ধানমন্ডি ৩২-এ এক্সকাভেটর: নাট-বল্টু খুলে অকার্যকর করল সেনাবাহিনী; বিক্ষোভকারীদের পুলিশ-সেনাসদস্যদের ধাওয়া
ধানমন্ডি ৩২ এ শেখ মুজিবুর রহমানের বিধ্বস্ত বাড়ি ভাঙতে সেখানে দুইটি এক্সকাভেটর নিয়ে আসে ছাত্র-জনতা। তবে সেনাবাহিনী ও পুলিশের বাধায় এক্সেভেটরগুলো মূল সড়ক থেকে ভেতরে ঢুকাতে পারেনি। এ নিয়ে সেখানে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
বর্তমানে ওই এলাকা পুলিশ ও সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে আছে। এক্সকাভেটরের নাট-বল্টু খুলে অকেজো করে দিয়েছে সেনাবাহিনী। বিক্ষোভকারীদের ধাওয়া দিয়ে কলাবাগান, পান্থপথ সিগন্যাল এবং ২৭ নাম্বারের দিকে সরিয়ে দিয়েছে পুলিশ ও সেনাবাহিনী। সাধারণ পথচারীদের এখান থেকে সরে যেতে বলা হয়েছে।
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত, বিক্ষোভকারীরা কলাবাগান, পান্থপথ সিগনাল ও ধানমন্ডি ২৭ নাম্বার দিয়ে ধানমন্ডি ৩২ নাম্বারে যাওয়ার চেষ্টা করছে। পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটছে।
বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ লাঠিচার্জ ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করেছে।
এদিকে, ধানমন্ডি ৩২-এ সাউন্ড গ্রেনেডের আগাতে সেনাবাহিনীর দুইজন আহত হয়েছেন। তাদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
আজ সোমবার (১৭ নভেম্বর) বেলা ১১টা ৫০ মিনিটে দুইটি ট্রাকে করে দুইটি এক্সকাভেটর ধানমন্ডি ৩২ এ আনা হয়। তবে তারা কোনো সংগঠনের বা দলের কিনা সেটি জানা যায়নি। পরে ধানমন্ডি ৩২ এর প্রবেশ মুখে ব্যারিকেড দিয়ে এক্সেকাভেটর প্রবেশে বাধা দেয় পুলিশ। তখন এক্সকাভেটর দুইটি পাশের মেট্রো শপিং মলের সামনে রাখা হয়।
বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকা কলেজের মূল ফটকের সামনে থেকে ধানমন্ডি-৩২ এর দিকে রওনা হন ঢাকা কলেজসহ বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থী ও সাধারণ জনতা। সেখানে পৌঁছলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। বিবিসি বাংলাকে পুলিশ বলেছে, দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী এ ধরনের কাজ করতে দেওয়ার সুযোগ নেই।
ধানমন্ডি ৩২-এর সামনে ঢাকা কলেজর শিক্ষার্থী জাহিদ টিবিএসকে বলেন, 'ফ্যাসিস্ট হাসিনা দেশের মধ্যে যে ধরনের গণহত্যা চালিয়েছে তার বিচারের দাবিতে—বিচার বিভাগ যেন তার সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে ফাঁসি নিশ্চিত করে তারই পরিপ্রেক্ষিতে আজকের এই কর্মসূচী আমাদের। আমরা জানি যে, শেখ মুজিব বাকশাল কায়েমের মাধ্যমে আওয়ামীলীগকে প্রতিষ্ঠিত করেছিল ফ্যাসিস্ট হিসেবে। পরবর্তীতে শেখ হাসিনা সেই ধারাকে গত ১৭ বছর অব্যাহত রেখেছিল। ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িকে বুলডোজার দিয়ে সম্পূর্ণ রূপে নির্মূল করার মাধ্যমে এই ফ্যাসিবাদকে বিতাড়িত করা হবে।'
এর আগে, ঘটনাস্থলে ডিএমপির রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মাসুদ আলম উত্তেজিত ছাত্র জনতাকে বোঝানোর চেষ্টা করেন। তখন ছাত্র-জনতার পক্ষ থেকে মাইকে বলতে শোনা যায়, 'প্রশাসন ধানমন্ডি ৩২ এর নিরাপত্তা দেয়ার জন্য নয়, আমাদের নিরাপত্তা দেয়ার জন্য। প্রশাসন আমাদের সময় হলে ভেতরে ঢুকতে দেবে। আমরা পুলিশের ব্যারিকেড ভাঙবো না।'
এ সময় সেখানে শেখ হাসিনার দুইটি কুশপুত্তলিকা পোড়ানো হয়। পাশাপাশি ছাত্র-জনতা স্লোগান দেয়,' একটা একটা লীগ ধর, ধইরা ধইরা জেলে ভর'; 'ধানমন্ডি ৩২ ভেঙে দাও, গুড়িয়ে দাও।'
পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেখানে পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনীও ছাত্র-জনতার সামনে মানবঢাল হয়ে দাঁড়ায়।
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার রায় আজ সোমবার (১৭ নভেম্বর) ঘোষণা করবেন বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
রায় ঘোষণা উপলক্ষে গতকাল রাত থেকেই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সামনে কড়া নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়েছে। ট্রাইব্যুনালের সামনে পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও সেনাবাহিনীর সদস্য মোতায়েন রয়েছে।
কর্তৃপক্ষ হাইকোর্ট ও ট্রাইব্যুনাল এলাকায় প্রবেশকারী প্রত্যেককে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তল্লাশি করছে।
