ইউএসএআইডি কর্মীদের নথিপত্র ধ্বংসের নির্দেশ, আদালতে অভিযোগ

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (ইউএসএআইডি)-এর এক কর্মকর্তা কর্মীদের বিপুল পরিমাণ নথিপত্র ধ্বংসের নির্দেশ দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে মঙ্গলবার (১১ মার্চ) ওয়াশিংটন ডিসির এক ফেডারেল আদালতে সরকারি কর্মচারীদের ইউনিয়নগুলো মামলা করেছে। আদালতের মাধ্যমে তারা এই নির্দেশ বন্ধের আবেদন জানিয়েছে।
আদালতে জমা দেওয়া নথিতে বলা হয়েছে, ইউএসএআইডির ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী সচিব এরিকা কার এক ইমেইলে কর্মীদের সংস্থার কার্যালয়ে এসে 'সংরক্ষিত গোপনীয় আলমারি ও ব্যক্তিগত নথিপত্র ধ্বংস' করার নির্দেশ দেন। ইমেইলে তিনি লিখেছেন, 'প্রথমে যত বেশি সম্ভব নথি শ্রেডার মেশিনে ছিঁড়ে ফেলুন। শ্রেডার মেশিন কাজ না করলে বার্ন ব্যাগ ব্যবহার করুন। ' তবে কোন ধরনের নথি ধ্বংস করা হবে, তা তিনি স্পষ্ট করেননি।
ইউনিয়নগুলোর দাবি, এই নির্দেশ বৃহৎ পরিসরে নথি ধ্বংসের ইঙ্গিত দেয়, যা যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রেকর্ড সংরক্ষণ আইনের লঙ্ঘন হতে পারে এবং মামলার গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ নষ্ট করতে পারে। মামলাটির উদ্দেশ্য ট্রাম্প প্রশাসনের অধীনে ইউএসএআইডি বন্ধের ঘোষণাটি বাতিল করা।
হোয়াইট হাউসের ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি আনা কেলি এক্স (সাবেক টুইটার)-এ এক পোস্টে এ অভিযোগকে 'ভিত্তিহীন গুজব' বলে অভিহিত করেছেন। তিনি জানান, 'মূলত পুরোনো ও অন্যান্য সংস্থার নথি ধ্বংস করা হচ্ছে, যেগুলোর মূল কপি গোপনীয় কম্পিউটার সিস্টেমে সংরক্ষিত আছে। ' কেলি আরও বলেন, ইউএসএআইডি ভবনটি শিগগিরই মার্কিন কাস্টমস অ্যান্ড বর্ডার প্রোটেকশন সংস্থার দখলে যাবে।
সরকারি কর্মীদের প্রতিনিধিত্বকারী আমেরিকান ফেডারেশন অব গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজ ও আমেরিকান ফরেন সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন এই মামলাটি করে। এছাড়া, দারিদ্র্যবিরোধী সংগঠন অক্সফাম আমেরিকাও মামলাটিতে যুক্ত রয়েছে।
অভিযোগে বলা হয়েছে, কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠিত একটি স্বাধীন সংস্থাকে কার্যত বন্ধ করতে গিয়ে ট্রাম্প তার ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। তিনি ইউএসএআইডি কর্মীদের বরখাস্ত করেছেন বা ছুটিতে পাঠিয়েছেন এবং সংস্থার তৃতীয় পক্ষের অংশীদারদের সঙ্গে করা চুক্তি বাতিল করেছেন।
মঙ্গলবার মামলার বাদীপক্ষ যুক্তরাষ্ট্রের জেলা আদালতের বিচারক কার্ল নিকলসের কাছে নথিপত্র ধ্বংস বন্ধে একটি অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আবেদন করে। তাদের দাবি, মামলায় জয়ী হলে ইউএসএআইডি পুনরায় চালুর জন্য গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র সংরক্ষণ অপরিহার্য।
আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারক নিকলস উভয় পক্ষকে বুধবার সকাল পর্যন্ত তাদের মতামত জানিয়ে একটি প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। প্রতিবেদনের ভিত্তিতে নিষেধাজ্ঞার আবেদনের বিষয়ে পরবর্তী শুনানির সময়সূচি নির্ধারিত হবে।
ট্রাম্প-নিযুক্ত বিচারক নিকলস গত মাসে প্রশাসনকে ২ হাজারের বেশি ইউএসএআইডি কর্মীকে ছুটিতে পাঠানোর অনুমতি দেন। ট্রাম্প প্রশাসনের অধীনে সংস্থাটির ৮০ শতাংশের বেশি কর্মসূচি বাতিল হয়েছে এবং বিপুল সংখ্যক কর্মী চাকরিচ্যুত হয়েছে।
এদিকে, ইউএসএআইডির ঠিকাদার ও অনুদানপ্রাপ্ত সংস্থাগুলোর দায়ের করা পৃথক এক মামলায় সোমবার এক ফেডারেল বিচারক রায় দেন যে কংগ্রেস অনুমোদিত বৈদেশিক সহায়তার অর্থ আটকে রাখার অধিকার প্রশাসনের নেই। তবে তিনি বাতিলকৃত চুক্তিগুলো পুনর্বহালের নির্দেশ দেননি। ওই মামলায় ট্রাম্প প্রশাসন আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী বরাদ্দকৃত তহবিল ছাড়তে বারবার অস্বীকৃতি জানিয়ে আসছে।