Skip to main content
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
The Business Standard বাংলা

ভাটিয়ারি: এখনও যেখানে মেলে বিদেশি জাহাজের আসবাব-পণ্য

সাধারণত, কোনো জাহাজ পৌঁছানোর এক সপ্তাহ কিংবা দশ দিনের মধ্যেই শুরু হয় ভাঙার প্রক্রিয়া। এরপর নিলামের ডাক দেন শিপইয়ার্ডের মালিক। নিলামে জাহাজের প্রতিটি অংশ—লোহার কাঠামো থেকে শুরু করে ফার্নিচার, কমোড-বেসিন, বৈদ্যুতিক তার, ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি—সবই উঠে আসে বিক্রির তালিকায়। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস থেকে শুরু করে শৌখিন পণ্য—কী নেই সেই তালিকায়!
ভাটিয়ারি: এখনও যেখানে মেলে বিদেশি জাহাজের আসবাব-পণ্য

ফিচার

রাফিয়া মাহমুদ প্রাত
26 April, 2025, 01:50 pm
Last modified: 26 April, 2025, 01:48 pm

Related News

  • ‘নো করিডর, নো পোর্ট’: ২৭-২৮ জুন রোডমার্চ করবেন বামপন্থীরা
  • চট্টগ্রামে কোরবানির পশুর চামড়া বিক্রি না হওয়ায় এতিমখানায় দান, লোকসানে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা
  • চাটগাঁইয়াদের চোখে ‘ভইঙ্গা’ কারা? কেনই-বা এই নাম?
  • মুন্সীগঞ্জ, ফরিদপুর, সাতক্ষীরা, চট্টগ্রামের বিভিন্ন গ্রামে সৌদির সঙ্গে মিল রেখে আজ ঈদুল আজহা উদযাপন
  • কালুরঘাট সেতুতে সিএনজি অটোরিকশায় ঢাকা অভিমুখী ট্রেনের ধাক্কা, নিহত ৩

ভাটিয়ারি: এখনও যেখানে মেলে বিদেশি জাহাজের আসবাব-পণ্য

সাধারণত, কোনো জাহাজ পৌঁছানোর এক সপ্তাহ কিংবা দশ দিনের মধ্যেই শুরু হয় ভাঙার প্রক্রিয়া। এরপর নিলামের ডাক দেন শিপইয়ার্ডের মালিক। নিলামে জাহাজের প্রতিটি অংশ—লোহার কাঠামো থেকে শুরু করে ফার্নিচার, কমোড-বেসিন, বৈদ্যুতিক তার, ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি—সবই উঠে আসে বিক্রির তালিকায়। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস থেকে শুরু করে শৌখিন পণ্য—কী নেই সেই তালিকায়!
রাফিয়া মাহমুদ প্রাত
26 April, 2025, 01:50 pm
Last modified: 26 April, 2025, 01:48 pm

সীতাকুণ্ডের উপকূলে ভিড়েছে একটি রাশিয়ান স্ক্র্যাপ জাহাজ। মালবাহী এই বিশাল জাহাজটির ওজন দুই লাখ টনেরও বেশি। এটি আমদানি করেছে ক্রিস্টাল শিপার্স লিমিটেড শিপইয়ার্ড।

সাধারণত, কোনো জাহাজ পৌঁছানোর এক সপ্তাহ কিংবা দশ দিনের মধ্যেই শুরু হয় ভাঙার প্রক্রিয়া। এরপর নিলামের ডাক দেন শিপইয়ার্ডের মালিক। নিলামে জাহাজের প্রতিটি অংশ—লোহার কাঠামো থেকে শুরু করে ফার্নিচার, কমোড-বেসিন, বৈদ্যুতিক তার, ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি—সবই উঠে আসে বিক্রির তালিকায়। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস থেকে শুরু করে শৌখিন পণ্য—কী নেই সেই তালিকায়!

