আইসিসির পরোয়ানা: মানবতাবিরোধী অপরাধে ফিলিপাইনের সাবেক প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতার্তে গ্রেপ্তার

ফিলিপাইনের সাবেক প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতের্তেকে গ্রেপ্তার করেছে দেশটির পুলিশ। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) তার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করার পর তাকে আটক করা হয়। খবর বিবিসির।
দুতের্তে হংকং থেকে ফেরার পর ম্যানিলা বিমানবন্দরে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন। ২০১৬ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় তার কঠোর মাদকবিরোধী অভিযানে হাজারো মানুষ নিহত হন।
৭৯ বছর বয়সী সাবেক এই নেতা এর আগে বলেছিলেন, তাকে যদি গ্রেপ্তার করা হয়, তবে তিনি কারাগারে যেতে প্রস্তুত।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল কোয়ালিশন ফর হিউম্যান রাইটস ইন দ্য ফিলিপাইনস (আইসিএইচআরপি) দুতের্তের গ্রেপ্তারকে 'একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত' বলে অভিহিত করেছে।
সংগঠনের চেয়ারম্যান পিটার মারফি বলেন, 'ন্যায়ের পথ দীর্ঘ হলেও আজ তা সঠিক দিকে এগিয়েছে। দুতের্তের গ্রেপ্তার গণহত্যার জন্য জবাবদিহির সূচনা।'
তবে, দুতের্তের সাবেক প্রেসিডেন্সিয়াল মুখপাত্র সালভাদর প্যানেলো এই গ্রেপ্তারকে 'অবৈধ' বলে দাবি করেছেন। তিনি বলেন, 'ফিলিপাইন অনেক আগেই আইসিসি থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করেছে, তাই আদালতের এখতিয়ার নেই।'
আইসিসি অবশ্য জানিয়েছে, দেশটি সদস্যপদ প্রত্যাহারের আগের ঘটনাগুলোর বিষয়ে আদালতের বিচারিক ক্ষমতা বহাল রয়েছে।
স্থানীয় টেলিভিশনে প্রচারিত ভিডিওতে দেখা গেছে, বিমানবন্দর থেকে হেঁটে বের হচ্ছেন দুতের্তে, তার হাতে একটি লাঠি রয়েছে। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তিনি 'শারীরিকভাবে সুস্থ' রয়েছেন এবং সরকারি চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণে আছেন।
সাবেক মেয়র দুতের্তে ক্ষমতায় আসেন অপরাধ দমনের কঠোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে। তার সময়ে মাদক সংশ্লিষ্ট অভিযানে ৬ হাজারের বেশি সন্দেহভাজনকে গুলি করে হত্যা করা হয়। তবে মানবাধিকার সংগঠনগুলোর দাবি, প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে।
দুতের্তে একবার বলেছিলেন, 'হিটলার ৩০ লাখ ইহুদিকে হত্যা করেছিল। ফিলিপাইনে ৩০ লাখ মাদকাসক্ত আছে, আমি খুশি মনে তাদের হত্যা করব।'
কিন্তু সমালোচকরা বলছেন, তার 'যুদ্ধ' পুলিশের ক্ষমতার অপব্যবহারকে উসকে দিয়েছে এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে বহু নিরপরাধ মানুষ নিহত হয়েছেন।
আইসিসি ২০১৬ সাল থেকেই দুতের্তের বিরুদ্ধে অভিযোগ খতিয়ে দেখছিল এবং ২০২১ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে তদন্ত শুরু করে। এতে ২০১১ সালের নভেম্বর থেকে ২০১৯ সালের মার্চ পর্যন্ত ঘটনাগুলো অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
দুতের্তে সবসময় এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
ফিলিপাইনের বর্তমান ভাইস-প্রেসিডেন্ট হলেন সারা দুতের্তে, যিনি দুতের্তের কন্যা। ২০২৮ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তাকে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে দেখা হচ্ছে।
তবে সাম্প্রতিক সময়ে দুতের্তে পরিবারের সঙ্গে বর্তমান প্রেসিডেন্ট ফার্দিনান্দ মার্কোস জুনিয়রের সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে। ২০২২ সালের নির্বাচনে দু'জন একই জোট থেকে জয়ী হলেও এখন তাদের মধ্যে প্রকাশ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে।
দুতের্তের গ্রেপ্তারের পর রাজনৈতিক অস্থিরতা আরও বাড়তে পারে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।