সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের মামলা: রিমান্ড শেষে কারাগারে শওকত মাহমুদ
বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে যোগসাজশে সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের অভিযোগে রমনা মডেল থানায় দায়ের করা সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় গ্রেপ্তার জনতা পার্টি বাংলাদেশের মহাসচিব ও জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদকে রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) বিকেলে শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আরিফুল ইসলামের আদালত এই আদেশ দেন। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) প্রসিকিউশন বিভাগের উপপরিদর্শক জিন্নাত আলী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
আদালত সূত্রে জানা যায়, পাঁচ দিনের রিমান্ড শেষে এদিন আসামিকে আদালতে হাজির করে তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও ডিবি রমনা বিভাগের পুলিশ পরিদর্শক মো. আখতার মোর্শেদ। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারক তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
আদালতে দেওয়া পুলিশের আবেদনে উল্লেখ করা হয়, 'আসামি শওকত মাহমুদ এবং ইতিপূর্বে গ্রেপ্তারকৃত অন্যান্য আসামিসহ আরও অজ্ঞাতনামা আসামিরা এজাহারনামীয় গ্রেপ্তার আসামি এনায়েত করিম চৌধুরীর সাথে পরস্পর যোগসাজস করে বিভিন্ন তারিখ ও সময়ে বাংলাদেশের অখন্ডতা, সংহতি, জন-নিরাপত্তা বা সার্বভৌমত্ব বিপন্ন করার জন্য জণসাধারণের মধ্যে ঝটিকা মিছিল ও বোমা বিস্ফোরণ ঘটাইয়া আতংক সৃষ্টি করেছেন।'
আবেদনে আরও বলা হয়, 'বর্তমান সরকারকে উচ্ছেদ করার লক্ষ্যে তিনি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দের সাথে এবং উচ্চ পদস্থ লোকজন ও ব্যবসায়ী মহলের সাথে গোপনে সভা-সমাবেশ, পরামর্শ করে বিভিন্ন স্থানে গণবিক্ষোভের মাধ্যমে প্রজাতন্ত্রের সম্পত্তির ক্ষতিসাধন করার উদ্দেশ্যে ষড়যন্ত্র, সহায়তা ও প্ররোচিত করার মাধ্যমে বর্তমান সরকারকে উচ্ছেদের প্রচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছেন। আসামিকে পরবর্তীতে আরও জিজ্ঞাসাবাদের নিমিত্ত্বে রিমান্ডের প্রয়োজন হতে পারে। মামলার সুষ্ঠু তদন্ত ও ন্যায় বিচারের স্বার্থে আসামিকে জেল হাজতে আটক রাখা প্রয়োজন। আসামি জামিনে মুক্তি পেলে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ও পলাতক হওয়ায় সম্ভাবনা একইরূপ মর্মে তথ্য প্রমাণ পাওয়া যাইতেছে। আসামির কাছে থেকে প্রাপ্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নিবিড়ভাবে যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।'
তদন্ত কর্মকর্তা আবেদনে আরও উল্লেখ করেন, 'মামলাটির সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে মামলার তদন্তকার্য সমাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত আসামিকে আটক রাখা একান্ত প্রয়োজন।'
এর আগে, গত ৭ ডিসেম্বর বিকেলে রাজধানীর মালিবাগ এলাকা থেকে শওকত মাহমুদকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। পরদিন ৮ ডিসেম্বর তার ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হলেও মূল নথি না থাকায় আদালত তাকে কারাগারে পাঠিয়ে ১১ ডিসেম্বর শুনানির দিন ধার্য করেন। পরবর্তীতে ১১ ডিসেম্বর শুনানি শেষে আদালত তার পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছিলেন।
মামলার প্রেক্ষাপট থেকে জানা যায়, গত ১৩ সেপ্টেম্বর সকালে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক এনায়েত করিমকে (৫৫) রাজধানীর মিন্টো রোড এলাকা থেকে সন্দেহজনকভাবে ঘোরাঘুরির সময় গ্রেপ্তার করে পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সদুত্তর দিতে না পারায় তাকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। পরে তার বিরুদ্ধে রমনা থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা দায়ের করা হলে সেই মামলার সূত্র ধরে শওকত মাহমুদকে গ্রেপ্তার করা হয়।
উল্লেখ্য, শওকত মাহমুদ দীর্ঘ সময় বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন এবং দলটির ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। পেশাদার সাংবাদিক হিসেবে সুপরিচিত এই নেতা বর্তমানে জনতা পার্টি বাংলাদেশের মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
