স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী লালদিয়া টার্মিনাল চুক্তি নিয়ে প্রতিবাদ করছে: বিডা চেয়ারম্যান
চট্টগ্রাম বন্দরের লালদিয়া কন্টেইনার টার্মিনাল পরিচালনার জন্য বিদেশি অপারেটর এপিএম টার্মিনালসের নিয়োগের পর বন্দর ঘিরে বিভিন্ন সংগঠনের আন্দোলনের জেরে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বলেছেন, 'বন্দরে চাঁদাবাজি এবং দুর্নীতির মাধ্যমে লাভবান হওয়া স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীগুলো' এখন আন্দোলন করছে।
আজ রোববার রাত ৯টার দিকে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেইজে এক পোস্টে তিনি এ কথা লেখেন।
পোস্টে চৌধুরী আশিক উল্লেখ করেছেন, ''একদল আছেন, তারা পরিচয় দেন 'বিশেষজ্ঞ' বলে। আসলে তারা 'বিশেষ অজ্ঞ'। পড়ালেখা করেন না। জীবনে পিপিপি প্রজেক্ট করেননি। এ বিষয়ে কোনো অভিজ্ঞতা নেই। ফটোকার্ড দেখে কমেন্ট করেন। পত্রিকায় ভুলভাল লেখেন। 'দেশ ধ্বংস', 'দেশ বিক্রি হয়ে যাচ্ছে' ইত্যাদি বলে নিজেদের ভিউ ব্যবসা বাড়ান। আরেক দল বন্দর থেকে চাঁদা তুলতেন। দুর্নীতি করতেন। তাদের মন খারাপ। এখন বিভিন্ন অজুহাতে তারা তাদের স্বার্থ রক্ষায় নেমেছেন। আরেক দলের কথা আপনারা সবাই জানেন।'
তিনি লিখেছেন, 'লালদিয়া চরে সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে ডেনমার্কের এপিএম টার্মিনালস একটি নতুন টার্মিনাল নকশা ও নির্মাণ করবে। যেই বিশ্বমানের টার্মিনাল লালদিয়ায় তৈরি হবে, সেটার মালিক হবে বাংলাদেশ। নির্মাণকাল তিন বছর। তারপর এপিএম ৩০ বছর ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকবে। নির্মাণের পর ৩০ বছর মেয়াদি চুক্তি। চুক্তির মেয়াদকালে আমাদের সব বাণিজ্যিক, সামাজিক ও পরিবেশগত শর্ত মেনে চললে মেয়াদ বৃদ্ধি করা যাবে।'
পোস্টে তিনি আরও বলেন, 'এপিএম টার্মিনালস বিশ্বখ্যাত এপি মোলার-মায়ার্সক গ্রুপের সম্পূর্ণ মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান। বিশ্বের শীর্ষ ২০টি বন্দরের ১০টি অপারেট করে তারা। ৩৩টি দেশে সর্বমোট ৬০টির বেশি টার্মিনাল পরিচালনা করছে এই মুহূর্তে। ইউরোপের বিভিন্ন দেশসহ ভিয়েতনাম, সিঙ্গাপুর ও চীনে অপারেট করছে তারা।
এই চুক্তির দলিল জনসম্মুখে প্রকাশ করা হবে না উল্লেখ করে চৌধুরী আশিক আরও লিখেছেন, 'কোনো দেশের সরকারই পিপিপি চুক্তির মূল দলিল জনসম্মুখে প্রকাশ করবে না আইনগত সীমাবদ্ধতার কারণে। সরকারি ক্রয়নীতি ও পিপিপি গাইডলাইন অনুযায়ী পূর্ণ প্রকাশ নিরাপদ নয়। কারণ, এটি ভবিষ্যৎ দরপত্র প্রক্রিয়ায় প্রভাব ফেলতে পারে। আমরা সব প্রকাশ করে ফেললে আগামী সব চুক্তির দর কষাকষিতে আমরা ব্যাকফুটে চলে যাবো।'
তিনি লিখেছেন, 'এছাড়াও চুক্তির দলিলে ব্যবসায়িক তথ্য ও অপারেশনাল কৌশল থাকে যা গোপনীয়তার শর্ত দ্বারা সুরক্ষিত থাকে। বিশ্বব্যাংক, এডিবির মতো সংস্থাগুলোও সম্পূর্ণ চুক্তি প্রকাশ না করে। বরং সারাংশ প্রকাশ করার পরামর্শ দেয়। এতে স্বচ্ছতা বজায় থাকে। আবার বেসরকারি অংশীদারের গোপনীয়তা রক্ষাও হয়। লালদিয়ার ক্ষেত্রেও এসব বিষয় প্রযোজ্য।'
অপারেটর বাছাইয়ের প্রক্রিয়া স্বচ্ছ ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, 'পিপিপি নীতিমালার জি-টু-জি পদ্ধতির আলোকে টেন্ডার আহ্বান, প্রাক-যোগ্যতা যাচাই, টেকনিক্যাল ও ফিনান্সিয়াল মূল্যায়ন এবং ডিউ ডিলিজেন্সের মাধ্যমে অপারেটর চূড়ান্ত করা হয়েছে। পুরো প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে নিযুক্ত করা হয়েছে নিরপেক্ষ টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজার, আইনজীবী, কনসালট্যান্ট। গঠন করা হয়েছে আন্তমন্ত্রণালয় টেন্ডার কমিটি। প্রতিটি ধাপের অডিটযোগ্য রেকর্ড সংরক্ষণ করা হয়েছে।
