ন্যায়বিচার পরাজিত হতে পারে না: পর্যবেক্ষণে ট্রাইব্যুনাল
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ তিনজনের বিরুদ্ধে দেওয়া রায়ের পর্যবেক্ষণে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি) বলেছেন, 'শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান কামালের প্ররোচনা, নির্দেশনায় এসব মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। ন্যায়বিচার এখানে পরাজিত হতে পারে না।'
সোমবার (১৭ নভেম্বর) দেওয়া রায়ের পর্যবেক্ষণে ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদার বলেন, 'ছাত্র- জনতার আন্দোলনের সময় হত্যাসহ পূর্ণাঙ্গ মাত্রায় মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়েছে, যার অকাট্য প্রমাণ রয়েছে। শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের প্ররোচনা, নির্দেশনায় এসব মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। ন্যায়বিচার এখানে পরাজিত হতে পারে না।'
আদালত জুলাই অভ্যুত্থান নিয়ে জাতিসংঘ, অধিকারসহ বিভিন্ন দেশিয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিবেদন তুলে ধরে বলেন, 'এ মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগ প্রমাণ করতে ভুক্তভোগীদের পরিবার, সাক্ষী, দলিলাদির মতো যথেষ্ঠ তথ্য-প্রমাণ রয়েছে।'
আরও বলেন, '৫৪ জন সাক্ষী সাক্ষ্য দিয়েছেন। পর্যালোচনা করে দেখা গেছে যে তাদের সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য।'
পর্যবেক্ষণে ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বলেন, ''গত বছরের ১৪ জুলাই শেখ হাসিনার একটি সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে অভিযুক্ত শেখ হাসিনা 'রাজাকারের নাতিপুতি' বলেছেন। এতে শিক্ষার্থীদের প্রতি তার তীব্র ঘৃণা প্রকাশ পেয়েছে। এই ঘৃণা থেকে শিক্ষার্থীদের ওপর আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ হামলা করে।''
পর্যবেক্ষণে গত বছরের ১৪ জুলাই শেখ হাসিনার সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) তখনকার ভিসি এ এস এম মাকসুদ কামালের সঙ্গে কথোপকথনে আন্দোলনকারীদের ফাঁসিতে ঝোলানোর হুমকি, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) সাবেক মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসে সঙ্গে কথোপকথনে ড্রোন দিয়ে চিহ্নিত করে হেলিকপ্টার থেকে মারণাস্ত্র (লেথাল উইপন) দিয়ে আন্দোলনকারীদের গুলি করা এবং জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনুর সঙ্গে শেখ হাসিনার টেলিফোনে কথোপকথনের বিষয়টি তুলে ধরা হয়।
ট্রাইব্যুনাল বলেন, 'ফরেনসিক রিপোর্টে প্রমাণিত হয়েছে যে এই কথোপকথগুলো সঠিক এবং এগুলো আর্টিফিসিয়াল ইন্টিলিজেন্স (এআই) দিয়ে তৈরি নয়।'
এ মামলার রাজসাক্ষী চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনের বিষয়ে পর্যবেক্ষণে বলা হয়, 'তিনি দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্য ও পূর্ণাঙ্গ তথ্য প্রকাশ করতে ট্রাইব্যুনালকে অ্যাসিস্ট করেছেন। এসব অপরাধের দায়ে তার সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান থাকলেও, তাকে লঘু দণ্ড দেওয়া হলো।'
