আত্মসমর্পণ করে জামিন পেলেন, হাসিমুখে দেখালেন ‘ভি’ চিহ্ন; মেহজাবীন বলছেন, মামলা 'ভিত্তিহীন'
শান্তিশৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে করা মামলায় আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন পেয়েছেন অভিনেত্রী মেহজাবীন চৌধুরী ও তার ভাই আলিসান চৌধুরী।
আজ রোববার সন্ধ্যায় ঢাকার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আফরোজা হক তানিয়ার আদালতে তারা আত্মসমর্পণ করে জামিন প্রার্থনা করলে আদালত তা মঞ্জুর করেন।
আসামিপক্ষের আইনজীবী তুহিন হাওলাদার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
জামিন পাওয়ার পর আদালত প্রাঙ্গণে মেহজাবীন চৌধুরীকে হাসিমুখে গণমাধ্যমকর্মীদের দিকে তাকিয়ে 'ভি' (বিজয়) চিহ্ন প্রদর্শন করতে দেখা যায়।
আদালতে আসামিপক্ষের আইনজীবী তুহিন হাওলাদার বলেন, 'মামলাটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও সাজানো। মেহজাবীন একজন প্রতিষ্ঠিত অভিনেত্রী হওয়ায় তার প্রতিপক্ষরা লাভবান হওয়ার জন্য এই মামলা করেছে।'
তিনি আরও বলেন, বাদীর সঙ্গে আসামিদের কোনোদিন দেখা বা যোগাযোগ হয়নি। মামলায় বাদী ও আসামি উভয়ের যে ঠিকানা ব্যবহার করা হয়েছে, তা সঠিক নয়। সমন জারির বিষয়টি না জানায় তারা আগে হাজির হতে পারেননি। গণমাধ্যমে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির খবর দেখে তারা আদালতে আত্মসমর্পণ করেছেন।
শুনানি শেষে আদালত জামিন মঞ্জুর করে আগামী ১৮ ডিসেম্বর এই মামলায় জবাব দাখিলের দিন ধার্য করেছেন।
গত ৩ নভেম্বর মেহজাবীন ও তার ভাইয়ের আদালতে হাজির হওয়ার দিন ধার্য ছিল। তবে তারা ওইদিন আদালতে হাজির না হওয়ায় ঢাকার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৩ আফরোজা হক তানিয়া তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। রোববার তাদের গ্রেপ্তার সংক্রান্ত সংবাদ মিডিয়াতে প্রকাশিত হয়। এরপর তারা সন্ধ্যায় আত্মসমর্পণ করার আবেদন জমা দেন।
মামলার আরজি থেকে জানা যায়, আমিরুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি মামলাটি দায়ের করেন। তার অভিযোগ, দীর্ঘদিনের পরিচয়ের সুবাদে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে আসামি মেহজাবীন চৌধুরী পারিবারিক ব্যবসায় তাকে অংশীদার করার আশ্বাস দেন। এভাবে নগদ ও বিকাশের মাধ্যমে বিভিন্ন সময়ে বাদী মোট ২৭ লাখ টাকা প্রদান করেন। কিন্তু দীর্ঘদিনেও ব্যবসায়িক কার্যক্রম শুরু না হওয়ায়, বাদী টাকা চাইলে তারা সময়ক্ষেপণ শুরু করেন।
পরবর্তীতে গত ১১ ফেব্রুয়ারি পাওনা টাকা চাইতে গেলে আসামিরা তাকে ১৬ মার্চ হাতিরঝিল রোডের পাশে একটি রেস্টুরেন্টে আসতে বলেন।
অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, সেদিন ঘটনাস্থলে গেলে মেহজাবীন ও তার ভাইসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৪–৫ জন বাদীকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। তারা বলেন, 'এরপর তুই আমাদের বাসায় টাকা চাইতে যাবি না। তোকে বাসার সামনে পুনরায় দেখলে জানে মেরে ফেলব।'
এসব বলে তারা বাদীর জীবননাশের হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করেন। পরবর্তীতে বিষয়টি সমাধানের জন্য বাদী ভাটারা থানায় গেলে থানা কর্তৃপক্ষ তাকে আদালতে মামলা দায়েরের পরামর্শ দেন।
এ ঘটনায় আমিরুল ইসলাম ঢাকার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ফৌজদারী কার্যবিধির ১০৭ ও ১১৭(৩) ধারায় মামলাটি দায়ের করেন।
অভিযোগ অস্বীকার মেহজাবিনের
মেহজাবীন দাবি করেছেন, তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ পুরোপুরি ভিত্তিহীন।
নিজের ভেরিফায়েড পোস্টে দেয়া এক পোস্টে তিনি লিখেছেন, 'আমি মেহজাবীন চৌধুরী। আজ একটি ভুয়া ও মিথ্যা মামলার সংবাদ দেখে আমি বিস্মিত। আমি মনে করি, বিষয়টি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত গুজব ছাড়া কিছু নয়। এ ধরনের কোনো ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে আমি সরাসরি বা পরোক্ষভাবে জড়িত নই। যে বা যারা এমন ভিত্তিহীন মামলা করেছেন, তাদের কাউকে আমি চিনি না। যারা আমাকে চেনেন, তারা জানেন আমি কেবল আমার অভিনয় ও পেশাগত দায়িত্বে সর্বদা নিবেদিত। আমি এমন কোনো ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডে নেই, যেখানে আইনি জটিলতায় জড়ানোর প্রশ্ন আসে।'
তিনি লিখেছেন, 'একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে আমি দেশের আইন, নিয়মনীতি ও সামাজিক দায়িত্বে বিশ্বাসী। ইতিমধ্যে আমার আইনজীবী যথাযথ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু করেছেন, যাতে এসব গুজব ও মিথ্যা প্রচারণা বন্ধ হয় এবং ভবিষ্যতে কেউ আর এ ধরনের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কিছু করতে না পারে!'
এ নিয়ে বিভ্রান্তি না ছড়ানোর আহ্বান জানিয়ে মেহজাবীন বলেন, 'আমি আমার সহকর্মী গণমাধ্যমকর্মীদের অনুরোধ করছি, ভিত্তিহীন কোনো তথ্য যাচাই ছাড়া প্রকাশ করবেন না। এবং আমার সব শুভাকাঙ্ক্ষী, ভক্ত ও পরিচিতজনকে বলব, আপনাদের ভালোবাসা আর আস্থাই আমার সবচেয়ে বড় শক্তি। বিভ্রান্তি না ছড়িয়ে সত্যের পাশে থাকুন।'