এসব পণ্য বিক্রির জন্য আহ্বান করা হয় টেন্ডার। যার দর সবচেয়ে বেশি, তিনিই পেয়ে যান পছন্দের জিনিস। কখনও পুরো লট কিনে নিতে হয়, আবার কখনও বিক্রি হয় আলাদাভাবে। যারা নিলামে মালামাল সংগ্রহ করেন, তাদের কাছ থেকে কিনে নেন ছোট ছোট ব্যবসায়ীরা।

জাহাজের এসব পণ্যের জন্য চট্টগ্রাম শহর তো বটেই, আশেপাশের জেলা থেকেও মানুষ ছুটে আসেন সীতাকুণ্ডের ভাটিয়ারিতে। ভাঙা জাহাজের পুরনো জিনিসপত্র ঘিরে এ এলাকায় গড়ে উঠেছে প্রায় হাজারখানেক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, যেখানে বছরে লেনদেন হয় কয়েক কোটি টাকার।

ভাটিয়ারির দোকানগুলোয় মেলে জাহাজের ব্যবহৃত আসবাবপত্র—খাট, কিচেন সিংক, বেসিন, বাথটাব, সিঁড়ি, তালা, শিকল, দড়ি কিংবা ফুলদানির মতো বাহারি সামগ্রী। তবে শুধু ব্যবহৃত জিনিসই নয়—মেলে অব্যবহৃত সাবান, টুথপেস্ট, বিস্কুটসহ নানা প্রয়োজনীয় পণ্যও। এসবের একাংশ রপ্তানি করা হয় বিদেশে, বাকিগুলো চলে যায় স্থানীয় ক্রেতাদের হাতে।

ইয়ার্ড থেকে সংগ্রহ করা এসব সামগ্রীর বাজার জমজমাট। বসতবাড়ি, অফিস, দোকান কিংবা রেস্টুরেন্ট সাজানোর প্রয়োজনে অনেকেই ছুটে আসেন ভাটিয়ারিতে। এসব পণ্যের বিশেষত্ব হলো—দাম তুলনামূলক কম, কিন্তু টেকসই।

যেখানে কাঠের একটি আসবাবের সেট বাজারে পড়ে ৮০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা, সেখানে চলনসই কিন্তু ভালো মানের এক সেট মিলতে পারে মাত্র ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকায়। দামি আসবাবের মতো চকমকে না হলেও, গৃহসজ্জার জন্য যথেষ্ট কার্যকর ও রুচিশীল এসব পণ্য।

ভাটিয়ারিতে অবস্থিত ফার্নিচারের দোকান 'মেসার্স জে. কে. ট্রেডার্স'-এর মালিক মোহাম্মদ কায়সার বলেন, "আমাদের এখানে জাহাজ থেকে আসা সোফা, বক্স খাট, টি টেবিল, রিডিং টেবিল, ড্রেসিং টেবিল, ওয়ারড্রোব, আলমারি, বুকসেলফসহ ঘর সাজানোর প্রায় সব ধরনের ফার্নিচার পাওয়া যায়। হাজার টাকা দামের পণ্য যেমন আছে, তেমনি লাখ টাকার ওপরে দামি ফার্নিচারও আছে।"

তিনি জানান, নতুন সংসার শুরু করছেন এমন অনেকেই কিংবা যারা শোরুম থেকে ফার্নিচার কেনার মতো সামর্থ্য বা ইচ্ছা রাখেন না, তারা এখান থেকেই প্রয়োজনীয় জিনিস সংগ্রহ করেন।

চট্টগ্রাম বিভাগের বাইরেও রয়েছে এই বাজারের কদর। ঢাকা, এমনকি দেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকেও মানুষ এসে কেনাকাটা করেন। অনেকে আবার অনলাইনে ছবি বা ভিডিও দেখে অর্ডারও দিয়ে থাকেন। তবে কায়সারের মত, "ছবির সঙ্গে বাস্তব পণ্যের রঙ বা ফিনিশে পার্থক্য থেকে যায়, তাই অনলাইন বিক্রিতে আমি একটু সতর্ক থাকি।"

