বিএনপির সঙ্গে ঝগড়া নয়, আলোচনায় বসতে চায় জামায়াত: তাহের
জুলাই জাতীয় সনদের বাস্তবায়ন পদ্ধতি এবং গণভোটের সময়সূচি নিয়ে সৃষ্ট বিরোধ নিরসনে খোলামেলা আলোচনায় বসতে বিএনপিকে আহ্বান জানিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। দলটির নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের বলেছেন, 'বিএনপির সঙ্গে কোনো ঝগড়ায় যেতে চায় না জামায়াত। বরং দেশের স্বার্থে আলোচনায় বসতে চায়।'
রোববার (২ নভেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর মগবাজারের আল-ফালাহ মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই আহ্বান জানান।
ডা. তাহের বলেন, 'রাজনীতির অনেক খেলা আছে, জামায়াত খেলতে চায় না। সোমবার (৩ নভেম্বর) দলীয় বৈঠক রয়েছে। সেখানে পরবর্তী কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা করা হবে।'
বিএনপিকে আনুষ্ঠানিকভাবে আলোচনার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'এ আহ্বান এখন সংবাদমাধ্যমের মাধ্যমে দিচ্ছি। দেখি বিএনপি কাল (সোমবার) সংবাদমাধ্যমে কী প্রতিক্রিয়া দেখায়।'
তিনি বলেন, 'একটি মহল বিভ্রান্তিকর বক্তব্য দিয়ে দেশে উত্তপ্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে। আমরা এ পরিস্থিতির অবসান চাই। আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হোক, তা আমরা অবশ্যই চাই। কিন্তু জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নভেম্বরের মধ্যেই আমরা জুলাই সনদের আদেশের ওপর গণভোট চাই। দেশবাসী সকলেই জানেন, গণভোটের ব্যাপারে সবাই একমত। তবে একটি দল জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনেই গণভোট চায়, যা সম্পূর্ণ অবাস্তব।'
তিনি আরও বলেন, 'দেশের জনগণ সকল সংকটের সমাধান চায়। তারা জাতীয় ঐক্য চায়। জাতীয় ঐক্যই বর্তমান সংকট থেকে উত্তরণের একমাত্র পথ।'
তিনি সমালোচনা করে বলেন, 'কোনো কোনো মহল বলেন, গণভোটে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা প্রয়োজন। তাদের জবাবে আমি বলতে চাই, জাতীয় সংকট থেকে উত্তরণের জন্য গণভোটে যে টাকা খরচ হবে, জাতীয় প্রয়োজনে এটা কিছুই নয়। ফ্যাসিবাদীরা দেশের যে টাকা বিদেশে পাচার করেছে, তা দিয়ে এক হাজারটি গণভোট করা সম্ভব।'
বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, 'বিএনপি জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ ঘোষণার দাবি জানাচ্ছে। তাদের এ বক্তব্যের জবাবে আমি জানাতে চাই, ১৯৯১ সালে যদি জামায়াত নিষিদ্ধ থাকত, তাহলে কি জামায়াতের সমর্থন নিয়ে বিএনপি সরকার গঠন করতে পারত? সেদিন যদি জামায়াত তাদের সমর্থন দিয়ে ক্ষমতায় না বসাত, তাহলে বিএনপি কি বর্তমান পর্যায়ে আসতে পারত? জবাব হলো—অবশ্যই না। বিএনপি এখন পতিত স্বৈরাচারীদের মতোই জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে একই ধরনের, একই ভাষায় হাস্যকর বক্তব্য দিয়ে অকৃতজ্ঞতার প্রমাণ দিচ্ছে। তারা এখন ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। দেশে বর্তমান যে সংকট চলছে, তা বিএনপিই সৃষ্টি করেছে। জামায়াত কখনো ধোঁকা, প্রতারণা ও মুনাফিকির রাজনীতি করে না। বিএনপিই বরং ধোঁকা, প্রতারণা ও অকৃতজ্ঞতার পরিচয় দিচ্ছে।'
তিনি আরও বলেন, 'বিগত ৫৪ বছরে বারবার ক্ষমতার পরিবর্তন হয়েছে, কিন্তু জনগণের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হয়নি। যারাই ক্ষমতায় গিয়েছে, তারাই ধোঁকা, প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে লুটপাট করেছে, দলীয়করণ, আত্মীয়করণ করেছে। জনগণ এ অবস্থার অবসান চায়। এ অবস্থার পরিবর্তন চায় জুলাই যোদ্ধারা।'
সংস্কার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'বিএনপি প্রথম থেকেই সংস্কারের ব্যাপারে অনীহা প্রকাশ করে আসছে। তারা নিজেদেরকে সংস্কারের পিতা দাবি করছিল, কিন্তু বাস্তবে সব সময়ই সংস্কারের বিরোধিতা করছে। দুনিয়ার কোনো দেশেই নোট অব ডিসেন্টের ওপর গণভোট হয়নি।'
তিনি আরও বলেন, 'জামায়াতে ইসলামী কখনো মিথ্যা বক্তব্য দেয় না। বিএনপির মহাসচিব জুলাই সনদে স্বাক্ষর করেছে। এখন মিথ্যা বক্তব্য দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করতে গিয়ে নিজেরাই বিপদে পড়েছে। অথচ অভিযোগ করছে যে, জামায়াত তাদের বিপদে ফেলেছে। বরঞ্চ তারা নিজেরাই মিথ্যা বক্তব্য দিয়ে বিপদে পড়েছে। বিএনপির এক নেতা বলেছেন, তারা সংস্কার চায় না, জুলাই সনদ এবং গণভোট চায় না। আমাদের প্রশ্ন হলো—জামায়াত কখন কোথায় বলেছে যে, তারা সংস্কার চায় না, জুলাই সনদ ও গণভোট চায় না? বিএনপির এ দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ থাকলে তা জাতির সামনে পেশ করা উচিত। মূলত তারাই এ ধরনের বিভ্রান্তিকর বক্তব্য দিয়ে নিজেরাই বিপদে পড়েছে।'
সরকার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'ড. ইউনূস সরকার জনগণের সমর্থন নিয়েই ক্ষমতায় বসেছে। তার সততা, যোগ্যতা, নিষ্ঠা, আন্তরিকতা নিয়ে কারও কোনো প্রশ্ন নেই। কিন্তু বিএনপি বিভ্রান্তিকর বক্তব্য দিয়ে সরকারকে বেকায়দায় ফেলে ফায়দা লোটার চেষ্টা করছে।'
তিনি সতর্ক করে বলেন, 'সরকারকে অবশ্যই নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে।' কোনো মহলের ফাঁদে পা না দেওয়ার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি৷
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান ও মাওলানা আবদুল হালিম, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ মো. শাহাবুদ্দিন প্রমূখ৷
