প্রতারণা ও মানবপাচার মামলা: সাবেক মন্ত্রী ইমরান আহমেদসহ ১০৩ জনের বিরুদ্ধে পুনঃতদন্তের নির্দেশ
প্রতারণা, অর্থ আত্মসাৎ ও মানবপাচারের অভিযোগে সাবেক প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমেদ, সাবেক সিনিয়র সচিব ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন, সাবেক সংসদ সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী, নিজাম হাজারী ও বেনজীর আহমেদসহ মোট ১০৩ জনের বিরুদ্ধে করা মামলায় পুনঃতদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
রোববার (২ নভেম্বর) মানবপাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. আবদুল্লাহ আল মামুনের আদালত এ আদেশ দেন।
সংশ্লিষ্ট আদালতের বেঞ্চ সহকারী তৃষ্ণা জানান, বাদীর নারাজি আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারক ডিবি (ডিটেকটিভ ব্রাঞ্চ) কে মামলাটি পুনঃতদন্তের নির্দেশ দেন।
নথি সূত্রে জানা গেছে, গত ১৫ জুলাই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পুলিশ পরিদর্শক মো. রাসেল আসামিদের অব্যাহতির সুপারিশ করে প্রতিবেদন জমা দেন। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, আসামিদের বিরুদ্ধে বাদীর করা অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। বাদী মিথ্যা অভিযোগ করায় তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং আসামিদের অব্যাহতি দেওয়ার সুপারিশ করেন তিনি।
এদিন পুলিশের দেওয়া চূড়ান্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে নারাজি আবেদন দাখিল করেন মামলার বাদী আলতাব খান।
বাদীর আবেদনে বলা হয়, তদন্তকারী কর্মকর্তা কোনো তদন্ত না করে একটি বানোয়াট ও দায়সারা প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। তিনি আসামিদের বিরুদ্ধে যথাযথ তদন্ত না করলেও তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে, যেগুলো দুদকসহ একাধিক সংস্থা তদন্ত করছে। বাদীর দাবি, মামলাটি অধিকতর তদন্তে পাঠানো হলে আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জশিট হবে এবং অপরাধের প্রমাণ পাওয়া যাবে।
২০২৪ সালের ৩ সেপ্টেম্বর রাজধানীর পল্টন থানায় মামলাটি দায়ের করেন আফিয়া ওভারসিজের স্বত্বাধিকারী আলতাব খান। মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে ২৪ হাজার কোটি টাকা চাঁদাবাজির অভিযোগ আনা হয়।
অভিযোগে বলা হয়েছে, বাদী দীর্ঘদিন ধরে সরকারের নিয়মিত ভ্যাট ও ট্যাক্স প্রদান করে সুনামের সঙ্গে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছেন। অন্যদিকে আসামিরা একটি সংঘবদ্ধ মানবপাচার চক্র, যারা প্রবাসে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে হাজার হাজার শ্রমিকের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করেছেন এবং সেই অর্থে দেশ-বিদেশে বিপুল সম্পদ গড়ে তুলেছেন।
এছাড়া অভিযোগে বলা হয়, জনশক্তি রপ্তানিতে দুই হাজারের বেশি রিক্রুটিং এজেন্ট থাকলেও আসামিরা ব্যবসায়ীদের মধ্যে বৈষম্য তৈরি করে সিন্ডিকেট মাফিয়া চক্র গঠন করেছেন।
মামলায় উল্লেখ আছে, সাবেক সচিব ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন সরকারি চাকরিরত অবস্থায় নিজের ছেলেকে ওই সিন্ডিকেটের সদস্য হিসেবে ব্যবহার করেছেন। অপরদিকে সাবেক মন্ত্রী ইমরান আহমেদ তার স্ত্রীর বড় ভাইয়ের ছেলেকে 'প্রবাসী' নামের একটি অ্যাপ চালুর অনুমোদন দিয়ে চক্রটিকে সহযোগিতা করেছেন।
অন্য আসামিদের মধ্যে রয়েছেন- সাবেক সংসদ সদস্য নিজাম হাজারী, ইম্পেরিয়াল রিসোর্স লিমিটেডের এমডি মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান, ব্রাদারস ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী রফিকুল ইসলাম, যেজি আলফানা ম্যানেজমেন্টের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ সোহেল রানা, অপরাজিতা ওভারসিজের স্বত্বাধিকারী আরিফুর রহমান, ট্রান্স এশিয়া ইন্টিগ্রেট সার্ভিস লিমিটেডের এমডি জামাল আবু জাহেদ, ইউনাইটেড এক্সপোর্ট লিমিটেডের এমডি এস এম রফিক, কিউ কে কুইক এক্সপ্রেস লিমিটেডের চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম রবিন, নাতাশা ওভারসিজের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ নাজিবুর রহমান, আমিন ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলসের স্বত্বাধিকারী রুহুল আমিন, জিএমজি ট্রেডিং প্রাইভেট লিমিটেডের এমডি গোলাম মওলা, আল ফারা হিউম্যান রিসোর্সেস অ্যান্ড কনসালটেন্সির স্বত্বাধিকারী জাকির আহমেদ ভূঁইয়া, ম্যানপাওয়ার কর্পোরেশনের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ মাহবুব আলম, মদিনা ওভারসিজের স্বত্বাধিকারী নাসির উদ্দিন মজুমদার (সিরাজ), আল খামিস ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী রেজিয়া বেগম, স্ট্যানফোর্ড এমপ্লয়মেন্ট প্রাইভেট লিমিটেডের এমডি উত্তম কুমার রায়, সুলতান ওভারসিজের স্বত্বাধিকারী আলতাব হোসেন, জান্নাত ওভারসিজের স্বত্বাধিকারী লিমা বেগমসহ মোট ১০৩ জন।