তবে সম্প্রতি জাহাজের মালামাল বিক্রির জন্য কিছু অনলাইন গ্রুপ ও ফেসবুক পেজ সক্রিয় হয়ে উঠেছে, যারা এসব পণ্য দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছে দিচ্ছে।

দামে কম, মানেও ভালো

চট্টগ্রাম শহরে পঞ্চাশোর্ধ্ব দিলারা জামান ছেলের হোস্টেলের জন্য একটি ফ্রিজ কিনতে গিয়েছিলেন সীতাকুণ্ডের বাজারে। তবে শুধু ফ্রিজেই থেমে থাকেননি—সঙ্গে কিনে ফেলেছেন ঘর সাজানোর কিছু শোপিস আর শৌখিন ক্রোকারিজও।

"জাহাজের জিনিসগুলো বেশ মজবুত হয়," বললেন দিলারা। "ছেলের হোস্টেলে তো আর সৌন্দর্যের দরকার নেই, তাই কম দামে একটা ভালো ফ্রিজ খুঁজছিলাম। নিলাম 'কেলন' নামের একটা ফ্রিজ। আগে কখনও শুনিনি এই ব্র্যান্ডের নাম, কিন্তু দেখে মনে হলো খারাপ না। তার ওপর, আগে যেসব জাহাজের জিনিস নিয়েছি, সবই ভালো সার্ভিস দিয়েছে।"

তিনি জানান, ফ্রিজটির দাম চাওয়া হয়েছিল ১০ হাজার টাকা, কিন্তু তিনি কিনেছেন ৮ হাজারে। "বাইরের দোকানে এই দামে তো কোনোভাবেই পেতাম না,"—বললেন তিনি।

জাহাজভাঙা জিনিসপত্রের বৈচিত্র্যও কম নয়। নিত্যব্যবহার্য জিনিস থেকে শুরু করে শৌখিন সামগ্রী—সবই মেলে এই বাজারে। শুধু জাহাজের জিনিস দিয়েই চাইলে সাজিয়ে ফেলা যায় একটি ঘর কিংবা পুরো রেস্টুরেন্ট।

এ নিয়ে কথা হয় মো. মিজানের সঙ্গে। সীতাকুণ্ডের মাদাম বিবির হাটে তার দোকান। দেশের নানা প্রান্তে রেস্টুরেন্টের জন্য জাহাজের কিচেন আইটেম ও শোপিস সরবরাহ করেন তিনি।

"আমাদের কাছ থেকে শুধু ঘরের জন্য নয়, বহু রেস্টুরেন্টের মালিকও শোপিস আর ক্রোকারিজ কিনে নিয়ে যান," জানালেন মিজান। "এখান থেকে কেনা সুবিধার, কারণ খরচটা অনেক কম পড়ে। যেমন– গতকাল এক গ্রাহক ৩০ হাজার টাকার ক্রোকারিজ কিনে নিলেন। তার আগের দিন আরেকজন ১৮ হাজার টাকার শোপিস নিয়েছেন। এমনকি অনেক বিদেশিও আগ্রহ দেখান এসব শৌখিন পণ্যে।"

তবে সাম্প্রতিক সময়ে বাজারে জাহাজের পণ্যের সরবরাহ কিছুটা কমে গেছে বলে জানালেন তিনি।

"করোনার পর থেকে, তার ওপর ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ, ডলার সংকট—সব মিলিয়ে জাহাজ কম আসছে। ফলে পণ্যও কম। তাই এখন আমরা অন্য উৎসের আইটেমও বিক্রি করি। তবে যারা জাহাজের পণ্য কিনতে আসেন, পছন্দ হলে তারা অন্য জিনিসও নিয়ে যান,"—যোগ করলেন মিজান।

