হাদি হত্যার বিচারের দাবিতে দেশের বিভিন্ন জায়গায় অবরোধ, খুলনায় অনশন
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদি হত্যার বিচার ও খুনিদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবিতে উত্তাল হয়ে উঠেছে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত। রোববার (২৮ ডিসেম্বর) রাজশাহী ও সিলেটে সড়ক-মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থী ও সংগঠনের কর্মীরা। একই দাবিতে খুলনায় অনির্দিষ্টকালের অনশন কর্মসূচি পালন করছেন জুলাই অভ্যুত্থানের আহত যোদ্ধারা।
সিলেটে দুপুরের পর থেকে নগরীর চৌহাট্টা এলাকায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করে ইনকিলাব মঞ্চ, শাবিপ্রবি ও সিলেটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এ সময় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
সমাবেশে বক্তারা অভিযোগ করেন, সরকার হাদি হত্যার বিচারে টালবাহানা করছে এবং খুনিরা দেশ ছেড়ে পালানোয় জনমনে উৎকণ্ঠা তৈরি হয়েছে। সরকারের প্রতি কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়ে তারা বলেন, 'আগামী ৩ দিনের মধ্যে চার্জশিট এবং ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বিচার কাজ সম্পন্ন করতে হবে। বিচারিক কার্যক্রম ত্বরান্বিত না হওয়া পর্যন্ত রাজপথে অবস্থান কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।'
খুলনায় জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে অনির্দিষ্টকালের অনশন কর্মসূচি পালন করছেন জুলাই বিপ্লবের আহত যোদ্ধারা। রবিবার দুপুর থেকে শুরু হওয়া এই কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন আহত জুলাইযোদ্ধা মো. হুজাইফা, নূরুজ্জামান নাবিল, সিমান্ত, জাকিয়া আক্তার ও মিহিরিমা তাসনিম।
অনশনরতরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, 'জুলাই আন্দোলনে শহীদ উসমান হাদি আত্মত্যাগ করলেও এখনো তার হত্যাকারীরা আইনের আওতায় আসেনি যা অত্যন্ত দুঃখজনক। প্রশাসনের পক্ষ থেকে কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ায় আমরা অনশনে বসতে বাধ্য হয়েছি।' অবিলম্বে হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার না করা হলে আরও কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন তারা।
অন্যদিকে, রাজশাহীতে দুপুর পৌনে ৩টা থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক ও নগরীর তালাইমারি মোড়ে অবস্থান নিয়ে রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করেন বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। এতে নগরজুড়ে ব্যাপক যানজট ও ভোগান্তির সৃষ্টি হয়।
সমাবেশে বক্তারা হাদি হত্যার সঙ্গে ভারত ও আওয়ামী লীগের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ তোলেন। তারা বলেন, 'শহীদ হাদির হত্যাকারীরা চিহ্নিত। তারা শুধু একটি দলের নয়, ভারত তাদের আশ্রয় দিয়েছে।'
এ সময় আন্দোলনকারীরা 'দিল্লী না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা', 'হাউজ অব টেরোরিস্ট, ইন্ডিয়া ইন্ডিয়া', 'লীগ ধর, জবাই কর', 'আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাইরে' সহ ভারত ও আওয়ামী লীগবিরোধী নানা স্লোগান দেন।
বিকেল থেকে টঙ্গী এলাকা অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন আন্দোলনকারীরা। গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ জানায়, এর ফলে উত্তরা থেকে গাজীপুরের বোর্ডবাজার পর্যন্ত রাস্তায় হাজার হাজার যানবাহন আটকা পড়ে। পাশাপাশি উত্তরার বিএনএস সেন্টারের সামনেও বিক্ষোভ চলে।
এদিকে নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে ছাত্র-জনতা। বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে সাড়ে ৪টা পর্যন্ত চলা এই অবরোধে মহাসড়কের উভয় লেনে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। তবে এ সময় অ্যাম্বুলেন্স চলাচলে ছাড় দেন আন্দোলনকারীরা।
নারায়ণগঞ্জ জেলা এনসিপির সমন্বয় কমিটির সদস্য জাবেদ আলম ও যুবশক্তির সংগঠক নীরব রায়হান জানান, জনদুর্ভোগ বিবেচনায় এক ঘণ্টা পর তারা সড়ক ছেড়ে শাহবাগের উদ্দেশে রওনা হন। নারায়ণগঞ্জ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) তারেক মেহেদী জানান, আন্দোলনকারীরা সরে যাওয়ার পর যানচলাচল স্বাভাবিক হয়েছে।
