আন্দোলন চলাকালে টিভি স্ক্রলে কী যাবে ঠিক করে দিত গোয়েন্দারা: ট্রাইব্যুনালে হাসনাত আবদুল্লাহ
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা টেলিভিশনের স্ক্রলে (নিউজ টিকার) কী দেখানো হবে, তা নির্ধারণ করে দিতেন বলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ। তিনি বলেন, 'আমাদের সামনে বসেই তারা (গোয়েন্দারা) স্ক্রল বলত আর সেই কথাই টিভি চ্যানেলগুলো প্রচার করত।'
মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এ রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ নিহতের ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাক্ষ্য দেওয়ার সময় তিনি এসব কথা তুলে ধরেন। এ মামলায় বেরোবির সাবেক ভিসি হাসিবুর রশীদসহ ৩০ জন আসামি রয়েছেন।
সাক্ষ্য প্রদানকালে হাসনাত আব্দুল্লাহ অভিযোগ করেন, আন্দোলন চলাকালে সময় টিভি, ডিবিসি ও একাত্তর টিভিসহ কয়েকটি টেলিভিশন চ্যানেল নোংরা ভূমিকা পালন করেছে।
তিনি ট্রাইব্যুনালকে জানান, জুলাই আন্দোলনের সময় রাজধানীর কাকরাইলে একটি 'সেইফ হাউজে' তাদের বন্দি অবস্থায় রাখা হয়েছিল। জবানবন্দির প্রথম অংশের পর মধ্যাহ্ন বিরতির সময় প্রেস ব্রিফিংয়ে হাসনাত আব্দুল্লাহ সেইফ হাউজের বর্ণনা দিয়ে বলেন, 'মৎস্য ভবন ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের মাঝখানে একটি ঘর আছে, যা বাইরে থেকে পরিত্যক্ত মনে হয়। কিন্তু ভেতরে আধুনিক সব ব্যবস্থাপনা রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বা এজেন্সির ভাষায় একে 'সেইফ হাউজ' বলা হয়।'
ঘটনার প্রেক্ষাপট তুলে ধরে তিনি বলেন, ২০২৪ সালের ১৬ জুলাই সারা দেশে বিক্ষোভে অংশ নেন ছাত্র-জনতা। ওই দিন রংপুরে আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যা করা হয় এবং চট্টগ্রামে ওয়াসিমসহ ছয়জন শিক্ষার্থী শহীদ হন। এর প্রতিক্রিয়ায় ১৭ জুলাই গায়েবানা জানাজা করতে গেলে গোয়েন্দা সংস্থা চাপ দেয়। সেদিন রাতেই বাসা থেকে তুলে তাদের প্রথমে পদ্মায় (রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন) নেওয়া হয়।
হাসনাত বলেন, 'কর্মসূচি প্রত্যাহারের জন্য আমাদের নানাভাবে বোঝানো হয়। কিন্তু আমরা মন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক প্রত্যাখ্যান করি। এক ঘণ্টা পর আমাদের সামনে দিয়েই তিনজন মন্ত্রী বের হয়ে যান। অর্থাৎ আমরা কোনো বৈঠক করিনি। ওই দিন রাতে বৈঠক করাতে ব্যর্থ হয়েই আমাদের মৎস্য ভবনের সামনের ওই সেইফ হাউজে নেওয়া হয়।'
সেইফ হাউজের অভিজ্ঞতার বিষয়ে তিনি বলেন, 'সেখানে আমাদের রাতভর জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। চাপ প্রয়োগ করা হয়। পরিবারকে জিম্মি করা হয়। স্থানীয়ভাবে ছাত্রলীগ দিয়ে পরিবারকে হেনস্তা করা হয় এবং বৈঠকে বসার জন্য চাপ দেওয়া হয়।'
তিনি আরও বলেন, 'সেদিন সকালে এজেন্সির একজন আমাদের হুমকি দেন যে, আমরা যেন বৈঠক করে সারা দেশের সামনে বলি আমরা আন্দোলন প্রত্যাহার করে নিয়েছি। তাহলে আমাদের 'লাইফ সেটেল' করে দেবে। তবে আমরা রাজি হইনি।'
এদিন বেলা সোয়া ১১টা থেকে হাসনাত আব্দুল্লাহর সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। দুপুর দেড়টার পর বিরতি দেওয়া হয় এবং এরপর তিনি প্রেস ব্রিফিং করেন। দুপুর আড়াইটায় তিনি অবশিষ্ট সাক্ষ্য প্রদান করেন। ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম। সঙ্গে ছিলেন প্রসিকিউটর মঈনুল করিম, আবদুস সাত্তার পালোয়ানসহ অন্যরা।
