বরিশালে টিসিবির স্মার্ট কার্ড বিতরণে বিলম্ব, বিপাকে হাজারো মানুষ
বরিশাল নগরীর ধান গবেষণা সড়কের বাসিন্দা আব্দুল ওহাব টিসিবির পণ্য পেতে জুন মাসে আবেদন করেছিলেন। অনলাইনে তার নামে কার্ড নম্বর দেখালেও এখনো কার্ড হাতে না পাওয়ায় টিসিবির পণ্য সংগ্রহ করতে পারছেন না তিনি। এতে পরিবার নিয়ে বিপাকে পড়েছেন ওহাব।
তিনি বলেন, "টিসিবির পণ্য পেলে কিছুটা খরচ কমে। সামনে রমজান মাস, এখনো কার্ড না পেলে কবে পাব—তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। বাজারে নিত্যপণ্যের উচ্চমূল্যের কারণে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।"
শুধু আব্দুল ওহাবই নন, খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বরিশাল সিটি করপোরেশন এলাকায় প্রায় ২৮ শতাংশ আবেদনকারী এখনো টিসিবির স্মার্ট ফ্যামিলি কার্ড পাননি। তারা বিভিন্ন ওয়ার্ড সচিবের কার্যালয়ে ঘুরেও কোনো সমাধান পাচ্ছেন না।
এ বিষয়ে টিসিবির সহকারী পরিচালক শতদল মণ্ডল বলেন, স্মার্ট কার্ড বিতরণের আগে প্রায় ৫৭ থেকে ৫৮ হাজার কার্ড বাতিল করা হয়েছিল। যাচাই-বাছাই ও ভেরিফিকেশনের কারণে কিছুটা সময় লাগছে। তবে রমজানের আগেই উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হবে বলে আশা করছেন তিনি।
জানা গেছে, নতুন করে আবেদন গ্রহণ ও স্মার্ট ফ্যামিলি কার্ড বরাদ্দ কার্যক্রম শুরু হলে বরিশাল সিটি করপোরেশন এলাকায় ৯০ হাজার উপকারভোগীর জন্য কার্ড বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এ লক্ষ্যে সিটি করপোরেশনের ৩০টি ওয়ার্ডে আবেদন গ্রহণ করা হয়।
টিসিবি সূত্রে জানা গেছে, নগরীর জন্য নির্ধারিত ৯০ হাজার কার্ডের মধ্যে ইতোমধ্যে ৬৪ হাজার ৬০৮টি কার্ড সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে, যা মোট লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ৭২ শতাংশ। এখনো কার্ড পাননি ২৫ হাজার ৩৯২ জন। এছাড়া বরিশাল জেলায় মোট ১ লাখ ২৯ হাজার ৯২১টি কার্ডের মধ্যে ৯৬ হাজার ৮৪০টি কার্ড হস্তান্তর করা হয়েছে। বর্তমানে বরিশাল সিটি করপোরেশন এলাকায় টিসিবির পণ্য বিক্রি করছেন ৯৮ জন ডিলার। পুরো জেলায় ডিলারের সংখ্যা ৭৫ জন।
আবেদন জমা দেওয়ার পর দীর্ঘ অপেক্ষার কথা জানান নগরীর ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মনসুর হাওলাদার। তিনি বলেন, "কতবার যে ওয়ার্ড সচিবের কাছে গিয়েছি, তার হিসাব নেই। শুধু বলা হচ্ছে—কার্ড আসলে দেওয়া হবে। কবে আসবে, কবে পাব—কিছুই জানা নেই।"
এ বিষয়ে বরিশাল সিটি করপোরেশনের ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের সচিব মো. সোহেব রহমান বলেন, "আবেদন জমা দেওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই অনলাইনে কার্ড নম্বর দেখা যায়। তবে কার্ড প্রিন্ট হয়ে ঢাকা থেকে আসতে তিন থেকে চার মাস সময় লাগছে। ফলে প্রতিদিনই উপকারভোগীদের জবাব দিতে হচ্ছে।"
বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাউল বারী বলেন, "মোবাইল নম্বরসহ তথ্যগত জটিলতার কারণে অনেক আবেদন সফটওয়্যারে অন্তর্ভুক্ত করা যায়নি। ঢাকার হেড অফিসে সংশোধনের পর পর্যায়ক্রমে কার্ড পাঠানো হচ্ছে। যারা আবেদন করেছেন, সবাই ধাপে ধাপে কার্ড পাবেন।"