শুধু আসবাব নয় জাহাজে থাকে ল্যাপটপ, কম্পিউটার, ওয়াশিং মেশিন, ব্লেন্ডার, ওভেন, টিভি, ফ্রিজসহ নানা ধরনের ইলেকট্রিক ও ইলেকট্রনিক পণ্য। এসবের চাহিদাও কম নয়।

কথা হয় জাহানারা বেগমের সঙ্গে। নিজের গাড়ি দোকানের সামনে দাঁড় করিয়ে একে একে কিনে নিলেন একটি ওভেন, একটি ওয়াশিং মেশিন এবং একটি সাউন্ড বক্স। তিনি জানান, গ্রামের বাড়ির জন্যই নিচ্ছেন ওভেন ও ওয়াশিং মেশিন। 

"সবসময় তো গ্রামে থাকা হয় না। তাই দরকারি কিছু জিনিস রেখে যাচ্ছি। জাহাজের ব্যবহৃত পণ্যগুলো বেশ মজবুত, দামেও ছাড় মেলে," বললেন তিনি। "আর ছেলের জন্য সাউন্ড বক্স। এবার রেখে যাচ্ছি গ্রামে, না হলে প্রতি বারই টানাটানির ঝামেলা হয়।"

দোকানেই দেখা গেল এক তরুণ দূরবীক্ষণ যন্ত্র—বাইনোকুলার হাতে নিয়ে পরীক্ষা করছেন। দাম মাত্র দুই হাজার টাকা, সঙ্গে আছে বহনের জন্য একটি ব্যাগও। দোকানদার বললেন, "ইয়ং ছেলেমেয়ে বা যারা একটু শৌখিন, তারাই এসব কিনে নেয়। হবি আইটেম হিসেবে ভালোই চলে।"

এদিকে যেসব ইলেকট্রনিক পণ্য একেবারে ব্যবহার অনুপযোগী—তাও কিন্তু ফেলে দেওয়া হয় না। বরং সেগুলো ভেঙে সংগ্রহ করা হয় রুপা, তামা, পিতল কিংবা অল্প পরিমাণ সোনা পর্যন্ত। 

দোকানদার আসাদ জানালেন, "ভাঙা যন্ত্রপাতির ভেতর থেকেও আমরা মূল্যবান ধাতু বের করে নিই। এটা একধরনের রিসাইক্লিংই বলতে পারেন।"

বৈদ্যুতিক তারের বিশাল বাজার

স্ক্র্যাপ জাহাজ থেকে সংগ্রহ করা বৈদ্যুতিক তারের বিস্তৃত বাজার রয়েছে এখানে। কলকারখানা, দোকান, পল্লীবিদ্যুৎ প্রকল্প কিংবা বাসাবাড়ি—সবখানেই চাহিদা আছে এই তারের। এসব তার একাধিকবার হাত বদল হয়ে পৌঁছে যায় গ্রাহকের কাছে।

সীতাকুণ্ডের কুমিরা, বারআউলিয়া, মাদাম বিবির হাট, ভাটিয়ারী এবং শহরের কদমতলীতে গড়ে উঠেছে বৈদ্যুতিক তারের পাইকারি দোকান। এসব দোকানে ১৫ ধরনের বেশি ক্যাবল বিক্রি হয়। কয়েকজন ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, স্ক্র্যাপ তারের চাহিদা এতটাই বেশি যে, একটি দোকান থেকেই প্রতিদিন গড়ে লাখ টাকারও বেশি বিক্রি হয়।

দামের ক্ষেত্রে তারের ধরন অনুযায়ী ভিন্নতা রয়েছে—কেজিতে ৭০০-৮০০ টাকা থেকে শুরু করে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়ে থাকে। কিছু তার আবার বিক্রি হয় ফুট দরে। কম দামে ভালো মানের তার পাওয়া যায় বলেই শুধু চট্টগ্রাম নয়, ঢাকার ধোলাইখালসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ব্যবসায়ীরা নিয়মিত আসেন সীতাকুণ্ডে।

