রাজনৈতিক দলের মনোনয়ন এক ধরনের ব্যবসায় পরিণত হয়েছে: বদিউল আলম মজুমদার
রাজনৈতিক দলের মনোনয়ন এক ধরনের ব্যবসায় পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন নির্বাচন সংস্কার কমিশনের প্রধান ও সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার।
তিনি বলেন, 'আমাদের দেশে মনোনয়ন এখন বাস্তবে এক ধরনের ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। কিছু লোক আছে, যাদের আমি রাজনৈতিক দল বলতে চাই না; তারা আসলে ব্যবসায়িক সিন্ডিকেট। তারা বিভিন্নভাবে টাকা সংগ্রহ করে, পরে তা মনোনয়ন বাণিজ্যে ব্যয় করে।'
আজ সোমবার (২৪ নভেম্বর) বিকেলে রাজধানীর বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজে (বিআইআইএসএস) ঢাকা ইনস্টিটিউট অব রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালিটিক্স (দায়রা) আয়োজিত 'বাংলাদেশের রাজনৈতিক অর্থায়ন সংস্কৃতি এবং ব্যবসা সুরক্ষা: বাস্তবতা এবং সমাধানের পথ'- শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন।
এসময় নির্বাচনি প্রক্রিয়ায় অর্থের প্রভাব এবং মনোনয়ন বাণিজ্যের বিস্তার নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বদিউল আলম বলেন, 'দেশের রাজনীতিতে মনোনয়ন এখন কার্যত এক ধরনের ব্যবসায় রূপ নিয়েছে, যা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে দুর্বল করে দিচ্ছে এবং নির্বাচনি পরিবেশকে আরও জটিল করে তুলছে।'
তিনি বলেন, 'রাজনৈতিক দলের তৃণমূল মতামতকে উপেক্ষা করে কেন্দ্রীয়ভাবে মনোনয়ন বণ্টন এখন বড় ধরনের অর্থনৈতিক লেনদেনের ক্ষেত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে। মনোনয়নের বিনিময়ে অর্থ আদায়, এটা এখন আর গোপন কিছু নয়। এটি এমন পর্যায়ে গেছে যে মনোনয়ন পাওয়া যেন ব্যক্তিগত ব্যবসায়িক বিনিয়োগের অংশে পরিণত হয়েছে।'
তিনি আরও বলেন, 'মনোনয়ন বাণিজ্যের কারণে রাজনীতিতে সক্ষম, সৎ ও জনস্বার্থে নিবেদিত মানুষগুলো বাদ পড়ছে। এতে দুর্বৃত্তায়ন ও অযোগ্যদের রাজনৈতিক অঙ্গণে প্রবেশ সহজ হচ্ছে, যা রাষ্ট্রের জন্য বিপজ্জনক সংকেত।'
বদিউল আলম বলেন, 'নির্বাচনের আগে প্রার্থীদের হলফনামায় আয়ের অস্বাভাবিক বৃদ্ধির তথ্যও মনোনয়ন বাণিজ্যের বাস্তবতা তুলে ধরে। অনেক প্রার্থীর সম্পদ নির্বাচনের আগে-পরে কয়েকশ' থেকে কয়েক হাজার শতাংশ বেড়ে যাচ্ছে। এটি ক্ষমতা ও অর্থের যোগসাজশের স্পষ্ট চিত্র।'
নির্বাচন সংস্কারের প্রস্তাব তুলে ধরে তিনি বলেন, 'রাজনৈতিক দলগুলোতে অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র নিশ্চিত করতে হবে। তৃণমূল ভোটারদের অংশগ্রহণে প্যানেল তৈরি করে সেখান থেকে মনোনয়ন দেওয়া বাধ্যতামূলক করতে হবে।'
দলগুলোকে তথ্য অধিকার আইনের আওতায় আনা, দলীয় তহবিল স্বচ্ছ করা এবং মনোনয়ন প্রক্রিয়ায় জবাবদিহি নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয়তাও উল্লেখ করেন তিনি।
বদিউল আলম মজুমদার বলেন, 'যদি রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের সংস্কার না করে, তাহলে সুষ্ঠু নির্বাচন বা সুস্থ গণতন্ত্র—কোনোটাই সম্ভব হবে না।'
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান, বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এবং কেন্দ্রীয় প্রচার ও গণমাধ্যম বিভাগের প্রধান, অ্যাডভোকেট আহসানুল মাহবুব জুবায়ের, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম আহ্বায়ক খালেদ সাইফুল্লাহ।
