হাদির ঘটনা বিচ্ছিন্ন, আইনশৃঙ্খলার অবনতি হয়নি: সিইসি
ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য সংসদ সদস্য প্রার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদিকে গুলি করে হত্যাচেষ্টার ঘটনাকে 'বিচ্ছিন্ন ঘটনা' বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, "আইনশৃঙ্খলার অবনতি কোথায়? মাঝেমধ্যে দু–একটি খুনের ঘটনা ঘটে। এই যে হাদির একটা ঘটনা হয়েছে, সেটিকে আমরা বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলেই মনে করি।"
রাজধানীতে 'জেন ভোটার ফেস্টিভ্যাল' অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
সিইসি বলেন, অতীতেও এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা আহসানউল্লাহ মাস্টার ও সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়ার হত্যাকাণ্ডের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, "এ ধরনের ঘটনা তো সব সময়ই ছিল। আগে আহসানউল্লাহ মাস্টারের সঙ্গেও এমন ঘটনা ঘটেছে। এ ধরনের ঘটনা হয় বাংলাদেশে, এটা নতুন কিছু নয়।"
আসন্ন জাতীয় নির্বাচন নিয়ে যেকোনো ধরনের সংশয় ও দুশ্চিন্তা দূর করার আহ্বান জানিয়ে সিইসি বলেন, "মিডিয়াসহ বিভিন্ন মহলে নির্বাচন নিয়ে কিছু আশঙ্কা হয়তো আছে। তবে আমি দ্ব্যর্থহীনভাবে বলতে চাই—নির্বাচন নিয়ে আমাদের কোনো সংশয় নেই। আমরা সম্পূর্ণ প্রস্তুত। নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং তা হবে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে, সবার সহযোগিতায়।"
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পথে বাধা প্রসঙ্গে ওঠা প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, বড় ধরনের কোনো আইনশৃঙ্খলা অবনতি হয়নি। মাঝেমধ্যে কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটে। তিনি বলেন, "আপনারা যদি গত ৫ আগস্ট বা ২৪-এর পরিস্থিতির সঙ্গে তুলনা করেন, তখন থানাগুলো অকার্যকর ছিল, পুলিশ স্টেশনও কার্যত নিষ্ক্রিয় ছিল। সেই সময়ের তুলনায় এখন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অনেক উন্নতি হয়েছে। আমরা এখন শান্তিতে চলাফেরা করতে পারছি, রাস্তায় চলাচল করতে পারছি, শান্তিতে ঘুমাতে পারছি।"
সিইসি জানান, গতকাল শীর্ষ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। তিনি বলেন, বাহিনীগুলো সম্পূর্ণ প্রস্তুত রয়েছে এবং তারা নিশ্চিত করেছে—নির্বাচন পর্যন্ত শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় থাকবে এবং সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন আয়োজন করা সম্ভব হবে।
অনুষ্ঠানে তিনি আরও বলেন, "আপনারা নিশ্চিন্ত থাকুন, নির্বাচন সঠিক সময়ে, সঠিকভাবে, একটি সুষ্ঠু, সুন্দর ও প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশে অনুষ্ঠিত হবে। জাতির কাছে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছি, নির্বাচন কমিশন তা পরিপালনে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।"
সিইসি নাসির উদ্দিন বলেন, "আমরা পেছনে ফিরে যাইনি। এখন তরুণদের ওপর ভর করেই বাংলাদেশকে এগিয়ে যেতে হবে। আমাদের পরবর্তী নির্বাচন হবে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন—এমনটাই আমরা প্রত্যাশা করি। দেশের বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ যখন দেখি, তখন বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে আরও আশাবাদী হই।"
তিনি বলেন, "আমি বারবার বলছি, এই নির্বাচনটি একটি ঐতিহাসিক নির্বাচন। কারণ এই নির্বাচনে প্রথমবারের মতো ডাকযোগে ভোটের মাধ্যমে প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা হচ্ছে। গত ৫৪ বছরে যা হয়নি, এবার আমরা তা করছি।"
সিইসি বলেন, "প্রায় ১০ লাখ কর্মকর্তা-কর্মচারী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা এতদিন ভোট দিতে পারতেন না। এবার পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে তাদের ভোটের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। একই সঙ্গে কারাবন্দি, প্রবাসী এবং নিজ নির্বাচনী এলাকার বাইরে অবস্থানরত সরকারি কর্মচারীদের জন্যও ভোটের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।"
তিনি আরও বলেন, "এবার একটি গণভোটও একসঙ্গে অনুষ্ঠিত হবে। এসব দিক বিবেচনায় এটি নিঃসন্দেহে একটি ঐতিহাসিক উদ্যোগ। আমরা সাহস করে এই পথে নেমেছি। এই সাহসী উদ্যোগে যদি সবার, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের, অংশগ্রহণ থাকে—তাহলে আমরা সফল হব। অবাধ, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন উপহার দিতে নির্বাচন কমিশন একা সফল হতে পারবে না। সবাইকে নিয়েই এটি করতে হবে।"
