তারেক রহমানের ফেরা: বসুন্ধরায় তিনশ ফিট সড়ক অগণিত মানুষের উপস্থিতিতে এখন জনসমুদ্র
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে রাজধানীর পূর্বাচলের ৩০০ ফিট সড়ক অগণিত মানুষের উপস্থিতিতে জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছে, তিল পরিমান ঠাই নেই। মঞ্চ প্রস্তুত করে বিশাল সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) সকালে কনকনে শীত উপেক্ষা করেই হাজার হাজার সমর্থক নিজস্ব উদ্যোগে বাস, ট্রাক ও মাইক্রোবাস নিয়ে পূর্বাচলে পৌঁছাচ্ছেন। প্রিয় নেতাকে বরণ করে নিতে নেতাকর্মীদের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা যাচ্ছে।
সকাল ৮টায় তিনশ ফুট সড়ক ও আশপাশের থেকেই কুড়িলসংলগ্ন সংবর্ধনা মঞ্চের সামনে সরেজমিনে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা বিএনপির নেতা–কর্মীদের বিপুল উপস্থিতি দেখা গেছে। মানুষের ঢলে পুরো এলাকা ভরে যায়। মঞ্চের সামনে ও আশপাশে দাঁড়ানোর মতো কোনো জায়গা ছিল না।
এ সময় তারা 'মা–মাটি ডাকছে, তারেক রহমান আসছে', 'তারেক রহমান, বীরের বেশে, আসছে ফিরে বাংলাদেশে', 'তারেক রহমান আসছে, বাংলাদেশ হাসছে'—এমন নানা স্লোগান দেন।
পশ্চিম ও পূর্ব দিকের মহাসড়ক দিয়ে একের পর এক নেতা–কর্মীদের মিছিল আসতে থাকে, মানুষের স্রোত থামেনি। বরিশাল, রাজশাহী, দিনাজপুর, চট্টগ্রাম, খুলনা ও ময়মনসিংহ থেকে বিশেষ ট্রেনে করে নেতা–কর্মীরা বিভিন্ন সময়ে রাতেই ঢাকায় পৌঁছান।
বসুন্ধরার তিনশ ফুট সড়কে সংবর্ধনাস্থল কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। বিমানবন্দর, পূর্বাচল, বনানী ও যমুনা ফিউচার পার্কসহ বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে তারেক রহমানকে শুভেচ্ছা জানিয়ে মিছিল নিয়ে আসেন নেতা–কর্মীরা।
নেতা–কর্মীদের স্লোগানে পুরো এলাকা উৎসবমুখর হয়ে ওঠে। ছোট ছোট মিছিলের সঙ্গে ছিল ব্যান্ড সংগীতের দলও।
গণসংবর্ধনাস্থলকে কেন্দ্র করে পুরো এলাকায় জোরদার করা হয়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা। পুলিশ, র্যাব ও বিজিবিসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন। মঞ্চের দুই পাশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তাঁবু স্থাপন করা হয়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের পাশাপাশি বিএনপির চেয়ারপার্সনের সিকিউরিটি ফোর্সের (সিএসএফ) সদস্যদেরও সেখানে উপস্থিত থাকতে দেখা গেছে।
এর আগে, মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) দিবাগত রাত থেকেই দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে বিএনপি ও এর অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীরা অনুষ্ঠানস্থলে জড়ো হতে শুরু করেন। গতকাল বিকেলে অনুষ্ঠানস্থল ঘুরে দেখা গেছে, কুড়িল বিশ্বরোড থেকে শুরু করে সংবর্ধনা মঞ্চের অনেক দূর পর্যন্ত রাস্তার দুই পাশে তারেক রহমানকে স্বাগত জানিয়ে অসংখ্য ব্যানার ও ফেস্টুন লাগানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর তারেক রহমানের দেশে ফেরাকে স্মরণীয় করে রাখতে বিএনপি এই সরবর্ধনার আয়োজন করেছে। নেতাকর্মীরা বলছেন, প্রিয় নেতাকে সরাসরি দেখতে এবং তাকে স্বাগত জানাতে তারা সব কষ্ট সহ্য করে আগেভাগেই অনুষ্ঠানস্থলে চলে এসেছেন। মঞ্চ নির্মাণসহ আনুষঙ্গিক কাজগুলো দ্রুত শেষ করার জন্য কর্মীরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন।
দীর্ঘ ১৭ বছরের নির্বাসন শেষে আজ দেশে ফিরছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তার এই প্রত্যাবর্তনকে ঘিরে উৎসবমুখর পরিবেশের পাশাপাশি সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ও জনশৃঙ্খলার প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।
ঢাকার উদ্দেশ্যে তিনি গতকাল স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টা ১৫ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় রাত সোয়া ১২টা) বিমান বাংলাদেশের একটি ফ্লাইটে (বিজি ২০২) করে লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দর ত্যাগ করেন। তার সঙ্গে রয়েছেন স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান ও কন্যা জাইমা রহমান। দলীয় সূত্রের খবর অনুযায়ী, তারেক রহমানকে বহনকারী ফ্লাইটটি আজ সকাল ১১টা ৪৫ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করার কথা রয়েছে।
প্রত্যাবর্তনের কর্মসূচি ও পরিকল্পনা সম্পর্কে দলের সূত্র জানিয়েছে, তারেক রহমানের প্রথম ও প্রধান অগ্রাধিকার হলো সরাসরি এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অসুস্থ মা, খালেদা জিয়াকে দেখতে যাওয়া। তবে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী, সমর্থক ও সাধারণ মানুষের উপস্থিতির বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে যাত্রাপথের মাঝামাঝি রাজধানীর 'জুলাই ৩৬ এক্সপ্রেসওয়ে' (৩০০ ফিট) এলাকায় তিনি অতি সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য দেশবাসীর উদ্দেশে কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করবেন। সেখান থেকে হাসপাতাল এবং তারপর সরাসরি গুলশানে নিজ বাসায় যাবেন।
দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এটি কোনো জনসভা বা সংবর্ধনা অনুষ্ঠান নয়, শুধুমাত্র দেশবাসীর প্রতি তার আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ এবং খালেদা জিয়াসহ দেশের সকল মানুষের কল্যাণ কামনায় দোয়ার অনুরোধের একটি সংক্ষিপ্ত কর্মসূচি। এই আয়োজনে তারেক রহমানই একমাত্র বক্তা।
