পুরানো নাৎসি মানচিত্র ধরে নেদারল্যান্ডসে গুপ্তধন সন্ধানের হিড়িক!
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালে নাৎসি বাহিনী দখল করেছিল নেদারল্যান্ডস। দখলদারিত্বের সময় ১৯৪৪ সালে দেশটির একটি ব্যাংকে ঘটে বিস্ফোরণের ঘটনা। এরপরই ভল্ট থেকে হিরে, পদ্মরাগমণি, সোনা, রুপাসহ বিভিন্ন অমূল্য গয়না লুট করে নিয়ে যায় তারা। আর তারপর লুকিয়ে রাখে অজ্ঞাত কোনো স্থানে।
যুদ্ধে মিত্র বাহিনীর কাছে পরাজয় হয় জার্মানির। অবসান ঘটে অ্যাডলফ হিটলারের থার্ড রাইখের। ১৯৪৫ সালে জার্মান দখলদারিত্ব থেকে মুক্ত হওয়ার পর, এক জার্মান সেনার কাছ থেকে একটি ম্যাপ উদ্ধার করে নেদারল্যান্ডসে জার্মান (চুরি/লুট করা) সম্পদ অনুসন্ধানের দায়িত্ব পাওয়া একটি সংস্থা।
ধারণা করা হচ্ছে, পুরোনো এই ম্যাপে কয়েক মিলিয়ন ডলার সমপরিমাণ লুট করা সম্পদ লুকিয়ে রাখার জায়গা নির্দেশ করেছে জার্মান সেনারা। ফলে এটি খুঁজে পেলে বিশাল আবিষ্কারই হবে। আর সেই আশাতেই অপেশাদার গুপ্তধন সন্ধানীরা মেটাল ডিটেক্টর ও বেলচা নিয়ে মাঠঘাট চষে বেড়াচ্ছে নেদারল্যান্ডসে।
চলতি সপ্তাহ থেকেই শুরু হয়েছে তাদের এ অভিযান। এর সূত্রপাত্র হয় যখন ডাচ ন্যাশনাল আর্কাইভ ম্যাপটি জনসম্মুখে প্রকাশ করে। আর্কাইভের তথ্যে ম্যাপটি সম্পর্কে বলা হয়– এতে সম্ভবত গুপ্তধন লুকিয়ে রাখার জায়গা নির্দেশ করা হয়েছে।
ম্যাপে নির্দেশিত জায়গাটি হচ্ছে নেদারল্যান্ডসের পূর্ব দিকের গ্রামীণ ওম্মেরান এলাকার, ব্যাস আর কী চাই! এখন শখের গুপ্তধন সন্ধানীরা সেখানে প্রতিটি ইঞ্চি তন্ন তন্ন করে খুঁজছেন।
ম্যাপ প্রকাশের কারণ হচ্ছে, এটি নিয়ে সংস্থাটি গোপন এক গবেষণা করেছিল। গবেষণার ফলাফল গোপন রাখার সময়সীমা ছিল ৭৫ বছর; আইন অনুযায়ী তা পেরিয়ে যাওয়ায় সেটি চলতি সপ্তাহে প্রকাশ করতে হয়েছে। সেই সুবাদেই এতদিন পর মানুষ জানতে পেরেছে ম্যাপটি সম্পর্কে।
গুপ্তধনের অস্তিত্ব সম্পর্কে পুরোপুরি নিশ্চিত না হওয়া গেলেও, সংস্থাটি ১৯৪৭ সালে এটি উদ্ধারের বেশকিছু প্রচেষ্টা চালায়, যার সবগুলোই ব্যর্থ হয়। বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে এমনটা জানান ডাচ ন্যাশনাল আর্কাইভের মুখপাত্র আন্নে-ম্যারিয়েকে স্যামসন।
তিনি বলেন, 'সত্যিই কোনোদিন এই গুপ্তধন ছিল কিনা– সে সম্পর্কে নিশ্চিত নই আমরা, তবে আমাদের গবেষণা বলছে, গুপ্তধন লুকিয়ে রাখার গল্পের বিশ্বাসযোগ্যতা রয়েছে'।
স্যামসন আরও বলেছেন, 'থাকলেও আমরা এটি কখনো খুঁজে পাইনি। হয়তো আগেই কেউ খুঁজে পেয়ে, মাটি খুঁড়ে তুলে নিয়ে গেছে'।
অবশ্য এই ক্ষীণ সম্ভাবনাতেও আশাহত নয় শখের গুপ্তধন সন্ধানীরা। তাদেরই একজন ৫৭ বছরের ইয়ান হ্যানজেন রয়টার্সকে বলেন, 'এখানে সব জায়গাতেই মেটাল ডিটেক্টর হাতে মানুষজন দেখতে পাচ্ছি। তাদের মতো আমিও গুপ্তধনের কথা শুনে উৎসাহ অনুভব করি, ভেবেছি নিজেই খুঁজে বের করব। ৭০ বছরের বেশি সময় পর এটি খুঁজে পাওয়ার আশা তেমন নেই সেটাও জানি, তবু চেষ্টা করছি'।
ওম্মেরানের সাবেক মেয়র ক্লাস ট্যাম্মেস বলেন, দেশের সবখান থেকেই মানুষজন ছুটে এসেছেন তার এলাকায়।
যে জমিতে গুপ্তধন থাকার কথা ম্যাপে উল্লেখ রয়েছে, বর্তমানে সেটি একটি ফাউন্ডেশনের সম্পত্তি। ক্লাস ওই ফাউন্ডেশনটি পরিচালনা করেন।
তিনি আরও বলেন, ম্যাপে এক সারিতে লাগানো তিনটি গাছ ও লাল ক্রস দিয়ে চিহ্নিত একটি জায়গাকে সবাই গুপ্তধনের নির্দেশিত স্থান বলে মনে করছে। তবে কেউ যদি কিছু খুঁজেও পায়, তাহলে সবার আগে আমাদের জানাতে হবে। যদিও এটা সহজে মিলবে বলে মনে হয় না'।
