নতুন বিনিয়োগকারী এবং যুক্তরাষ্ট্র সরকার একমত হয়েছিল বলে জানায় সূত্রটি। তবে শনিবার বাইটডান্স জানায়, কিছু মূল বিষয় নিয়ে এখনও মতপার্থক্য রয়েছে।
তাদের বিবৃতিতে বলা হয়, 'আমরা এখনও যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি, তবে কোনো চূড়ান্ত চুক্তি হয়নি। অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে এখনও মতবিরোধ রয়েছে।' তারা আরও জানায়, 'চীনের আইন অনুযায়ী, যেকোনও চুক্তি অনুমোদনের আগে সংশ্লিষ্ট পর্যালোচনা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে।'
ওয়াশিংটনে অবস্থিত চীনা দূতাবাস জানায়, 'চীন টিকটক নিয়ে একাধিকবার তাদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে। আমরা সবসময় বাজার অর্থনীতির মৌলিক নীতিমালার প্রতি সম্মান জানিয়ে বৈধ ব্যবসায়িক স্বার্থ রক্ষা করি, এবং এর বিপরীত কোনো আচরণের বিরোধিতা করি।'
গত সপ্তাহে ট্রাম্প চীন থেকে আমদানি করা পণ্যে অতিরিক্ত ৩৪ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন, ফলে এখন মোট শুল্ক দাঁড়িয়েছে ৫৪ শতাংশে। এর জবাবে চীনও পাল্টা শুল্ক দিয়েছে। ট্রাম্প বলেন, টিকটকের ক্ষেত্রে এই শুল্ক কমানোর ব্যাপারে তিনি আগ্রহী—যদি বাইটডান্সের সঙ্গে চুক্তি করা সম্ভব হয়।
চুক্তির বিলম্ব সম্পর্কে ব্যাখ্যা করে ট্রাম্প বলেন, 'চুক্তি সম্পন্ন করার জন্য আরও কাজ বাকি রয়েছে। আমি চাই চীনের সঙ্গে শুভ ইচ্ছায় আলোচনা চলুক—যদিও তারা আমাদের পাল্টা শুল্কে খুশি নয়।'
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, তার প্রশাসন টিকটকের মার্কিন শাখা বিক্রির সম্ভাব্য চুক্তি নিয়ে চারটি ভিন্ন দলের সঙ্গে আলোচনা করছে। তবে তিনি এসব দলের পরিচয় প্রকাশ করেননি।
টিকটকের মার্কিন ব্যবসার ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে এক বড় প্রতিবন্ধকের ওপর—চীনা সরকারের সম্মতি। এখন পর্যন্ত বেইজিংয়ের পক্ষ থেকে এমন কোনও ঘোষণা আসেনি যে তারা বিক্রির অনুমতি দেবে। বরং ট্রাম্পের সাম্প্রতিক মন্তব্যে নতুন করে চীনের বিরোধিতার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।
শুক্রবার ট্রাম্প এক পোস্টে লেখেন, 'আমরা টিকটক ও চীনের সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী, যাতে চুক্তিটি সম্পন্ন করা যায়।' তিনি আরও বলেন, 'আমরা চাই না টিকটক "অন্ধকারে" চলে যাক।'
গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস বিপুল দ্বিদলীয় সমর্থনে একটি আইন পাস করে, যেখানে বলা হয়, চীনা সরকার টিকটকের মাধ্যমে মার্কিন নাগরিকদের ওপর নজরদারি বা প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করতে পারে। তখনকার ডেমোক্রেটিক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আইনটিতে সই করেন।
এই আইনে বলা হয়, যদি বাইটডান্স ২০২৪ সালের ১৯ জানুয়ারির মধ্যে টিকটকের মার্কিন অংশ অন্য কোনও মালিকের কাছে হস্তান্তর না করে, তাহলে অ্যাপটি যুক্তরাষ্ট্রে নিষিদ্ধ হয়ে যাবে। তবে ট্রাম্প ২০ জানুয়ারি দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতা গ্রহণের পর আইনের বাস্তবায়ন স্থগিত রাখেন।
এরই ধারাবাহিকতায় জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ অ্যাপল ও গুগলকে জানায়, তারা ওই আইন কার্যকর করছে না। ফলে টিকটক নতুন করে ডাউনলোডের জন্য অ্যাপ স্টোরে ফিরে আসে।
ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন নির্দেশনায় চুক্তির জন্য সময়সীমা বাড়িয়ে জুনের মাঝামাঝি পর্যন্ত নির্ধারণ করা হচ্ছে।
রয়টার্স জানিয়েছে, হোয়াইট হাউসের নেতৃত্বে আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছে এমন একটি পরিকল্পনা, যাতে বাইটডান্সের সবচেয়ে বড় অ-চীনা বিনিয়োগকারীরা তাদের শেয়ার বাড়িয়ে টিকটকের মার্কিন অংশ কিনে নেবেন। এর মাধ্যমে অ্যাপটির মার্কিন সংস্করণকে একটি আলাদা কোম্পানিতে রূপান্তর করা হবে, যেখানে চীনা মালিকানা ২০ শতাংশের নিচে থাকবে। মার্কিন আইনের বাধা পেরোতেই এই কাঠামো তৈরি করা হচ্ছে।
এই আলোচনায় নেতৃত্ব দিচ্ছে জেফ ইয়াসের সাসকুহান্না ইন্টারন্যাশনাল গ্রুপ ও বিল ফোর্ডের জেনারেল আটলান্টিক—দুজনই বাইটডান্স বোর্ডের সদস্য।
এদিকে, একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ওয়ালমার্টও বিনিয়োগকারী গ্রুপে যুক্ত হওয়ার চিন্তা করছে। তবে প্রতিষ্ঠানটি এবিসি নিউজের এ তথ্য অস্বীকার করেছে।