'সচিবালয় ভাতা'র দাবিতে ৬ ঘণ্টা অবরুদ্ধ, প্রতিশ্রুতি দিয়ে পুলিশি পাহারায় বের হলেন অর্থ উপদেষ্টা
সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ২০ শতাংশ 'সচিবালয় ভাতা' চালু করে বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) বিকেল ৫টার মধ্যে সরকারি আদেশ (জিও) জারির প্রতিশ্রুতি দিয়ে ৬ ঘণ্টার অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে মুক্ত হয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। রাত ৮টা ২০ মিনিটের দিকে পুলিশের সহায়তায় তিনি মন্ত্রণালয় ত্যাগ করেন।
অর্থ উপদেষ্টার দপ্তরের একজন কর্মকর্তা রাত সাড়ে ৮টার দিকে টিবিএসকে বলেন, 'স্যার কাল বিকেল ৫টার মধ্যে ভাতা চালু করে সরকারি আদেশ (জিও) জারির প্রতিশ্রুতি দিলেও শেষ পর্যন্ত অবরোধ প্রত্যাহার করেননি আন্দোলনকারীরা। তাদের দাবি ছিল, এখনই আদেশ জারি করতে হবে। পরে রাত সোয়া ৮টার দিকে বেশ কিছু পুলিশ সদস্য উপদেষ্টার দপ্তরে ঢুকে স্যারকে নিয়ে বাইরে বের হন। তখন আন্দোলনকারীরা থাকলেও পথ আটকাননি।'
এর আগে, বুধবার (১০ ডিসেম্বর) দুপুর আড়াইটার দিকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের তৃতীয় তলায় ২০ শতাংশ সচিবালয় ভাতার দাবিতে অর্থ উপদেষ্টার দপ্তরে ৩০০-৪০০ কর্মকর্তা-কর্মচারী উপস্থিত হন। তারা উপদেষ্টার কক্ষ অবরুদ্ধ করে হ্যান্ড মাইকে স্লোগান দিতে থাকেন। বিকেল ৫টার পর থেকে অর্থ উপদেষ্টা আন্দোলনকারীদের দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিলেও রাত ৮টার পর পুলিশ আসার আগ পর্যন্ত আন্দোলনকারীরা অবরোধ প্রত্যাহার করেননি।
সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে এ ধরনের ভাতার দাবি আগে শোনা যায়নি। এর আগে তারা সচিবালয়ে কর্মরতদের জন্য রেশন সুবিধা ও মহার্ঘ্য ভাতার দাবি করেছিলেন। তবে বর্তমান সরকার নতুন পে-স্কেল বাস্তবায়ন করবে না—অর্থ উপদেষ্টার কাছ থেকে এমন বক্তব্য আসার পর সচিবালয় ভাতার দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন নন-ক্যাডার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
অর্থ উপদেষ্টার দপ্তরের একজন কর্মকর্তা জানান, সন্ধ্যা ৬টার পর উপদেষ্টা আন্দোলনকারীদের কয়েকজন প্রতিনিধির সঙ্গে তার কক্ষে কথা বলেন। তখন উপদেষ্টা বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টার মধ্যে তাদের দাবি অনুযায়ী ভাতা চালু করে সরকারি আদেশ (জিও) জারি করার প্রতিশ্রুতি দেন। তবে আন্দোলনকারীরা তা মেনে নেননি, তাদের দাবি ছিল এখনই জিও জারি করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, 'কয়েক শ কর্মকর্তা-কর্মচারী উপদেষ্টার রুমের সামনে থেকে লিফট পর্যন্ত অবস্থান নিয়ে নানা স্লোগান দিচ্ছে। তাদের দাবি এখনই জিও জারি করতে হবে।'
ওই কর্মকর্তা জানান, উপদেষ্টা তাদের বলেছেন, জিও জারি করার আগে নিয়ম অনুযায়ী এটার সার-সংক্ষেপ প্রধান উপদেষ্টার অনুমোদনের জন্য পাঠাতে হবে। বৃহস্পতিবার সকালের মধ্যে সার-সংক্ষেপ তৈরি করে প্রধান উপদেষ্টার অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে। দুপুরের মধ্যে অনুমোদন হয়ে এলে বিকেল ৫টার মধ্যে জিও জারি করা হবে। কিন্তু আন্দোলনকারীরা বলছেন, যতক্ষণ জিও না হবে, ততক্ষণ তারা অবরোধ তুলে নেবেন না।
বুধবার দুপুর আড়াইটার দিকে সরেজমিন দেখা যায়, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় থেকে নন-ক্যাডার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিচে নেমে বটতলায় জড়ো হন। সেখান থেকে একসঙ্গে ৩০০-৪০০ কর্মকর্তা-কর্মচারী উপদেষ্টার দপ্তরে এসে তাকে অবরুদ্ধ করে ফেলেন। এ সময় উপদেষ্টার দপ্তরের সামনের খোলা জায়গা ও লিফটের সামনের জায়গা ছাড়াও আশপাশের সিঁড়িতেও অবস্থান নেন আন্দোলনকারীরা। আধা ঘণ্টা দাঁড়িয়ে স্লোগান দেওয়ার পর তারা উপদেষ্টার কক্ষের সামনের করিডোরে বসে পড়েন।
এ বিষয়ে জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ও সাবেক অতিরিক্ত সচিব ফিরোজ মিঞা টিবিএসকে বলেন, 'প্রত্যেকটি চাকরির আলাদা আলাদা বৈশিষ্ট্য আছে। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় বা রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের কর্মীরা অফিস সময়ের বাইরে অনেক সময় কাজ করেন। অনেক সময় রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ঘটনায় তাদের বাড়তি সময় কাজ করতে হয়। ফলে সব অফিসকে এক দৃষ্টিতে দেখলে হবে না।'
তিনি বলেন, 'সচিবালয়ের কর্মীদের দাবির যৌক্তিকতা থাকলেও সেটি উপস্থাপন করতে হবে নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে। এভাবে উপদেষ্টাকে অবরুদ্ধ করে দাবি উত্থাপন ও আদায় কোনোভাবেই কাম্য নয়। এটি সরকারি চাকরিতে অনুমোদন করে না। সম্প্রতি চাকরি আইন সংশোধন করেছে সরকার। এরপরও এভাবে উপদেষ্টাকে অবরোধ করার সাহস কর্মীদের কেন আসছে সেটা দেখতে হবে। প্রশাসনের শীর্ষ পর্যায়ে দায়িত্বরত কর্মকর্তারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দক্ষতা দেখাতে পারছেন না বলেই এমন হচ্ছে।'
তিনি আরও বলেন, 'এভাবে একেকটি গ্রুপের দাবি মানলে সামনে অন্যান্য জায়গা থেকেও আরও দাবি সামনে আসবে। প্রশাসনে অস্থিরতা বৃদ্ধির আশংকা রয়েছে।'
