কাল থেকে সারা দেশে প্রাথমিকের শিক্ষকদের কর্মবিরতি ঘোষণা
দশম গ্রেডে বেতনসহ তিন দফা দাবিতে আগামীকাল রোববার (৮ নভেম্বর) থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য সারা দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মবিরতি ঘোষণা করেছেন সরকারি প্রাথমিক শিক্ষকেরা। আজ শনিবার (৮ নভেম্বর) বিকেলে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে জড়ো হয়ে এ ঘোষণা দেন তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষকদের চারটি সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত জোট 'প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ'-এর পক্ষ থেকে এ ঘোষণা দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম বলেন, 'শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে পুলিশ বর্বর হামলা চালিয়েছে। দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত সারা দেশে অনির্দিষ্টকালের জন্য সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মবিরতি চলবে। একইসাথে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচিও চলবে।'
এর আগে শিক্ষকদের রাজধানীর শাহবাগ অভিমুখী পদযাত্রায় বাধা দেয় পুলিশ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ জলকামান, সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। আজ বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
আজ সকালে তিন দফা দাবিতে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা। সকাল ৯টা থেকে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা হাজারো শিক্ষক সেখানে জড়ো হয়ে অবস্থান নেন। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন তারা।
এ বিষয়ে ডিএমপি থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে জানানো হয়, আনুমানিক বিকেল ৪টার দিকে আন্দোলনকারীদের মধ্য থেকে একটা দল পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে শাহবাগ মোড় পার হয়ে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনার দিকে যাওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় পুলিশ বাধা দিলে তারা পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এতে বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হন। পুলিশের নির্দেশনা অমান্যকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পরবর্তীতে পুলিশ কয়েক রাউন্ড সাউন্ড গ্রেনেড ও জলকামান নিক্ষেপ করে।
সেখানে আরও উল্লেখ করা হয়, প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনা ও সংলগ্ন এলাকায় সকল প্রকার সভা-সমাবেশ, মিছিল, গণজমায়েত নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলেও আন্দোলনকারীরা তা উপেক্ষা করে সামনের দিকে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এবং রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নিরাপত্তার স্বার্থে পুলিশ আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
কর্মসূচীতে অংশ নেওয়া মাগুরা সদর উপজেলার রাজারামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক শামীম বিল্লাহ দ্য বিজনেজ স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'শহীদ মিনারে আমাদের অনশন কর্মসূচী ছিল। সেখান থেকে আমরা তিনটার দিকে শাহবাগে আসি। আমাদের "কলম নিক্ষেপ" কর্মসূচী ছিল।'
তিনি আরও বলেন, 'পৌনে চারটার দিকে পুলিশ আমাদের কর্মসূচীতে বাঁধা দেয়। পুলিশ আমাদের উপর লাঠিচার্জ, সাউন্ড গ্রেনেড ও জলকামান নিক্ষেপ করে। আমাদের শতাধিক শিক্ষক আহত হয়েছে।'
'প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ'-এর ব্যানারে বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির বিভিন্ন অংশসহ চারটি সংগঠন এ কর্মসূচি পরিচালনা করছে। সংগঠনগুলো হলো: বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি (কাশেম–শাহিন), বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতি, বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি (শাহিন–লিপি) এবং সহকারী শিক্ষক দশম গ্রেড বাস্তবায়ন পরিষদ।
এ ছাড়া ঢাকা–চট্টগ্রাম বিভাগের তৃতীয় ধাপে নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকরাও আন্দোলনে যোগ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে যে ৩টি প্রধান দাবি উত্থাপন করা হয়েছে, সেগুলো হলো: দশম গ্রেডে বেতন-ভাতা প্রদান; ১০ বছর ও ১৬ বছর চাকরি পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড প্রদান সংক্রান্ত জটিলতা ও সমস্যার স্থায়ী সমাধান এবং সহকারী শিক্ষকদের জন্য শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতির নিশ্চয়তা প্রদান।