কোনো কিছুই ফেলনা নয়

জাহাজ থেকে আসা সিঁড়িরও রয়েছে আলাদা চাহিদা—বিশেষ করে যেখানে অল্প জায়গায় দোতলা বা মেজানাইন ফ্লোর তৈরি হয়। মাদাম বিবির হাটেই রয়েছে প্রায় ১০–১২টি সিঁড়ির দোকান। তবে সব সিঁড়ি সরাসরি জাহাজ থেকে নয়—কিছু তৈরি করা হয় জাহাজের লোহা বা লোহার পাত দিয়ে।

জাহাজ থেকে সংগৃহীত সিঁড়িগুলো চওড়ায় কম হলেও ওজনে ভারী এবং টেকসই। এসব সিঁড়ি প্রতি ফুট বিক্রি হয় ১,৬০০ থেকে ২,০০০ টাকায়। আবার পুরনো সিঁড়ি কেটে বা স্ক্র্যাপ লোহা দিয়ে নতুন করে তৈরি করা সিঁড়ির দাম পড়ে ১,৪০০–১,৫০০ টাকা ফুট। স্থানীয় লোহায় তৈরি সিঁড়ি তুলনামূলক কিছুটা সস্তা— এই সিঁড়ি প্রতি ফুট ৭০০–৮০০ টাকায় বিক্রি হয়।

এসব সিঁড়ির ক্রেতা মূলত বসতবাড়ি, দোকান কিংবা রেস্তোরাঁর মালিকরা। সীমিত স্থানে কার্যকর সমাধান হওয়ায় এসব সিঁড়ির কদর দিন দিন বাড়ছে।

শুধু রান্নাঘরের ফিটিংস কিংবা ওয়াশরুম সামগ্রীই নয়—জাহাজ থেকে পাওয়া যায় চিকিৎসা সরঞ্জামও, যাকে স্থানীয়রা বলেন 'ডক্টর টুলস'। যেহেতু সমুদ্রে ভাসমান অবস্থায় হাসপাতালে যাওয়ার সুযোগ থাকে না, তাই জাহাজেই রাখা হয় প্রয়োজনীয় মেডিকেল ইকুইপমেন্ট। নিলামে একসঙ্গে কিনে নেওয়া এসব যন্ত্রপাতির বড় অংশ পরবর্তীতে খুচরা বাজারে বিক্রি হয়।

জাহাজের স্ক্র্যাপে মেলে দুর্লভ সব শোপিস, আর তারই সঙ্গে চিত্রকর্ম—যা দেখতে গেলে বোঝার উপায় নেই আসল না নকল। প্রিন্ট হোক কিংবা কপি, ফ্রেমিং ও বাঁধাইয়ের কারসাজিতে সেগুলো হয়ে ওঠে অভিজাত অন্দরসজ্জার উপকরণ।

এসব চিত্রকর্মে যেমন থাকে ক্লদ মোনে বা লিওনার্দো দা ভিঞ্চির বিখ্যাত কাজের প্রতিলিপি, তেমনি পাওয়া যায় বিদেশি অখ্যাত শিল্পীদের আঁকা ছবি, লিথোগ্রাফ, ছাপচিত্র, স্ক্রল ইত্যাদি। অন্যান্য জিনিসের মতো এগুলোও নিলামে সংগ্রহ করেন ব্যবসায়ীরা এবং পরে খুচরায় বিক্রি করেন।

