জামায়াতসহ ৮ দলের পদযাত্রায় পুলিশের বাধা; ৫ দাবিতে আলোচনা করতে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে শীর্ষ নেতাদের সাক্ষাৎ
আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের আগে 'জুলাই জাতীয় সনদ' বাস্তবায়ন এবং গণভোটের দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার দিকে স্মারকলিপি দিতে যাওয়া বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীসহ আটটি ইসলামমী দলের মিছিল পুলিশি বাধার মুখে পড়েছে।
আজ (৬ নভেম্বর) দুপুর নাগাদ পুরান পল্টন মোড় থেকে শুরু হওয়া মিছিলটি মৎস্য ভবনের কাছে গেলে পুলিশ ব্যারিকেড দিয়ে বাধা দেয়।
বাধা সত্ত্বেও আট দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা তাদের দাবি নিয়ে আলোচনার জন্য প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যমুনায় প্রবেশ করতে সক্ষম হন। প্রতিনিধি দলে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ারসহ অন্যান্য দলের শীর্ষ নেতারা ছিলেন।
এর আগে, মৎস্য ভবন থেকে হাইকোর্ট পর্যন্ত রাস্তার এক পাশে বসে পড়ে দলগুলোর নেতাকর্মীরা। এতে আশপাশের এলাকায় তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়।
পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ সকাল থেকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে জামায়াত ও অন্যান্য ইসলামি দলগুলোর নেতাকর্মীরা শাপলা চত্বরের দিকে মিছিল নিয়ে আসেন। পরে তারা পুরানা পল্টনে গিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে মিলিত হন।
আন্দোলনরত আটটি ইসলামি দল হলো—বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি (বিডিপি)।
সমাবেশে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার প্রধান উপদেষ্টাকে উদ্দেশ করে বলেন, 'আপনি যদি ব্যর্থ হন, তাহলে আপনার অর্জিত মর্যাদা ক্ষুণ্ন হবে। রাজনৈতিক দলগুলোকে এক টেবিলে বসার আহ্বান জানিয়ে আপনি যে সম্মান অর্জন করেছেন, তা অক্ষুণ্ন রাখতে এখনই উদ্যোগ নিতে হবে। আমরা জামায়াতের পক্ষ থেকে আগেই ঘোষণা দিয়েছি— আমরা প্রস্তুত।'
তিনি আরও বলেন, 'জুলাই সনদ বাস্তবায়নের দাবির পেছনে দেশি–বিদেশি নানা চক্র সক্রিয়। এর প্রতিবাদে জামায়াতে ইসলামীসহ সমমনা আটটি দল আজ পাঁচ দফা দাবিতে প্রধান উপদেষ্টা বরাবরে স্মারকলিপি দিচ্ছে। এর মধ্যে অন্যতম দাবি, অবিলম্বে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের আদেশ জারি ও জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোটের আয়োজন।'
প্রধান উপদেষ্টার প্রশংসা করে পরওয়ার বলেন, 'আপনি গণ-আকাঙ্ক্ষার প্রতি সম্মান রেখে রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য ছয়টি কমিশন গঠন করেছেন এবং ঐকমত্য কমিশনের মাধ্যমে সব রাজনৈতিক দলের প্রস্তাব একত্র করেছেন। এখন সেই ঐকমত্য বাস্তবায়নের দায়িত্ব আপনার। বিলম্ব না করে অবিলম্বে জুলাই সনদের আদেশ জারি করুন। জাতীয় নির্বাচনের আগে নভেম্বরে গণভোটের মধ্য দিয়ে সনদের আইনি ভিত্তি দেওয়া সম্ভব।'
সরকারের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক দলগুলোকে আলোচনায় বসার আহ্বানের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'আমরা বসতে রাজি। খেলায় দুই দল থাকে, কিন্তু একজন রেফারি দরকার হয়—আপনি সেই রেফারির দায়িত্ব পালন করুন। আমরা সহনশীল, আলোচনায় আগ্রহী। জাতীয় স্বার্থে অতীতেও ছাড় দিয়েছি, প্রয়োজনে আবারও দেব। তবে সব উপদেষ্টার নিরপেক্ষ ভূমিকা আমরা চাই।'
সমাবেশে জামায়াতের নায়েবে আমীর ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, 'আমাদের জুলাইয়ের অর্জনকে ব্যর্থ হতে দিবো না । গণভোট অবশ্যই জাতীয় নির্বাচনের আগে হতে হবে।'
অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, 'জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোটের ব্যাপারে আপনারা চালাকি শুরু করেছেন । আপনাদের চালাকি আমরা বুঝি। সময়ক্ষেপণ আপনাদের বিপদে ফেলবে। আমরা এখন নিয়মতান্ত্রিকভাবে আন্দোলন করছি। সোজা আঙুলে ঘি না উঠলে, আমরা আঙুল বাঁকা করবো। ঘি আমাদের লাগবেই। নো হাংকি-পাংকি।'
গণভোটের অর্থ সংকুলানের ব্যপারে তাহের বলেন, 'একদিনে বাংলাদেশে যে পরিমাণ চাঁদাবাজি হয় তা দিয়ে একটি গণভোট করা যায়।'
তিনি বলেন, 'রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপে সরকারকে রেফারির ভূমিকা অবশ্যই নিতে হবে। আমরা আলোচনার জন্য একটি কমিটি ঘোষণা করেছি। আপনারাও কমিটি গঠন করেন। বিএনপিকে দ্রুত আলোচনায় অংশ নেয়ার জন্য আমি অনুরোধ করবো ।'
এর আগে বুধবার আগারগাঁওয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) সঙ্গে বৈঠক শেষে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আজাদ সাংবাদিকদের বলেন, 'আমাদের দাবি সুস্পষ্ট: গণভোট অবশ্যই জাতীয় নির্বাচনের আগে এবং পৃথক দিনে অনুষ্ঠিত হতে হবে।'
জামায়াতে ইসলামীসহ সমমনা আটটি ইসলামি দলের দাবিগুলো হলো—
১. জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি ও নভেম্বরের মধ্যেই গণভোট আয়োজন,
২. আগামী জাতীয় নির্বাচনে উভয় কক্ষে বা উচ্চকক্ষে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতি চালু,
৩. অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিতকরণ,
৪. পূর্ববর্তী সরকারের 'জুলুম-নির্যাতন, গণহত্যা ও দুর্নীতির বিচার' দৃশ্যমান করা,
৫. 'স্বৈরাচারের দোসর' জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা।
