সবাই সংঘাতের জন্য মুখিয়ে আছে, অল্প কয়েক মাসের মধ্যেই দেখতে পাবেন: তথ্য উপদেষ্টা
নির্বাচনকে সামনে রেখে সামনে দেশে সংঘাত তৈরি হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম।
আজ শনিবার সকালে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় বিএম ভবনে 'মাজার সংস্কৃতি: সহিংসতা, সংকট ও ভবিষ্যৎ ভাবনা' শীর্ষক জাতীয় সংলাপে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মাহফুজ আলম এ কথা বলেন। সংলাপের আয়োজন করে সুফি সম্প্রদায় নিয়ে গবেষণা করা প্ল্যাটফর্ম 'মাকাম'।
মাহফুজ আলম বলেন, 'দেশ এখন একটি ক্রিটিক্যাল মোমেন্টে [সংকটপূর্ণ সময়] আছে। নির্বাচনের আগ পর্যন্ত মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা থাকার কারণে অনেকেই সংঘাতে জড়াচ্ছেন না। কিন্তু সবাই সংঘাতের জন্য মুখিয়ে আছেন এবং আপনারা অবশ্যই এটা অল্প কয়েক মাসের মধ্যেই দেখতে পাবেন। আমি আশঙ্কা করছি যদি এইটার সাথে ধর্মীয় যে দৃষ্টিকোণ, এটা যদি যুক্ত হয়, তাহলে বাংলাদেশের পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।'
ষড়যন্ত্রের দিকে ইঙ্গিত করে তথ্য উপদেষ্টা জানান, 'দরবারগুলোর' সঙ্গে সংযোগ তৈরি করার চেষ্টা হচ্ছে বলে তিনি শুনতে পেয়েছেন। তিনি বলেন, 'আমি শুনতে পেয়েছি যে দরবারগুলোর সাথে সংযোগ তৈরি করার চেষ্টা হচ্ছে। "ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূস এসে তোমাদের মাজার ভেঙে দিচ্ছে, মসজিদ থেকে বের করে দিচ্ছে"—এই বলে তাদের বোঝানোর চেষ্টা চলছে। আসলে এই কোয়েশ্চেনটা [প্রশ্ন] অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ইস্যু না। এটা বাংলাদেশের যারা এখানে মুরুব্বি আছেন, তারা জানেন এটা গত ৫০ বছর ধরে হয়েছে। যখনই সরকার পরিবর্তন হয়, মসজিদের ইমাম বদল হয়ে যায়, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের গভর্নিং বডি বদল হয়ে যায়।'
মাহফুজ আলম আরও বলেন, 'রাষ্ট্রীয় ফ্যাসিবাদ চলে গেলেও সামাজিক জায়গায় ফ্যাসিবাদ রয়ে গেছে। দেশে ৯০ থেকে ৯২ শতাংশ মুসলমানের মধ্যে বিভিন্ন তরিকা আছে। তাদের মধ্যে কীভাবে সমন্বয় করা যায়, আজ পর্যন্ত রাজনৈতিক নেতারা এটা নিয়ে ভাবেননি।'
'বরং কেউ কওমিদের সাথে, কেউ সুন্নিদের সাথে, কেউ আবার সুন্নিদের মধ্যে অনেকগুলো ডিফারেন্স [পার্থক্য] আছে—বেরেলভী, সিরিকোটি, তারপর হচ্ছে চট্টগ্রামের যারা আছে, সিলেটের বিশেষভাবে... ফুলতলীর... তো এইভাবে হচ্ছে ভাগ করে নিয়েছেন এবং তারা আসলে এই ধর্মীয় যে রাজনীতি আছে বা ধর্মীয় যে প্রতিষ্ঠানগুলো আছে, এগুলোকে তাদের রাজনীতির হাতিয়ার করে নিয়েছেন', যোগ করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, গত ১৫ বছরে সুফি ভাবধারার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক ও ধর্মীয় আদর্শের বিরোধিতার জায়গা থেকে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়েছে। তাদের মধ্যে এমন একটি ধারণা কাজ করেছে যে, অন্য কোনো পক্ষ ক্ষমতায় এলে তাদের ওপর হামলা হতে পারে। এই ভয় থেকে আত্মরক্ষার তাগিদে তারা ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে থাকতে বাধ্য হয়েছেন।
আওয়ামী লীগ প্রসঙ্গে মাহফুজ আলম বলেন, 'রাজনৈতিক আদর্শের ভিত্তিতে আওয়ামী লীগ তার রাষ্ট্র পরিচালনা করে চার মূলনীতি তথা মুজিববাদের ভিত্তিতে। সেটা অবশ্যম্ভাবীভাবেই রাষ্ট্র থেকে বাঙালি মুসলমানকে আলাদা করার রাজনীতি।'
তিনি আরও উল্লেখ করেন, বাংলাদেশে বিভিন্ন মুসলিম দেশের দূতাবাসেরও ভিন্ন ভিন্ন আদর্শিক এজেন্ডা রয়েছে। 'কোনো দূতাবাস মাজারগুলোকে শক্তিশালী দেখতে চায়, আবার কোনোটি চায় এগুলো ধ্বংস হোক, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।'
সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে মাজার ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে হামলার ঘটনায় আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ক্ষতিগ্রস্তদের আহ্বান জানিয়েছেন মাহফুজ আলম। তিনি বলেন, 'যেখানে যেখানে হামলা হয়েছে আপনারা অবশ্যই মামলা করবেন এবং এটাতে আমার বলতে দ্বিধা নাই, এটা অবশ্যই আপনারা করবেন, আমি উৎসাহ দিচ্ছি।'
তিনি এই ধরনের হামলাকে একটি বিপজ্জনক সংস্কৃতি হিসেবে আখ্যা দিয়ে বলেন, 'কারণ এই কালচার [সংস্কৃতি] যদি আজকে টিকে যায়, কালকে আরেক ইসলাম আসবে, আরেক দলের ইসলাম আসবে, ওই ইসলাম আরেকটা মসজিদ ভেঙে ফেলবে। আজকে সুফিদের উপর হচ্ছে, কালকে কওমিদের উপর হবে। কওমিরা মনে করতেছে আজকে সুখে আছে, তারপরের দিন হবে আরেকটা দলের উপরে। ফলে এটা চলতে থাকবে। এটা অব্যাহত থাকতে পারে না বাংলাদেশের মতো রাষ্ট্রে।'
