মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা: সেনা কর্মকর্তাদের অভিযোগ গঠনের শুনানি ৩ ও ৭ ডিসেম্বর
শেখ হাসিনার শাসনামলে গুম ও নির্যাতনের ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের দুই মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সেনা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানির দিন নির্ধারণ করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। দুই মামলার একটির অভিযোগ গঠনের শুনানি ৩ ডিসেম্বর ও অন্যটির ৭ ডিসেম্বর।
একইসঙ্গে এই মামলায় পলাতক শেখ হাসিনাসহ অন্য পলাতকদের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্নাকে স্টেট ডিফেন্স হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।
রোববার (২৩ নভেম্বর) বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এই দিন ধার্য করেন।
টাস্কফোর্স ফর ইন্টারোগেশন সেলে (টিএফআই সেল) গুম করে রাখার ঘটনায় করা মানবতাবিরোধী অপরাধের একটি মামলায় মোট ১৭ জন আসামি। এর মধ্যে ১০ জন গ্রেপ্তার আছেন। তারা হলেন: ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তোফায়েল মোস্তফা সারোয়ার, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. কামরুল হাসান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহাবুব আলম, ব্রিগেডিয়ার কে এম আজাদ, কর্নেল আবদুল্লাহ আল মোমেন, কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান (অবসর প্রস্তুতিমূলক ছুটিতে), লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মশিউর রহমান, লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাইফুল ইসলাম সুমন ও লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. সারওয়ার বিন কাশেম।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এই আসামিদের প্রথম সাতজন র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক হিসেবে এবং শেষের তিনজন রতাবের গোয়েন্দা শাখার পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তাদের রোববার ট্রাইব্যুনালে আনা হয়।
ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিকসহ এ মামলার সাত আসামি পলাতক।
জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেলে (জেআইসি) গুম করে রাখার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের আরেকটি মামলায় ১৩ জনকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩ আসামি গ্রেপ্তার আছেন। তারা হলেন: প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) সাবেক ৩ জন পরিচালক মেজর জেনারেল শেখ মো. সরওয়ার হোসেন, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান সিদ্দিকী ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহমেদ তানভির মাজাহার সিদ্দিকী। তাদেরও আজ ট্রাইব্যুনালে আনা হয়।
শুনানি শেষে তাদেরকে নীল রংয়ের বিশেষ প্রিজন ভ্যানে করে আবার ঢাকা সনোনিবাসে অবিস্থিত সাব-জেলে নেয়া হয়।
রোববার (২৩ নভেম্বর) সকালে কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনার শাসনামলে টিএফআই-জেআইসি সেলে বিরোধী মতাদর্শের মানুষদের গুম ও নির্যাতনের অভিযোগে মানবতাবিরোধী অপরাধের দুই মামলায় অভিযুক্ত সেনাবাহিনীর ১৩ কর্মকর্তাকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে (আইসিটি) হাজির করা হয়।
সকাল ১০টার কিছু পরে ঢাকা সেনানিবাসে অবস্থিত সাব-জেল থেকে একটি বিশেষ প্রিজন ভ্যানে করে পুলিশ ওই কর্মকর্তাদের ট্রাইব্যুনালে নিয়ে আসে। এরপর প্রিজন ভ্যান থেকে নামিয়ে তাদের আদালতের হাজতখানায় রাখা হয়।
এদিন আসামিদের সশরীরে আদালতে উপস্থিত করা হলেও পরবর্তী শুনানিগুলোতে তাদের ভার্চুয়ালি হাজিরা দেওয়ার আবেদন করেছেন কয়েকজন সেনা কর্মকর্তার আইনজীবী। রোববার সকালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে কয়েকজন আসামির পক্ষে এই আবেদন জমা দেন আইনজীবী মাইদুল ইসলাম পলক।
বিষয়টি নিশ্চিত করে মাইদুল ইসলাম পলক সাংবাদিকদের বলেন, এই আবেদনের উপর ট্রাইব্যুনালে আজ শুনানি হবে। এরপর ট্রাইব্যুনালের সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করবে।
সেনা কর্মকর্তাদের এই হাজিরা ঘিরে ট্রাইব্যুনালসহ আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। রোববার সকাল থেকেই কড়া নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকেন পুলিশ, র্যাব ও বিজিবির সদস্যরা। সাদা পোশাকে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদেরও তৎপর দেখা যায়।
এর আগে গত ২২ অক্টোবর গুমের দুই মামলায় ১৩ সেনা কর্মকর্তাকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। শুনানি শেষে তাদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত। একইসঙ্গে পরবর্তী শুনানির জন্য ২০ নভেম্বর দিন ঠিক করা হয়।
৮ অক্টোবর পৃথক দুই মামলায় মোট ৩০ জনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে প্রসিকিউশন। পরে অভিযোগ আমলে নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পাশাপাশি শুনানির জন্য ২২ অক্টোবর দিন ধার্য করেন ট্রাইব্যুনাল-১।
