১৩ নভেম্বর আ.লীগের ‘ঢাকা লকডাউন’ রুখতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সর্বাত্মক প্রস্তুতি
নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগ ১৩ নভেম্বর 'ঢাকা লকডাউন'-এর পরিকল্পনা করেছে বলে খবর পাওয়ার পর ওই দিন যেকোনো ধরনের সহিংস বিক্ষোভ প্রতিরোধ করতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো পূর্ণ-মাত্রার অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, যেকোনো সম্ভাব্য হুমকি এড়াতে পুলিশ, র্যাব ও অন্যান্য ইউনিটের প্রায় ৬০ হাজার সদস্য মোতায়েন করা হতে পারে।
শনিবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উচ্চ-পর্যায়ের রুদ্ধদ্বার বৈঠকে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের বলা হয়েছে, মিছিল বা সমাবেশ নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হলে তাদের কঠোর জবাবদিহিতার আওতায় আনা হবে।
পুলিশের গোয়েন্দা সূত্র সতর্ক করেছে, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, স্কুলসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা টার্গেট করা হতে পারে। ককটেল বিস্ফোরণ ও অগ্নিসংযোগের আশঙ্কা রয়েছে। গত দুই দিনে রাজধানীর কাকরাইলের সেন্ট মেরি চার্চ ও সেন্ট জোসেফ স্কুলসহ তিনটি স্থানে অন্তত ছয়টি ককটেল বিস্ফোরিত হয়েছে।
কর্তৃপক্ষ সম্ভাব্য বোমা প্রস্তুতকারীদের খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে। পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আওয়ামী লীগ সমর্থকদের জড়ো হওয়ার আহ্বান জানানো পোস্টগুলো পর্যবেক্ষণ করছে।
ওই দিন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের (আইসিটি) গত বছরের গণ-অভ্যুত্থানের সময়কার মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায়ের তারিখ ঘোষণা করার কথা রয়েছে। এই মামলায় ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ তিনজনের বিচার চলছে।
একজন অতিরিক্ত উপ-কমিশনার টিবিএসকে বলেন, 'আমরা ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে হেফাজতে নিয়েছি। মেসেঞ্জার, সিগন্যাল ও হোয়াটসঅ্যাপের অভ্যন্তরীণ গ্রুপগুলোও পর্যবেক্ষণ করছি। এসব কথোপকথনের সূত্র ধরে আইন-শৃঙ্খলা অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করা ব্যক্তিদের আটক করেছি।'
তিনি আরও বলেন, 'কিছু আ.লীগ নেতা সড়ক অবরোধের ডাক দিয়েছিলেন, আবার অন্যরা তাদের গ্রেপ্তার করার জন্য আমাদের তথ্য দিয়েছে। তাদের অভ্যন্তরীণ কোন্দল আমাদের প্রচেষ্টায় সহায়ক হচ্ছে।'
তিনি বলেন, ঢাকার প্রবেশপথ ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোসহ কৌশলগত স্থানগুলোতে নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করার পরিকল্পনা রয়েছে। গণপরিবহনে সাদা পোশাকে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ এবং পায়ে হেঁটে, মোটরসাইকেল ও গাড়িতে করে বহুমাত্রিক টহল চলছে।
ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার এসএন নজরুল ইসলাম বলেন, 'আওয়ামী লীগের পক্ষে এই মুহূর্তে বড় কিছু করা সম্ভব নয়। তবে ১৩ নভেম্বর ঘিরে ফেসবুক ও ইউটিউব থেকে আমরা অনেক ধরনের তথ্য পাচ্ছি। এসব তথ্যকে গুরুত্ব দিয়ে আমরা কাজ করছি। আমরা পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নিচ্ছি। আতঙ্কিত হওয়ার মতো কিছু নেই। তবে সুনির্দিষ্ট কোনো হুমকি না থাকলেও আমরা বেশ কিছু নেতাকর্মীকে নজরদারিতে রেখেছি।'
মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত আইনশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত কোর কমিটির সভায়ও বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। এ সময় বিশৃঙ্খলাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। নির্দেশনা অনুযায়ী, আজ (১০ নভেম্বর) থেকেই থেকেই ঢাকার প্রবেশপথ, আবাসিক হোটেল, মেস ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের হলে বিশেষ তল্লাশি অভিযান শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। ইতিমধ্যে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোতে অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।
শনিবার ডিএমপি ১৪২টি স্থানে বড় ধরনের নিরাপত্তা মহড়া চালিয়েছে। এতে প্রায় ৭ হাজার সদস্য মোতায়েন করা হয়। প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন, সচিবালয়, হাইকোর্ট, বঙ্গভবন ও তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়সহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলো এই মহড়ার আওতায় ছিল।
র্যাবের উইং কমান্ডার এমজেডএম ইন্তেখাব চৌধুরী বলেন, 'আমাদের গোয়েন্দা টিম এবং সাইবার মনিটরিং টিম সক্রিয় অবস্থায় আছে। কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটার সুনির্দিষ্ট কোনো আশঙ্কা আমাদের কাছে নেই। তারপরও র্যাব সদস্যরা তৎপর আছেন। মাঠে নামার জন্য আমাদের প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম চলছে। অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েন, টহল বৃদ্ধি এবং চেকপোস্ট বাড়ানোর বিষয়টি নিয়ে যাচাই-বাছাই চলছে। ১০ নভেম্বর থেকে মাঠপর্যায়ে এসব দৃশ্যমান হবে। পুরো নিরাপত্তা ছক প্রণয়ন হচ্ছে পুলিশ সদর দপ্তরের সঙ্গে সমন্বয় করে। এছাড়া সিআইডিসহ অন্যান্য ইউনিটের সঙ্গেও সমন্বয় করা হচ্ছে।'
অতিরিক্ত আইজিপি খোন্দকার রফিকুল বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা অপপ্রচার আছে। এসব অপপ্রচারকে সামনে রেখে প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। 'পরাজিত রাজনৈতিক শক্তি অতীতে যেভাবে বিভ্রান্তি তৈরির চেষ্টা করেছে, এবারও তেমন কিছু করার চেষ্টা করছে। আমরা বিষয়টিকে হালকাভাবে নিচ্ছি না। পুলিশ শক্ত অবস্থানে আছে। রাজধানীসহ সারা দেশে চেকপোস্ট বাড়ানোর পাশাপাশি তল্লাশি কার্যক্রম জোরদারের নির্দেশ দিয়েছি। চলমান অভিযান ১০ নভেম্বর থেকে অনেক বেশি জোরালো হবে,' বলেন তিনি।
