বাজারে প্রচলিত ইউরিয়া-টিএসপির ৩০-৪০ শতাংশই নকল
বাজারে প্রচলিত ইউরিয়া ও টিএসপি সারের ৩০ থেকে ৪০ শতাংশই নকল বলে জানিয়েছেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় (খুবি) মাটি-পানি ও পরিবেশ ডিসিপ্লিনের চেয়ারম্যান প্রফেসর মো. সানাউল ইসলাম।
তিনি বলেন, বাজারে প্রচলিত ইউরিয়া ও টিএসপি সারের ৩০ থেকে ৪০ শতাংশই নকল। আগে আমরা এই নকলের মাত্রা ৬০ শতাংশ পর্যন্ত পেয়েছি। এখন নকলের মাত্রা কিছুটা কমেছে। তবে এই নিয়ে আমাদের কথা বলার উপায় নেই।
মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) দুপুরে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের খুলনা কার্যালয়ে আয়োজিত কৃষকের ধান জাত উদ্ভাবনে অভিজ্ঞতা বিনিময় সভায় তিনি সব কথা বলেন।
বাংলাদেশের মাটি হল বিশ্বের অন্যতম অনুর্বর মাটি উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'এই মাটির ম্যাচুরিটি এখনও পর্যাপ্ত পরিমাণে হয়নি। ফলে জাপান বা চীন ফসল রোপন করে যে পরিমাণ উৎপাদন করে, আমাদের পলি মাটিতে সেই তুলনায় অনেক কম উৎপাদন হয়। এমনকি ইন্ডিয়ার কয়েকটি রাজ্যের তুলয়ানও আমাদের ফসল উৎপাদনের হার কম। এরপরও আমাদের কৃষিজমি প্রতিনিয়ত কমছে। এই দেশের এই বিশাল জনসংখ্যার খাদ্য চাহিদা মেটাতে হলে, এখন থেকে আর এক টুকরোও কৃষি জমি ধ্বংস করা যাবে না।'
বাজারে প্রচলিত কীটনাশকের মান নিয়ে তিনি বলেন, 'ফলনশীল হাইব্রিড জাতের ফসলের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক কম থাকে। তাই সেখানে সার ও কীটনাশকের মাত্রা বেশি পরিমাণে ব্যবহার করতে হয়। তবে বাজারে এখন নকল সারের পাশাপাশি নকল কীটনাশকে সয়লাব। এতে ক্ষতির মাসুল গুণছেন কৃষকরা। '
অনুষ্ঠানে নিজের উদ্ভাবন করা উচ্চ ফলনশীল ধান আবিষ্কারের গল্প শোনান রাজশাহীর তানোর উপজেলার ব্রীডার কৃষক নূর মোহাম্মদ।
তিনি বলেন, 'এ পর্যন্ত আমার গবেষণায় ধানের কৌলিক সারির সংখ্যা দুই শতাধিক। বর্তমানে ৫টি জাতের ধান বিভিন্ন এলাকার চাষিরা তাদের নিজস্ব মাঠে চাষাবাদ করে সফলতা পাচ্ছেন। এসব জাতের মধ্যে রয়েছে- খরা সহিষ্ণু, সরু চাল, সুগদ্ধিযুক্ত, উচ্চ ফলনশীল, ঝড় বাতাসে হেলে না পড়া প্রভৃতি জাতের ধান।'
তিনি আরও বলেন, 'এছাড়াও খরাপীড়িত বরেন্দ্র অঞ্চলে কীভাবে কম পানিতে, কম সময়ে ধান কেটে ঘরে তোলা যায় এসব নানা বিষয় মাথায় রেখে পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া ফসলী জমি, নিজ ক্রয়কৃত জমি এবং বাৎসরিক চুক্তিতে নেওয়া ক্ষেতে গবেষণার কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। তবে সরকারের কাছে নতুন ধান জাত উদ্ভাবনের আবেদন ফি কমানোর দাবি জানাচ্ছি।'
অনুষ্ঠানে খুলনা অঞ্চলের আরও ১০ জন ব্রিডার কৃষক অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে আলোচনায় অংশ নেন।
এসময় তাদের উদ্ভাবিত ধানের জাতগুলোর গুণাগুণ, সম্ভাবনা, ধান উদ্ভাবনের বিজ্ঞানসম্মত বিভিন্ন ধাপ ও প্রক্রিয়া এবং স্বীকৃতির প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করেন।
একইসঙ্গে ধানের জাত উদ্ভাবনে ইমাসকুলেশান ও পলিনেশনে কৃষকদের ভূমিকা এবং কৃষি গবেষণায় কৃষকের মাঠের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগানোর প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন।
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা লোকজ-এর আয়োজনে এবং মিজরিও-এর সহযোগিতায় এই সভার আয়োজন করা হয়। লোকজ-এর সহসভাপতি কৃষিবিদ এম এম ফেরদৌস-এর সভাপতিত্ত্ব ও সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন লোকজ-এর নির্বাহী পরিচালক দেবপ্রসাদ সরকার।
এসময় অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন ব্রি সাতক্ষীরা প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো: সাজ্জাদুর রহমান, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় মাটি-পানি ও পরিবেশ ডিসিপ্লিনের সহযোগী অধ্যাপক মো: সাদিকুল আমিন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খুলনার উপপরিচালাক মো: নজরুল ইসলাম, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট-বারি'র সরেজমিন গবেষণা বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো: কামরুল ইসলাম, জেলা বীজ প্রত্যায়ণ অফিসার (অ.দা.) ড. রুবায়েত আরা, এসআরডিআই প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা অমরেন্দ্রনাথ বিশ্বাস, আঞ্চলিক বেতার কৃষি অফিসার কৃষিবিদ শারমীনা শামীমসহ অনেকে।
