জামায়াতের সঙ্গে আসন সমঝোতা নিয়ে আলোচনা এনসিপির, এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নির্বাহী কমিটিতে জামায়াতের সাথে আসন সমঝোতা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি দলটি। এজন্য দু-একদিন সময় লাগতে পারে বলে জানিয়েছেন এনসিপির নেতারা।
বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) রাতে রাজধানীর বাংলামোটরে এনসিপির অস্থায়ী কার্যালয়ে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। সূত্র জানায়, নির্বাচন-কেন্দ্রিক একটি এজেন্ডা নিয়েই এই আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
নির্বাহী কমিটির আলোচনার বিষয়টি নিশ্চিত করে এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব ও মিডিয়া সেল সম্পাদক মুশফিক উস সালেহীন টিবিএসকে বলেন, 'হ্যাঁ, নির্বাচন, জোট ও রাজনীতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।'
এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার বলেন, বুধবার রাতে তাদের নির্বাহী কমিটির বৈঠকে রাজনৈতিক জোট ও প্রার্থী তালিকা নিয়ে কথা হয়। আলোচনায় জামায়াতের সাথে জোট গঠন অথবা আসন সমঝোতার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হলেও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। আরো দুদিন অপেক্ষা করতে হবে সিদ্ধান্তের জন্য।
এনসিপির আরেক নেতা, যুগ্ম মুখ্য সংগঠক সাইফুল্লাহ হায়দার টিবিএসকে বলেন, 'বিগত দেড় বছর আমরা দেখেছি কীভাবে কিছু দল জুলাইয়ের রক্তস্নাত সিঁড়ি বেয়ে কেবল ক্ষমতায়ই যেতে চায়; রাষ্ট্র, রাজনীতি ও সমাজে সংস্কার প্রশ্নে কারা বাগড়া দিয়েছে। এখন আমরা চারদিক থেকে শুনছি একটা বড় দল "না" ভোটের পক্ষে ক্যাম্পেইন করার জন্য তাদের তৃণমূলের বিভিন্ন জায়গায় বার্তা দিচ্ছে। এনসিপি জুলাইকে পরাজিত হতে দেবে না। রাষ্ট্রের সংস্কার প্রশ্নে কোন আপোষ নেই।'
তিনি আরও বলেন, দলগুলোর মধ্যে সংস্কার প্রশ্নে যাদের অবস্থান এনসিপির কাছাকাছি তাদের সাথে নিয়ে সংস্কার বাস্তবায়নের রাজনীতি এগিয়ে নেবে। এর জন্য যেকোনো সমঝোতাকে এনসিপি স্বাগত জানাবে।
জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল হামিদুর রহমান আজাদ জোট ও প্রার্থী ঘোষণার বিষয়ে টিবিএসকে জানান, ৮ দল বাদেও কয়েকটি দলের সঙ্গে আলোচনা চলমান আছে। খুব দ্রুতই সমঝোতা চূড়ান্ত হবে। দুই দিনের মধ্যে এ বিষয়ে ঘোষণা করতে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
আলোচনা নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া
জামায়াতের সাথে এনসিপির জোট নিয়ে ভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন তরুণ ও ছাত্রনেতারা। বৃহস্পতিবার সকালে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সভাপতি আব্দুল কাদের ফেসবুকে লিখেছেন, তারুণ্যের রাজনীতির কবর রচিত হতে যাচ্ছে। এনসিপি অবশেষে জামাতের সাথেই সরাসরি জোট বাঁধছে।
তিনি লেখেন, 'সারাদেশে মানুষের, নেতাকর্মীদের আশা-আকাঙ্ক্ষাকে জলাঞ্জলি দিয়ে গুটিকয়েক নেতার স্বার্থ হাসিল করতেই এমন আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামীকাল এই জোটের ঘোষণা আসতে পারে। আর এর মধ্য দিয়ে কার্যত এনসিপি জামাতের গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে।'
আব্দুল কদের দাবি করেন, জামায়াতের থেকে এনসিপি চেয়েছিল ৫০ আসন, দরকষাকষির সর্বশেষ পর্যায়ে সেটা ৩০ আসনে গিয়ে চূড়ান্ত হয়েছে। জোটের শর্ত অনুযায়ী এনসিপি বাকি ২৭০ আসনে কোনো প্রার্থী দিতে পারবে না, সেগুলোতে জামায়াতকে সহযোগিতা করবে এনসিপি।
এদিকে এনসিপির সাথে জামায়াতের এই জোট গঠনের আলোচনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জোটসঙ্গী বাংলাদেশ রাষ্ট্র সংষ্কার আন্দোলন। রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দিদার ভূইয়া টিবিএসকে বলেন, তাদের তিন দলের জোট গঠনের আলোচনার মূল ভিত্তিই ছিল বিএনপি-জামায়াতের বলয়ের বাইরে একটি তৃতীয় রাজনৈতিক জোট অথবা শক্তিকে মূলধারায় নিয়ে আসা। সেক্ষেত্রে এনসিপির এই জোট গঠনের প্রচেষ্টাকে আমরা ভালোভাবে নিচ্ছেন না। জোটের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এ ব্যাপারে মিডিয়াকে ব্রিফ করা হবে।
