নেপালের সাবেক রাজা জ্ঞানেন্দ্রকে স্বাগত জানিয়ে রাজতন্ত্র পুনরায় চালুর দাবি

নেপালের রাজধানী কাঠমাণ্ডুতে সাবেক রাজা জ্ঞানেন্দ্র শাহকে স্বাগত জানিয়ে দেশটির বাতিল হওয়া রাজতন্ত্র পুনরায় চালু করার দাবি জানানো হয়েছে।
দেশের অবস্থা নিয়ে চলমান অসন্তোষের মধ্যেই সাবেক রাজা জ্ঞানেন্দ্রকে রোববার (৯ মার্চ) কাঠমান্ডুতে বড় ধরনের জনসমাবেশের মাধ্যমে স্বাগত জানানো হয়। ধারণা করা হচ্ছে, রাজা জ্ঞানেন্দ্র শাহকে স্বাগত জানাতে ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রায় ১০ হাজার মানুষের জমায়েত হয়। সাবেক এই রাজা দেশটির পশ্চিমাঞ্চল সফর শেষে রাজধানীতে ফেরেন।
এ সময় উপস্থিত জনতা 'রাজার জন্য রাজপ্রাসাদ খালি করুন। রাজা ফিরে আসুন, দেশকে বাঁচান। আমাদের প্রিয় রাজা দীর্ঘজীবী হোক। আমরা রাজতন্ত্র চাই'-সহ বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দেন।
বিমানবন্দরের প্রবেশপথে জ্ঞানেন্দ্রর সমর্থকরা জমায়েত করায় যাত্রীরা পায়ে হেঁটে বিমানবন্দরে প্রবেশ এবং ত্যাগ করেন। এসময় বিক্ষোভকারীদের বিমানবন্দরে প্রবেশে বাধা দেয় কয়েকশ দাঙ্গা পুলিশ।
৭৭ বছর বয়সী জ্ঞানেন্দ্র ২০০১ সালে বড় ভাই বীরেন্দ্র বীর বিক্রম শাহ ও তার পরিবারের সদস্যরা গণহত্যায় নিহত হওয়ার পর সিংহাসনে বসেন। তিনি ২০০৫ সাল পর্যন্ত সাংবিধানিক রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে শাসন করেছিলেন। তবে তার কোনো নির্বাহী বা রাজনৈতিক ক্ষমতা ছিল না।
২০০৫ সালে তিনি পুরো ক্ষমতা দখল করেন। তিনি দাবি করেন, রাজতন্ত্র বিরোধী মাওবাদী বিদ্রোহীদের পরাজিত করার জন্য তিনি এটি করছেন। রাজা সরকার ও সংসদ ভেঙে দেন, রাজনীতিবিদ ও সাংবাদিকদের কারাবন্দি করেন, যোগাযোগ বন্ধ করে দেন এবং জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে সেনাবাহিনী দিয়ে দেশ শাসন শুরু করেন।
এই পদক্ষেপগুলো থেকে নেপালে বিশাল বিক্ষোভের সূচনা হয়। ২০০৬ সালে দেশজুড়ে তুমুল প্রতিবাদ-বিক্ষোভের মুখে রাজা জ্ঞানেন্দ্র শাহ ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন। সরকার মাওবাদীদের সাথে একটি শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর করে, যা দশকের দীর্ঘ গৃহযুদ্ধের অবসান ঘটায় এবং হাজার হাজার মানুষের প্রাণহানি রোধ করে।
২০০৮ সালে জ্ঞানেন্দ্র সংসদের ভোটে সিংহাসন ত্যাগ করেন। এর ফলে নেপালের ২৪০ বছরের পুরোনো হিন্দু রাজতন্ত্র বিলুপ্ত হয়ে দেশটি ধর্মনিরপেক্ষ প্রজাতন্ত্রে পরিণত হয়।
তবে এরপর থেকে নেপালে ১৩টি সরকার গঠিত হয়েছে এবং অনেকেই প্রজাতন্ত্র নিয়ে হতাশ। তারা মনে করেন, প্রজাতন্ত্র রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আনতে ব্যর্থ হয়েছে এবং এটি অর্থনৈতিক সংকট ও ব্যাপক দুর্নীতির জন্য দায়ী।

'রাজনীতিবিদদের অযোগ্যতা'
মিছিলে অংশগ্রহণকারীরা বলছেন, তারা দেশের আরও অবনতি রোধ করতে রাজনৈতিক ব্যবস্থায় পরিবর্তন চাচ্ছেন।
৭২ বছর বয়সী থির বাহাদুর ভাণ্ডারি সংবাদ সংস্থা এপি-কে বলেন, "আমরা এখানে রাজাকে আমাদের পূর্ণ সমর্থন দিতে এসেছি এবং তাকে রাজসিংহাসনে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করার জন্য তার পক্ষে সমাবেশ করছি।"
২০০৬ সালে তৎকালীন রাজা জ্ঞানেন্দ্র শাহর বিরুদ্ধে দেশজুড়ে যে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছিল, তাতে অংশ নিয়েছিলেন ৫০ বছর বয়সি রং মিস্ত্রি কুলরাজ শ্রেষ্ঠ। নেপালের বর্তমান রাজনৈতিক ব্যবস্থার প্রতি হতাশ হয়ে তিনি বলেন, "দেশের সবচেয়ে খারাপ সমস্যা হচ্ছে ব্যাপক দুর্নীতি এবং ক্ষমতাসীন সব রাজনীতিবিদ দেশটির জন্য কিছুই করছে না।"
তিনি বলেন, "আমি রাজতন্ত্র বিলুপ্ত করার আন্দোলনে ছিলাম। বিশ্বাস করেছিলাম এটি দেশের উপকারে আসবে। কিন্তু আমি ভুল ছিলাম এবং এখন দেশ আরও খারাপ হয়ে গেছে। তাই আমি আমার মনোভাব বদলেছি।"
তবে রাজতন্ত্র পুনরায় চালু করার বিষয়ে জনগণের আহ্বান নিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি জ্ঞানেন্দ্র শাহ। দেশটিতে তার পক্ষে ক্রমবর্ধমান সমর্থন থাকলেও, অবিলম্বে তার ক্ষমতায় ফেরার সম্ভাবনা নেই।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক লোক রাজ বড়াল বলেন, "আমি রাজতন্ত্র ফিরে আসার কোনো সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছি না, কারণ এই প্রতিষ্ঠানটি 'অস্থিতিশীলতার উৎস' হয়ে উঠেছে।"
তিনি বলেন, "কিছু অসন্তুষ্ট গোষ্ঠীর জন্য এটি রাজনীতিবিদদের অযোগ্যতার কারণে একটি আশ্রয়স্থল হয়ে উঠেছে, যারা দিনে দিনে আরও স্বার্থপর হয়ে উঠছেন। এই হতাশা এই ধরনের সমাবেশ ও বিক্ষোভে প্রকাশিত হয়েছে।"