চিত্রকর্মের দাম শুরু হয় হাজার খানেক টাকা থেকে, কিছু কিছু চলে যায় ২০ হাজার পর্যন্ত। হাতে আঁকা ছবির দাম তুলনামূলক বেশি। আর প্রিন্ট বা কপির দাম নির্ভর করে মূলত ফ্রেমের মানের ওপর। শৌখিন মানুষ, শিল্পপ্রেমী, সংগ্রাহক ছাড়াও হোটেল-রেস্তোরাঁ ও বাড়ির অন্দরসজ্জার জন্য অনেকে এসব ছবি কিনে নেন। কেউ কেউ উপহার হিসেবেও সংগ্রহ করেন—জানালেন ২৫ বছর ধরে জাহাজভিত্তিক শোপিস ও শৌখিন পণ্যের ব্যবসা করা আবদুল হাদি।

হাদির দোকানে দেখা গেল কিছু পুরনো বন্দুকও। কিছু কিছু বন্দুক ব্রিটিশ আমলের পুরনো জাহাজ থেকে এসেছে বলে জানান তিনি। "যারা শিকার করেন, তারা যেমন এগুলো কেনেন, তেমনি কেউ কেউ সংগ্রহেও রাখেন," বললেন হাদি।

তবে এসব পণ্যের চাহিদা তুলনামূলক কম হওয়ায় খুব বেশি দোকানে দেখা যায় না। ধুলো পড়া এক কোনায় টাঙানো থাকে ছবির ফ্রেম আর পুরনো বন্দুক।

কেন এভাবে ফেলে রাখা?— জানতে চাইলে উত্তরে হাদি বলেন, "এই জিনিস সবার জন্য না। যারা নেবে, তারা এই ধুলোর মধ্য থেকেই তুলে নেবে!"

'জাহাজের মাল' বলেও চালিয়ে দেন অনেকে

শুরুটা হয়েছিল ষাটের দশকে। গ্রিক জাহাজ 'এমডি আলপাইন' একটি ঘূর্ণিঝড়ে আটকে পড়ে সীতাকুণ্ড উপকূলে। সেই জাহাজই ভেঙে প্রথম শুরু হয় এ অঞ্চলে স্ক্র্যাপিংয়ের যাত্রা। তবে বাণিজ্যিকভাবে শিপ ব্রেকিংয়ের পথচলা শুরু হয় ১৯৭৪ সালে, পাকিস্তানি জাহাজ 'আল আব্বাস' দিয়ে। 

মুক্তিযুদ্ধকালীন বোমা হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত জাহাজটি স্ক্র্যাপ হিসেবে কিনে নেয় কর্ণফুলী মেটাল ওয়ার্কস লিমিটেড। সেখান থেকেই শুরু বাংলাদেশে বাণিজ্যিকভাবে জাহাজ ভাঙা শিল্পের।

আশির দশক থেকে এ শিল্প ধীরে ধীরে গতি পায়, আর সময়ের সঙ্গে তৈরি হয় বিশাল এক বাজার। আজ সারাদেশেই রয়েছে জাহাজভাঙা পণ্যের কদর। একশ টাকার ছোট পণ্য থেকে শুরু করে কোটি টাকার জিনিস—সবই মেলে এই বাজারে। স্থায়িত্ব, ব্যবহারযোগ্যতা আর চাহিদা অনুযায়ী এসব পণ্যের দাম নির্ধারিত হয়। তবে দাম চূড়ান্ত করার আগে চলে দর-কষাকষি।

সীতাকুণ্ডের ভাটিয়ারীর বাইরে চট্টগ্রামের পাহাড়তলী সিডিএ মার্কেট, সাগরিকা, পশ্চিম মাদারবাড়ি, কদমতলী ও মুরাদপুরে ভিন্ন ভিন্ন ধরনের পণ্য বিক্রি হয়। এমনকি ঢাকার ধোলাইখাল ও সদরঘাটেও বিক্রি হয় চট্টগ্রাম থেকে আনা স্ক্র্যাপ জাহাজের মালামাল।

