বগুড়া, ফেনী, দিনাজপুরের তিন আসনে ভোটের কার্যক্রম চলবে: রিটার্নিং অফিসার
ত্রয়োদেশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফেনী-১, বগুড়া-৭ ও দিনাজপুর-৩ আসনে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া হয়েছে।
গতকাল সোমবার মনোনয়নপত্র জমার শেষ সময় ছিল। বগুড়া-৭ আসনে ৫ জন, দিনাজপুর-৩ আসনে মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে ১০ জনের, ফেনী-১ আসনে ১০ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের আগেই আজ ভোর ৬টায় মারা যান বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।
এসব আসনে বিএনপির একাধিক প্রার্থী রয়েছেন, যদিও এখনো ইসির বাছাই শেষে বৈধ প্রার্থীদের তালিকা চূড়ান্ত হয়নি।
বাছাইয়ের সময় সব ঠিক থাকলে মনোনয়ন বৈধ ঘোষণা করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা; আইন-বিধি অনুযায়ী ত্রুটি পেলে মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়।
রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে আপিলের সুযোগ রয়েছে; এরপর প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সময় শেষে বৈধ প্রার্থীদের তালিকা করা হয়। এসব প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ দেন রিটার্নিং অফিসার।
বৈধ প্রার্থীর মৃত্যু হলে নির্বাচন কার্যক্রম বাতিল করে পুনঃতফসিল করার বিধান রয়েছে। এবার বাছাইয়ের আগেই বিএনপি চেয়ারপারসনের মৃত্যু হওয়ায় তার মনোনয়নপত্র স্থগিত থাকবে, তবে নির্বাচন বন্ধ হবে না বলে জানিয়েছেন রিটার্নিং অফিসার।
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২-এর অনুচ্ছেদ ১৭(১) অনুযায়ী, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সময়সীমা পার হওয়ার পর যদি কোনো বৈধভাবে মনোনীত প্রার্থী মৃত্যুবরণ করেন, কিংবা অনুচ্ছেদ ৯১ক ও ৯১ঙ অনুযায়ী কারো প্রার্থিতা বাতিল হয়, তবে রিটার্নিং কর্মকর্তা গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ওই আসনের নির্বাচন কার্যক্রম বাতিল করবেন। আইনে অনুযায়ী, নির্বাচন বাতিল হলে কমিশনকে তাৎক্ষণিকভাবে অবহিত করতে হবে এবং কমিশন নতুন নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করবে।
এবিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনের জ্যেষ্ঠ নির্বাচন কমিশনার (ইসি) আব্দুর রহমানেল মাছউদ বলেন, "আইনে বলা আছে বৈধ প্রার্থী মৃত্যুবরণ করলে তফসিল বাতিল হবে। সেক্ষেত্রে খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে এই তফসিলে কোনো প্রভাব পড়বে না। কারণ, উনি এখনো বৈধ প্রার্থী হননি। এ ছাড়া খালেদা জিয়ার অবস্থা বিবেচনায় বিএনপি উনার আসনগুলোতে বিকল্প প্রার্থী রেখেছে। কাজেই এটা নিয়ে সমস্যা হবে না বলে আমার মত।"
ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে ভোটে অংশ নেওয়া প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই কাযক্রম শুরু হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) থেকে থেকে শুরু হয়ে যা আগামী ৪ জানুয়ারি পর্যন্ত চলবে। ১২ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে ৩০০ আসনে আড়াই সহস্রাধিক মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে। বাছাই, আপিল, নিষ্পত্তি শেষে প্রত্যাহারের শেষ সময় রয়েছে ২০ জানুয়ারি। ২১ জানুয়ারি প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে। মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের আগে বিএনপি চেয়ারপারসনের মৃত্যু হওয়ায় ভোটের কাযক্রমে প্রভাব পড়বে না বলে জানান সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসাররা।
বাছাই শেষে প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীর মৃত্যু হলে সংশ্লিষ্ট নির্বাচন কার্যক্রম বাতিল করে ইসিকে অবহিত করার বিধান রয়েছে।
এবিষয়ে জানতে চাইলে মঙ্গলবার বগুড়া জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং অফিসার মো. তৌফিকুর রহমান বলেন, "বাছাইয়ের আগে মৃত্যু হওয়ায় উনার (বিএনপি চেয়ারপার্সনের) মনোনয়নপত্র বাছাইয়ে স্থগিত থাকবে। এ আসনে একাধিক প্রার্থী রয়েছে দলের, তাদের মনোনয়নপত্র রয়েছে। এখনও প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে বগুড়া-৭ আসনে নির্বাচন কার্যক্রমে প্রভাব পড়বে না, ভোটের কাজ চলবে।"
তিনি জানান, আইন-বিধি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় তথ্যসংক্রান্ত মনোনয়নপত্র বাছাই করা হচ্ছে। ৪ জানুয়ারির মধ্যে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।
ফেনী জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং অফিসার মনিরা হক বলেন, "ভোটের কার্যক্রম চলবে। ফেনী-১ আসনে বিএনপির একাধিক প্রার্থীও রয়েছে। দলীয় একাধিক মনোনয়নপত্রের বিষয়ে আরপিও অনুযায়ী একজন চূড়ান্ত প্রার্থী করা হবে। জমা দেওয়া মনোনয়নপত্রগুলো যোগ্যতা-অযোগ্যতার তথ্য যাচাই করে রাখা হচ্ছে, প্রার্থীদের উপস্থিতিতে ফেনীর তিনটি আসনের মনোনয়নপত্রের সিদ্ধান্ত ৪ জানুয়ারি ঘোষণা করা হবে।"
ইসির নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ চলমান রয়েছে জানান তিনি।
দিনাজপুর জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং অফিসার মো. রফিকুল ইসলাম জানান, "দিনাজপুরের নির্বাচন কার্যক্রমে কোনো সমস্যা নেই। মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের কাজগুলো চলছে।"
বগুড়া ও দিনাজপুর খালেদা জিয়ার বিকল্প প্রার্থী
বগুড়া-৭ (শাহজাহানপুর-গাবতলী) আসনে বিএনপি চেয়ারপারসন ও দিনাজপুরে ৩ আসনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মনোনয়নপত্র দাখিল করা হয়েছে। দুটি আসনেই 'বিকল্প প্রার্থী' রেখেছে বিএনপি।
বগুড়া-৭ আসনে বিকল্প প্রার্থী হিসেবে গাবতলী উপজেলা বিএনপির সভাপতি মোর্শেদ মিল্টনও মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। গতকাল খালেদা দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক সংসদ সদস্য হেলালুজ্জামান তালুকদারসহ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারি রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়ন দাখিল করেন।
মনোনয়ন তোলার পর মোরশেদ মিল্টন বলেছিলেন, "দলের হাইকমান্ডের সিদ্ধান্তেই চেয়ারপার্সনের আসনে আমার পক্ষে আরও একটি মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করা হয়েছে।"
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দিনাজপুর-৩ (সদর) অর্থাৎ বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করা আসনে বিকল্প প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম। তিনি বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এবং দিনাজপুর পৌরসভার টানা তিনবারের নির্বাচিত মেয়র ছিলেন।
