মুদ্রার বিনিময় হার সমন্বয়ের পর রূপপুর প্রকল্পের ব্যয় এবার ২৬,১৮১ কোটি টাকা বাড়ছে
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার পুনরায় সমন্বয়ের কারণে এ প্রকল্পের মোট ব্যয় বাড়ছে ২৬ হাজার ১৮১.২৬ কোটি টাকা, যা মূল প্রাক্কলিত ব্যয়ের তুলনায় ২৩.১৫ শতাংশ বেশি।
এর আগে নভেম্বর মাসের শুরুর দিকে রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রকল্প ব্যয় ১১.৮৪ শতাংশ বা ১৩ হাজার ৩৮৬.২১ কোটি টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়ে প্রথম সংশোধিত প্রকল্প প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়।
গত ১১ নভেম্বর প্রথম সংশোধিত প্রস্তাবের ওপর প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার পরিবর্তনের বিষয়টি সঠিকভাবে প্রতিফলিত হয়নি। এর ফলে বাংলাদেশি টাকায় মোট প্রকল্প ব্যয় সঠিকভাবে নির্ণীত হয়নি। পরে বাস্তবায়নকারী সংস্থা পুনরায় হিসাব সমন্বয় করে প্রকল্পের ব্যয় বাড়িয়ে ১ লাখ ৩৯ হাজার ২৭৪.১৭ কোটি টাকার প্রস্তাব গত ২৭ নভেন্বর পরিকল্পনা কমিশনে পাঠায়।
২০১৬ সালে অনুমোদন পাওয়া রূপপুর প্রকল্পের মূল প্রস্তাবে ব্যয় ধরা হয়েছিল ১ লাখ ১৩ হাজার ৯২.৯১ কোটি টাকা। এদিকে প্রকল্পের ব্যয় বাড়লেও ১১.৩৮ বিলিয়ন ডলারের রাশিয়ার ঋণ ডলারের অংকে অপরিবর্তিত থাকছে। তবে এই ডলার ঋণ টাকার অংকে ১ লাখ ১৬ হাজার ৭৯৯ কোটি টাকার বৈদেশিক ঋণ হয়েছে। মূল প্রকল্প প্রস্তাবে রাশিয়ার ঋণ ধরা হয়েছিল ৯১ হাজার ৪০ কোটি টাকা।
প্রকল্প প্রস্তাবের বিনিময় হার অনুযায়ী, ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত ডিপিএ'র ব্যবহার ৮.২৯ বিলিয়ন ডলার, যেখানে এক ডলারের বিপরীতে টাকার দর ৯৫.২৮ টাকা ধরে হিসাব করা হয়েছে। বাকি তিন বছরের জন্য, ৩.০৯ বিলিয়ন ডলারের ডিপিএ'র জন্য প্রতি ডলারের বিনিময় হার ১২২ টাকা ধরা হয়েছে (১৬ নভেম্বর, ২০২৫ তারিখে বাংলাদেশ ব্যাংকের হার অনুযায়ী)।
প্রথমে পরমাণু শক্তি কমিশন যে সংশোধিত প্রস্তাব পাঠিয়েছিল সেখানে ব্যয় হওয়া ৮.২৯ বিলিয়ন ডলার ঋণ হিসাব করা হয়েছিল ডলার প্রতি ৮০ টাকা করে। পিইসি সভার পর বিনিময় হার ধরা হয়েছে এক ডলারে ৯৫.২৮ টাকা। পুনঃগঠিত প্রকল্প প্রস্তাব অনুযায়ী, মূল প্রকল্প প্রস্তাবে সরকারি তহবিল থেকে ব্যয় ধরা হয়েছিল ২২ হাজার ৫২.৯১ কোটি টাকা, যা সংশোধিত প্রস্তাবে বেড়ে ২২ হাজার ৪৭৫.০৪ কোটি টাকা হচ্ছে।
এদিকে প্রকল্পটির ব্যয় বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে প্রকল্পের মেয়াদও বেড়েছে। মূল প্রস্তাবে ২০১৬ সালের জুলাইয়ে বাস্তবায়নে যাওয়া প্রকল্পটির ২০২৫ সালের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা ছিল। নতুন সংশোধিত প্রস্তাবে প্রকল্পটির মেয়াদ ২০২৮ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে বলে পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে।
পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা জানান, মোট প্রকল্প ব্যয় সঠিকভাবে নির্ণীত না হলে— রূপপুর প্রকল্প থেকে উৎপাদিত বিদ্যুতের ইউনিট প্রতি খরচের হিসাব সঠিকভাবে জানা যাবে না; এবং প্রকল্পের আয়-ব্যয় বিশ্লেষণও সঠিকভাবে হবে না।
পিইসি সভায় বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। বিস্তারিত আলোচনা শেষে, ইতোমধ্যে ব্যয় করা অর্থের ক্ষেত্রে ডলারের প্রকৃত বিনিময় হার এবং ভবিষ্যতে ব্যয় হবে— এমন অর্থের ক্ষেত্রে ডলারের হালনাগাদ বিনিময় হার বিবেচনায় নিয়ে প্রকল্পটির সংশোধন প্রস্তাবের ব্যয় পুনরায় প্রাক্কলনের সিদ্ধান্ত হয়।
রূপপুর এনপিপি প্রকল্পটি রাশিয়ান ফেডারেশন ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে আন্তঃসরকার চুক্তি (আইজিএ) অনুযায়ী বাস্তবায়িত হচ্ছে। বাংলাদেশ পারমাণবিক শক্তি কমিশন (বিএইসি) ডিসেম্বর ২০১৫ সালে রাশিয়ান প্রতিষ্ঠান অ্যাটমস্ট্রয়এক্সপোর্ট -এর সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে, যেখানে ২,৪০০ মেগাওয়াট সক্ষমতার দুই ইউনিটের এনপিপি নির্মাণ, যন্ত্রপাতি সরবরাহ, প্রশিক্ষণ ও জ্বালানি সরবরাহ অন্তর্ভুক্ত।
প্রথম সংশোধিত প্রস্তাব অনুযায়ী, ২০২৬ সালে রূপপুরের প্রথম ইউনিটের বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হবে। এর আগে পরিকল্পনা অনুযায়ী, চলতি বছরের ডিসেম্বরে ইউনিট-১ এর বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরুর লক্ষ্য নির্ধারণ করা ছিল। এছাড়া এই কেন্দ্রের ইউনিট-২ ২০২৬ সালের ডিসেম্বরে উৎপাদনে যাওয়ার লক্ষ্য ছিল। প্রথম ইউনিটের উৎপাদন পিছিয়ে যাওয়ার কারণে দ্বিতীয় ইউনিটও পিছিয়ে যাবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
