জিজ্ঞাসাবাদে আক্রমণাত্মক আচরণ করা হয়েছে, সাবেক আইজিপি শহীদুলের আইনজীবীর অভিযোগ
২০১৬ সালে রাজধানীর কল্যাণপুরে 'জঙ্গি নাটক সাজিয়ে' ৯ তরুণকে হত্যা এবং ২০১৩ সালে শাপলা চত্বরে গণহারে হত্যার অভিযোগে মানবতাবিরোধী অপরাধের দুই মামলার জিজ্ঞাসাবাদে কারাবন্দি সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) শহীদুলে হকের সঙ্গে বিরূপ ও আক্রমণাত্মক আচরণ করা হচ্ছে বলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ করেছেন তার আইনজীবী সিফাত মাহমুদ শুভ।
এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার (২৪ নভেম্বর) বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদের নেতৃত্বাধীন দুই সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১ এ প্যানেলে শুনানিতে এ অভিযোগ করেন তিনি। পরবর্তী নির্ধারিত তারিখে এ বিষয়ে শুনানি হবে।
আবেদনটি সোমবার ট্রাইব্যুনালের দৈনন্দিন মামলার কার্যতালিকায় পাঁচ নম্বরে ছিল। শুনানিতে আইনজীবী সিফাত দাঁড়াতেই আবেদন ও আসামির প্রসঙ্গে জানতে চান ট্রাইব্যুনাল। তখন সাবেক আইজিপি শহীদুল হকের নাম উল্লেখ করেন তিনি। একইসঙ্গে জিজ্ঞাসাবাদের সময় তার ক্লায়েন্টকে অপ্রাসঙ্গিক নানা প্রশ্ন করা হয় বলে অভিযোগ করেন এই আইনজীবী।
তবে তার আবেদনটি অপ্রয়োজনীয় বলে ব্যাখ্যা দেন প্রসিকিউশন।
প্রসিকিউশন থেকে বলা হয়, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আমাদের কোনো তারিখ বা আবেদন প্রক্রিয়াধীন নেই। তাই এ মুহূর্তে এমন আবেদন সময়োপযোগী নয়।
একপর্যায়ে সিফাতের উদ্দেশে ট্রাইব্যুনাল বলেন, 'আপনি তো নির্দেশনা চাইছেন। কিন্তু অভিযোগ হলে আবেদন আকারে আসতে হবে। তাই পরবর্তী তারিখে আপনার কথা শুনব।'
এ প্রসঙ্গে শহীদুল হকের আইনজীবী সাংবাদিকদের বলেন, 'আইসিটিবিডি মিসকেস ১৩/২০২৫ মামলাটি সাবেক আইজিপি শহীদুল হকের বিরুদ্ধে তদন্ত চলমান। এ মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বেশ কয়েকবার তাকে তদন্ত সংস্থায় নেওয়া হয়েছে। কিন্তু জিজ্ঞাসাবাদের সময় কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে। তার প্রতি বিরূপ ও আক্রমণাত্মক আচরণ করা হয়েছে। আবেদনে এসব বিষয় উল্লেখ করেছি আমরা। তবে আজ শুনানি হয়নি।'
তিনি বলেন, 'জিজ্ঞাসাবাদে নির্দিষ্ট মামলার বিষয়বস্তুর বাইরেও আমার ক্লায়েন্টকে (শহীদুল হক) অনেক ধরনের প্রশ্ন ও হেনস্তা করা হয়েছে। যেমন- তদন্ত সংস্থার যিনি প্রধান রয়েছেন, তার কেন পদোন্নতি হয়নি বিগত সরকারের সময়; এসব নিয়ে সাবেক আইজিপির ওপর ক্ষোভ ঝেড়েছেন। অথচ জিজ্ঞাসাবাদে জোর-জবরদস্তিমূলক আচরণ বা কোনো ধরনের হুমকি দেওয়ার বিধান নেই। এরপরও এমন ঘটনা ঘটায় আমরা ট্রাইব্যুনালের নজরে এনে শুনানির জন্য তারিখ চেয়েছি।'
তদন্ত সংস্থার প্রধানের নাম আনসার উদ্দিন খান পাঠান উল্লেখ করে সিফাত বলেন, 'শহীদুলকে বেশ কয়েকবারই জিজ্ঞাসাবাদে নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে জাহাজবাড়িতে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় এখন পর্যন্ত নেওয়া হয়েছে তিনবার। প্রত্যেকবারই তার সঙ্গে এ ধরনের আচরণ ঘটেছে বা করেছেন। এজন্য আমার উপস্থিতিতে ক্লায়েন্টকে জিজ্ঞাসাবাদের আবেদন করেছি। একইসঙ্গে আইন অনুযায়ী যেন তদন্ত সংস্থা কাজ করে সেটি চাওয়া হয়েছে।'
তবে আসামিপক্ষের অভিযোগ অসত্য বলে দাবি করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের (আইসিটি) প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম।
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, 'সাবেক আইজিপি শহীদুল হকের পক্ষে একটি আবেদন করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদের সময় যেন আইনজীবী উপস্থিত থাকার অনুমতি দেওয়া হয়। তবে আবেদনটি উপযোগী নয় বলে আমরা জানিয়েছি। কারণ তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে না বা কোনো আবেদনও দেইনি। এরপরও আসামির উপস্থিতিতে তারা এই দরখাস্ত আনতে জোরাজুরি করেছেন।'
তিনি বলেন, 'তারা বলতে চেয়েছেন যে তাদের আসামিকে ধমক বা চাপ প্রয়োগ করা হয়েছে। আমরা বলেছি বিষয়টি আলাদা আবেদন আকারে আসতে পারে। যদিও অভিযোগটি অসত্য। এরপর তাদের বারবার মৌখিক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তী ধার্য তারিখে শুনানি ঠিক করেন ট্রাইব্যুনাল। আগামী বছরের ২২ জানুয়ারি এ মামলার শুনানি হবে। ওই দিনই আবেদন নিয়ে কথা বলবেন সাবেক আইজিপি শহীদুল হকের আইনজীবী সিফাত মাহমুদ।'
