জামায়াত গত ১০ বছর 'ফ্যাসিস্ট' হাসিনার বিরুদ্ধে দৃশ্যমান কিছু করেনি: ফখরুল
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ধর্মকে ব্যবহার করে রাজনৈতিক ফায়দা নেওয়া কখনোই ইসলামিক কাজ হতে পারে না। পূর্ববর্তী বক্তাকে উদ্ধৃত করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'কিছুক্ষণ আগে এখানে বললেন যে, "জামায়াতের টিকিট কাটলে জান্নাতের টিকিট কাটা হবে"—নাউজুবিল্লাহ! কোথায় আছে? আমাকে দেখিয়ে দিন, কোথায় আছে? এবং এটা ঠিক না। কথাগুলো এজন্য বলছি, এগুলো সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।'
আজ শনিবার (২২ নভেম্বর) রাজধানীর কাকরাইলে ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সে আয়োজিত ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মসজিদভিত্তিক গণশিক্ষা কেয়ারটেকারদের এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
আলোচনা সভায় জামায়াতকে ইঙ্গিত করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, 'এই মহলটি রাজনৈতিক অঙ্গনে দাঁড়াতে পারছিল না। জিয়াউর রহমান সাহেব তাদের সুযোগ করে দেন রাজনৈতিক অঙ্গনে আসার। তারা প্রথমে আইডিএল [ইসলামিক ডেমোক্রেটিক লীগ] নামে এসেছিল। তারপরে তারা বিএনপির সঙ্গে কাজ করেছে। বিএনপিও তাদের নিয়ে কাজ করেছে।'
'দুর্ভাগ্যক্রমে গত ১০ বছর কিন্তু আমরা তাদের এই ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে পরাজিত করবার জন্য দৃশ্যমান কোনো কাজ দেখিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচনে [ডাকসু]— ছাত্রলীগের মধ্যে তারা ঢুকেছিল। শুনেছি এগুলো, আপনার জানা নেই আমার। অর্থাৎ ছাত্রলীগ সেজে তারা সেখানে ছিল। তো এই ধরণের কাজ তো আমরা করতে পারি না। আমরা সরাসরি সামনাসামনি লড়াই করেছি', যোগ করেন তিনি।
বিএনপির ত্যাগের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'আমাদের ৬০ লক্ষ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। আমাদের ২০ হাজার লোককে হত্যা করা হয়েছে। প্রায় ১৭০০ মানুষকে—নেতা, আমাদের এমপি সহ—গুম করে দেওয়া হয়েছে। আমরা ২০০, ৩০০, ৪০০ মামলা নিয়ে আমাদের ১১ বার জেলে গেছি। কিন্তু আমরা একটা বিষয়ে আমরা স্থির থাকছি, যে আমরা একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র চাই।'
নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার নিয়ে চলমান আলোচনার বিষয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, 'পিআর আমরা বুঝিই না ঠিকমতো। দেশের মানুষ, অনেকেই বুঝতে পারে না। পিআর—প্রোপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন। আমি ঠিকমতো বুঝতেই কষ্ট পাই, পাবলিক তো আরও বুঝবে না। সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব! এই কঠিন শব্দ তো আমরা পরিচিত না, তাই না? বাংলাদেশের মানুষ বোঝে "ওয়ান ম্যান, ওয়ান ভোট"। একজন ব্যক্তি দাঁড়াবে, তার মার্কা থাকবে, সেই মার্কায় আমি ভোট দেব। তাই তো? এটাই আমরা সব সময় সেই আদিকাল থেকে দেখে আসছি।'
সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবনার বিষয়ে তিনি আরও বলেন, 'এখন আপনি যদি পরিবর্তন করবেন, তার জন্য আবার গণভোট করতে হবে। গণভোটে থাকবে আবার 'হ্যাঁ-না'। এখন গণভোটে নাকি চারটা প্রশ্ন থাকবে! চারটা প্রশ্ন একটা গণভোটের ব্যালটে, এটা তো মানুষ কিছু এখন পর্যন্ত বুঝতেই পারছে না, কেউ বুঝতে পারছে না এবং শেষ দিন পর্যন্ত বুঝতেও পারবে না।'
বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'একটা রাজনৈতিক দল পপকর্ন এর মতো চিৎকার করছে—পিআর দিতে হবে, পিআর দিতে হবে! পিআর না হলে নির্বাচন হবে না। অনেক হুঙ্কার টুঙ্কার ছেড়েছে, তাই না? এখন আবার সুর নরম হয়ে গেছে। এখন দেখা যাচ্ছে নির্বাচনের জন্য সব চতুর্দিকে দৌড়ঝাঁপ করছে। এই জিনিসগুলো ঠিক না। মানুষকে যেটা বলবেন, সেটা সঠিকভাবেই বলা উচিত। কিন্তু মানুষকে বোকা বানিয়ে ভুল পথে পরিচালিত করা, আমার মনে হয় না আপনাদের এখানে সবাই আলেম-উলেমারা আছেন, এটা ইসলাম আমাদের কোথাও বলেছে এটা আমার জানা নাই।'
রাষ্ট্র পরিচালনায় আলেমদের গুরুত্ব তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, 'বাস্তব অবস্থা যেটা; যে সরকারই আসুক, সেটা কমিউনিস্ট সরকার আসুক বা আপনার ইসলামিক সরকার আসুক বা আপনার গণতান্ত্রিক সরকারই আসুক, তারা কিন্তু ওখানে—অ্যাসোসিয়েশন অফ উলেমা—তাদেরকে অস্বীকার করতে পারে না। ভেরি পাওয়ারফুল। গোটা দেশ জুড়ে সেটার একটা প্রভাব আছে। তাদের সঙ্গে পরামর্শ না করে কোনো কাজ হয় না।'
তিনি বলেন, 'আমরা ১৫-১৬ বছর ধরে দেখেছি যে ফ্যাসিস্ট হাসিনা কি করে এইভাবে প্রতিটি মানুষের অধিকারকে কেড়ে নিয়েছে... আপনাদের নিশ্চয়ই সকলের মনে থাকবে, খুতবা কি হবে তাও কাগজ দিয়ে লিখে পাঠিয়ে দিত! এখন এই যদি অবস্থা হয় এবং তাও আবার দাবি করে যে তারা ইসলামের পক্ষে কাজ করেছে। তখন আরও দুঃখ হয় তখন, যখন দেখি আমাদেরই দেশের কিছু আলেম-উলেমারা তার সঙ্গে মিটিং করে তাকে 'কওমি মাতা', 'কওমি জননী' তাকে উপাধি দিচ্ছে।'
মসজিদভিত্তিক গণশিক্ষা কার্যক্রমের কেয়ারটেকারদের দাবির প্রেক্ষিতে বিএনপি মহাসচিব আশ্বাস দিয়ে বলেন, 'আমরা যেটা করতে চাই, তা হচ্ছে যে এটাকে আধা-ইউনিট বা প্রজেক্ট ছেড়ে রেখে না দিয়ে, আমরা ইসলামিক ফাউন্ডেশনকে একটা ইনস্টিটিউশনে, প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে চাই। যেটা রাষ্ট্রীয়ভাবে থাকবে, যেটা কেউ ভাঙতে পারবে না।'
তিনি আরও বলেন, 'আরেকটা দাবি আছে আপনাদের রাজস্ব খাতে। ইনশাআল্লাহ আমরা এটাকে রাজস্ব খাতে নেওয়ার জন্য... যেটা বললাম যে প্রতিষ্ঠানকে যদি রাষ্ট্রীয়ভাবে আমি নিয়ে নিতে পারি, তাহলে কিন্তু আপনার সেটা রাজস্ব খাতে এমনিই চলে যাবে।'
সমাজে নৈতিক অবক্ষয় রোধে ধর্মীয় শিক্ষার গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, 'আমাদের এই যে মূল্যবোধের অধঃপতন হয়েছে; আমরা এই যে প্রতিদিন খবরের কাগজ খুললেই দেখি আপনার হত্যা, খুন, রাহাজানি, আপনার অন্যায়-ন্যায়..., সব অপরাধ—এইগুলো বন্ধ হয়ে যায় যদি সত্যিকার অর্থে আমরা নৈতিক শিক্ষাটা পাই। আর ওই নৈতিক শিক্ষাটা পাই কিন্তু আমি আপনার ওই মক্তবে, মাদ্রাসায়, স্কুলে, আমার শিক্ষকের কাছে, বাড়িতে, পরিবারের কাছে।'
পরিশেষে তিনি সকলের অংশগ্রহণে একটি সুন্দর ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক সরকার গঠনের আহ্বান জানান।