তবে সাম্প্রতিক সময়ে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ, ডলার সংকটসহ নানা কারণে কমেছে স্ক্র্যাপ জাহাজের আমদানি। এর সরাসরি প্রভাব পড়েছে পুরনো ফার্নিচার, ইলেকট্রিক পণ্য, স্ক্র্যাপ লোহাসহ জাহাজভিত্তিক পণ্যের দোকান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে।

ফলে অনেক দোকানদার বাধ্য হয়ে এখন জাহাজের মালামালের পাশাপাশি অন্য উৎসের পণ্যও বিক্রি করছেন। কেউ হয়তো ক্রেতাকে তা জানিয়ে দিচ্ছেন, আবার কেউ চুপিচুপি চালিয়ে দিচ্ছেন 'জাহাজের মাল' নামেই।


ছবি: রফিয়া মাহমুদ প্রাত/দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড
 

Related Topics

টপ নিউজ

জাহাজ ভাঙা / জাহাজ ভাঙা শিল্প / চট্টগ্রাম / ভাটিয়ারী

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.

MOST VIEWED

  • পাঁচ ব্যাংক মিলে হচ্ছে এক ব্যাংক, চাকরি হারাবেন না কর্মীরা: গভর্নর
  • ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার তালিকায় আরও ৩৬ দেশ যুক্ত করার কথা ভাবছে ট্রাম্প প্রশাসন
  • ইসরায়েল-ইরান যুদ্ধ যেভাবে শেষ হতে পারে...
  • শ্রেণিকরণের আওতায় আসায় প্রথম তিন মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৭৪,৫৭০ কোটি টাকা
  • কারাগারে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানের লাশ উদ্ধার, 'ফাঁস দেওয়ার' দাবি কারা কর্তৃপক্ষের
  • ইসরায়েল হামলা বন্ধ করলে, আমরাও বন্ধ করব: ইরান

Related News

  • ‘নো করিডর, নো পোর্ট’: ২৭-২৮ জুন রোডমার্চ করবেন বামপন্থীরা
  • চট্টগ্রামে কোরবানির পশুর চামড়া বিক্রি না হওয়ায় এতিমখানায় দান, লোকসানে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা
  • চাটগাঁইয়াদের চোখে ‘ভইঙ্গা’ কারা? কেনই-বা এই নাম?
  • মুন্সীগঞ্জ, ফরিদপুর, সাতক্ষীরা, চট্টগ্রামের বিভিন্ন গ্রামে সৌদির সঙ্গে মিল রেখে আজ ঈদুল আজহা উদযাপন
  • কালুরঘাট সেতুতে সিএনজি অটোরিকশায় ঢাকা অভিমুখী ট্রেনের ধাক্কা, নিহত ৩

Most Read

1
অর্থনীতি

পাঁচ ব্যাংক মিলে হচ্ছে এক ব্যাংক, চাকরি হারাবেন না কর্মীরা: গভর্নর

2
আন্তর্জাতিক

ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার তালিকায় আরও ৩৬ দেশ যুক্ত করার কথা ভাবছে ট্রাম্প প্রশাসন

3
আন্তর্জাতিক

ইসরায়েল-ইরান যুদ্ধ যেভাবে শেষ হতে পারে...

4
অর্থনীতি

শ্রেণিকরণের আওতায় আসায় প্রথম তিন মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৭৪,৫৭০ কোটি টাকা

5
বাংলাদেশ

কারাগারে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানের লাশ উদ্ধার, 'ফাঁস দেওয়ার' দাবি কারা কর্তৃপক্ষের

6
আন্তর্জাতিক

ইসরায়েল হামলা বন্ধ করলে, আমরাও বন্ধ করব: ইরান

The Business Standard
Top

Contact Us

The Business Standard

Main Office -4/A, Eskaton Garden, Dhaka- 1000

Phone: +8801847 416158 - 59

Send Opinion articles to - oped.tbs@gmail.com

For advertisement- sales@tbsnews.net

Copyright © 2022 THE BUSINESS STANDARD All rights reserved. Technical Partner: RSI Lab